ইমরুল হাসান বাবু,টাঙ্গাইলঃ সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই টাঙ্গাইলে অবৈধভাবে চলছে অর্ধেকের বেশি ইটভাটা। ১২ টি উপজেলার বেশিরভাগ ইটভাটায় নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ ইটভাটা গুলোকে আর্থিক জরিমানা করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব অবৈধ ইটভাটা। অবৈধ ইটভাটা গুলো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিধরা।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ১২ টি উপজেলায় ২৮৫ টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৭টি ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র আছে বাকি ১৫৮ টি ইটভাটা অবৈধভাবে চলে আসছে। এগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনটি ইটভাটাই বৈধ। দেলদুয়ারে ২টি ইট ভাটার মধ্যে একটি বৈধ আরেকটি অবৈধ, কালিহাতীতে ১৩টি ইটভাটার মধ্যে ৩টি বৈধ ১০টি অবৈধ, বাসাইলে ৯টি ইটভাটার মধ্যে ২টি বৈধ ৭টি অবৈধ, ভূঞাপুরে ৬টি ইটভাটার মধ্যে ১টি বৈধ ৫টি অবৈধ, সখিপুরে ৮টি ইটভাটার মধ্যে ৩টি বৈধ ৫টি অবৈধ, গোপালপুরে ৬টি ইটভাটার মধ্যে ৩টি বৈধ ৩টি অবৈধ, মধুপুরে ২০টি ইটভাটার মধ্যে ১টি বৈধ ১৯টি অবৈধ, নাগপুরে ২২টি ইটভাটার মধ্যে ১৩টি বৈধ ৯টি অবৈধ, ধনবাড়ীতে ২০টি ইটভাটার মধ্যে ২টি বৈধ ১৮টি অবৈধ, মির্জাপুরে ১০৮টি ইটভাটার মধ্যে ৭৬টি বৈধ ৩২টি অবৈধ ও ঘাটাইলে ৬৮ টি ইটভাটার মধ্যে ১৯টি বৈধ ৪৯টি অবৈধ।
ঘাটাইলের দেওলাবাড়ী,কালিহাতী,ভ’য়াপুর,মধুপুর,সখিপুরের বেশকয়েকটি ইটভাটায় দেখা যায়, কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়াচ্ছে। এছাড়াও ফসলি জমির উর্বর মাটি এবং পাহাড়ের টিলা কেটে ব্যবহার করছে। যা অবৈধ।
সবুজ পৃথিবীর সাধারণ সম্পাদক সহিদ মাহমুদ বলেন, ‘বনের আশে পাশের অবৈধ ইটভাটা গুলোর কারণে পশুপাখির প্রজননের সমস্যা হয়। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইটভাটা থাকলে শিক্ষার্থীরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়। অপর দিকে আবাসিক এলাকায় ইটভাটা থাকলে গাছের ফল ও ফুল হয় না। বায়ুদূষণের পাশাপাশি শিশু ও নারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। তাই অবৈধ ইটভাটা গুলো বন্ধের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আঞ্চলিক প্রধান গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘বায়ু দূষণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ঝুকি বেড়ে যায়। এ ছাড়াও অবৈধ ইটভাটার কালো ধোয়ায় পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদেও সাবেক ডিন অধ্যঅপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বৈধ ইটভাটার পক্ষে আর অবৈধ ইটভাটার বিপক্ষে। ইটভাটায় কয়লা পুড়ানোর নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষ কাঠ পুড়ানোর কারনে বন উজার হচ্ছে। এছাড়াও ফসলি জমির উপরের উর্বর মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করছে। রাষ্ট্র এসব অবৈধ কাজ করতে কোন ইটভাটা মালিককে অনুমতি দেয়নি। ফলে সরকারি আইন না মানায় ইটভাটা গুলো অবৈধ হয়।’
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ১৯ টি অবৈধ ইটভাটাকে ৮৭ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ ইটভাটা গুলো গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।’