১৮, এপ্রিল, ২০২৪, বৃহস্পতিবার
     

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের ৪০ কোটি টাকার দুর্নীতি

বিমা খাতে ৪০ কোটি ৮১ লাখ টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন।

নিজের ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৫টি ব্যাংকে ৩০টি অ্যাকাউন্ট পরিচালনার তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৮টি অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা হয়েছে।

এক্ষেত্রে আয় ও ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি নেই। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে উচ্চ আদালতে বৃহস্পতিবার দেওয়া প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. এজারুল হক আকন্দের দ্বৈত বেঞ্চে এই প্রতিবেদনে দেওয়া হয়। বিএফআইইউ সন্দেহ করছে-দুর্নীতি, ঘুস এবং অবৈধ শেয়ার লেনদেন হতে পারে।

এ বিষয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় তারা আরও তদন্ত করছে। ওই প্রতিবেদনের কপি যুগান্তরের হাতে এসেছে। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ড. মোশাররফ হোসেন।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেনের ঘুস, দুর্নীতি ও অবৈধ শেয়ার ব্যবসা নিয়ে একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুগান্তর। এসব প্রতিবেদনের সুনির্দিষ্টভাবে দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়।

সর্বশেষ রোববার আইডিআরের চেয়ারম্যানের অবৈধ শেয়ার ব্যবসা শিরোনামে যুগান্তরে প্রতিবেদন ছাপা হলে বিমা খাতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আর বৃহস্পতিবার আদালতে জমা দেওয়া বিএফআইইউর তথ্যে যুগান্তরের প্রতিবেদনের সত্যতা মিলেছে।

জানা গেছে, যুগান্তরসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হলে তা রিট আবেদনের মাধ্যমে আদালতের নজরে আনেন আবু সালেহ মোহাম্মদ আমিন মেহেদী নামের একজন বিনিয়োগকারী।

এরপর বিষয়টি তদন্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিএফআইইউকে নির্দেশ দেন আদালত। দীর্ঘ তদন্তের পর এই প্রতিবেদন দিল বিএফআইইউ। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তারা আদালতে সময়ের আবেদন করে। আদালত তাদের ১৬ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার আদালতে দেওয়া বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১১ থেকে ২০২১ সালের তথ্য তারা বিশ্লেষণ করেছে। এতে ৫টি ব্যাংকে ড. মোশাররফ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৩০টি অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়।

ব্যাংকগুলো হলো-ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক।

এরমধ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ড. মোশাররফ হোসেনের নিজের নামে ১০১১১০০০৪১১৯০ নম্বর চলতি হিসাবে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা জমা হয়।

নিজ নামে একই ব্যাংকের আরেকটি অ্যাকাউন্ট ১০১১০৩০১৩৪৫৯৮ নম্বরে ১ কোটি ০২ লাখ টাকা জমা হয়েছে। ড. মোশাররফের নিজ নামে প্রাইম ব্যাংকের ২১৪৮৪১৫০০৮০৬৫ নম্বর অ্যাকাউন্টে ৩০ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে।

তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়ার নামে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৪টি অ্যাকাউন্টে ৮০ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। একই ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্টে স্ত্রীর অনুকূলে মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অ্যান্ড কোম্পানি নামে ৫০ লাখ টাকার এফডিআরের তথ্য মিলেছে।

এছাড়াও মোশাররফ হোসেনের কোম্পানি গুলশান ভ্যালি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের নামে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ০০৫৩২০০০০৬৪ নম্বর অ্যাকাউন্টে ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে লাভস অ্যান্ড লাইভ কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১৩১০০০০২৭৭৭ নম্বর অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া যায়।

এছাড়াও লাভস অ্যান্ড লাইভের ১ কোটি ৮৭ লাখ, গুলশান ভ্যালি অ্যাগ্রোর আরও ৩টি অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ১৩ লাখ, ৪ কোটি ২৮ লাখ ও ৩ কোটি ৩৩ লাখ এবং কমার্স ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্টে কাশফুল ডেভেলপার্স লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ও ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার তথ্য পেয়েছে।

মোশাররফ হোসেন তার সম্পৃক্ত নামে মোট ৫টি কোম্পানির তথ্য পায় বিএফআইইউ। এগুলো হলো-লাভস অ্যান্ড লাইভ, গুলশান ভ্যালি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এবং কাশফুল ডেভেলপার্স বা (কেডিএল), কোয়ান্টাম প্লাস ফাউন্ডেশন, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অ্যান্ড কোম্পানি।

এরমধ্যে প্রথম তিনটি কোম্পানিতে কর্মচারীদের কল্যাণের জন্য ৬টি গ্রাচ্যুইটি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করেন ড. মোশাররফ। ফান্ড পরিচালনার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন।

সেখানে চেয়ারম্যান তিনি নিজে, সেক্রেটারি স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়া এবং আরও রয়েছেন তার শাশুড়ি লাভলি ইয়াসমিন। এই ৬টি ফান্ডে ৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকা জমার তথ্য মিলেছে।

যা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এখানে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা ইএফটি, ক্লিয়ারিং এবং পে অর্ডারের মাধ্যমে জমা হয়। অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়।

আবার শেয়ার লেনদেনের জন্য পে-অর্ডারের মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই অর্থ ড. মোশাররফ হোসেনের পেশা, আয়ের উৎস এবং হিসাব খোলার উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

এ সব লেনদেনের সঙ্গে ঘুস ও দুর্নীতির তথ্য থাকতে পারে। ফলে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর দুদকে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠায় বিএফআইইউ।

সেখানে মান্ডি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২’র ২৩(১)(ক) ধারায় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়ার পর ৬ মাস পর হলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না দুর্নীতি দমন কমিশন।-যুগান্তর

               

সর্বশেষ নিউজ