২৯, মার্চ, ২০২৪, শুক্রবার
     

তাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য: হুদা

নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করার ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি না করে আরও সময় নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে করার পরামর্শ দিয়েছেন ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন গঠিত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা।

শনিবার ঢাকায় এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে অংশ নিয়ে তিনি এ পরামর্শ দেন।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।

বর্তমান সিইসি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিদায় বেলায় নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদে পাসের তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

চলতি বছরের গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবিত আইনটি অনুমোদিত হয়। আগামীকাল (২৩ জানুয়ারি) এটি সংসদে উত্থাপন করবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সরকার প্রণীত খসড়া আইনে অপূর্ণতা রয়েছে উল্লেখ করে শামসুল হুদা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাজ ‘সন্তোষজনক নয়’ বলেও মন্তব্য করেন।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শামসুল হুদা বলেন- ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন সদিচ্ছা থাকলে ভালো নির্বাচন করতে পারত। তাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সুখকর না হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রস্তাবিত খসড়া আইনে মনে হচ্ছে অনেক অপূর্ণতা রয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, এটি শুধু সার্চ কমিটি গঠনের জন্য।’

আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি না করার পরামর্শ দিয়ে সাবেক এ সিইসি শামসুল হুদা বলেন, ‘এই আইনটি যাতে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটি ভালো আইনের জন্য প্রয়োজনে সময় নেওয়া যেতে পারে। তাড়াহুড়া করে ত্রুটিপূর্ণ আইন প্রণয়ন কারো জন্যই কল্যাণকর হবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অযোগ্যতার সুস্পষ্ট রূপরেখা থাকতে হবে। যাদের সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে বিবেচনায় না নেওয়া উচিত।’

ইসির কেউ দুর্নীতিতে জড়ালে তার বিচারের বিধানও আইনে রাখার সুপারিশ জানান সাবেক এই আমলা। তিনি বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনাররা কোনো দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে তাদের আইনানুগ বিচার হওয়া উচিত। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তাই কোনো বিশেষ পদধারী ব্যক্তির অপরাধের বিচারের জন্য ইনডেমনিটি থাকা উচিত নয়।’

সবার মতামত নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন তিনি। সাবেক এই সিইসি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বর্তমান সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব নেই, তাই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে ইসির নিয়োগের প্রস্তাবিত আইন নিয়ে ৬টি সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো- (১) ইসি গঠনে সার্চ কমিটিতে সংসদে সরকারি দল, বিরোধী দল ও সংসদ সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে তৃতীয় প্রতিনিধিত্বকারী দলের একজন করে সংসদ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত কর।

(২) নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে সম্পৃক্ত সুশীল সমাজের ব্যক্তি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ইসি গঠনে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা।

(৩) প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণের মেকানিজম আইনের অন্তর্ভুক্ত রাখা।

(৪) নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সার্চ কমিটি যেসব ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে, সেসব নাম ও তাদের জীবনবৃত্তান্ত ওবেসাইটে প্রকাশ করা। যাতে তাদের সম্পর্কে গুরুতর কোনো অভিযোগ থাকলে তা নাগরিকরা জানাতে পারে।

(৫) প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনাররা আর্থিক অনিয়ম, অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ততা এবং পক্ষপাতমূলক নির্বাচন করলে কী ধরনের শাস্তি প্রযোজ্য হবে- নির্বাচন কমিশন আইনে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা উল্লেখ করা।

(৬) প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের অনিয়ম বা অপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে কোনো রকম বিশেষ শিথিলতা বা ইনডেমনিটির বিধান না রাখা।

               

সর্বশেষ নিউজ