২৫, এপ্রিল, ২০২৪, বৃহস্পতিবার
     

‘থানার জিডিই প্রমাণ করে সিনহাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন প্রদীপ’

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার জিডিই প্রমাণ করে সিনহা হত্যাকাণ্ডে ওসি প্রদীপ জড়িত— এ মন্তব্য করেছেন সিনহা হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ফরিদুল আলম। মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় নবম দফায় প্রথম দিনের যুক্তিতর্ক শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর (অব.) মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় নবম দফায় প্রথম দিনের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। রোববার সকাল সোয়া ১০টা দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে আলোচিত এ মামলার দুপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে আদালতের কার্যক্রম।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের প্রথম দিন মামলায় ১৫ জন আসামির মধ্যে অভিযুক্ত এপিবিএন সদস্য শাহজাহান, জুবায়ের ও আবদুল্লাহ আল মামুন এবং পুলিশের তিন সোর্স স্থানীয় তিন বাসিন্দা মিলে ৬ জনের পক্ষে যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়েছে।

আদালতের কার্যক্রম শেষে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ফরিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, টেকনাফ থানার জিডি প্রমাণ করে সিনহা হত্যাকাণ্ডে ওসি প্রদীপ জড়িত।

তিনি বলেন, কোনো থানার ওসি কোনো অপারেশনে বের হওয়ার সময় থানায় যে জিডি করতে হয়, ঘটনার দিন করা ৬৭৭ নম্বর জিডিতে সিনহা হত্যাকাণ্ডে ওসি প্রদীপের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে। এতে বোঝা যায়, সিনহাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত। আমরা এসব যুক্তিতর্ক আদালতে উপস্থাপন করতে পেরেছি।

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা তিনজন সাক্ষী ও আসামিদের জেরা এবং সাক্ষ্যে ওসি প্রদীপের অপরাধ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে বুঝা যাচ্ছে প্রদীপ নির্দোষ।

এদিকে সিনহা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ওসি প্রদীপের পাওয়া সব রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও পদক বাতিলের ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম।

সিনহা হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে ২০৪ জনের অধিক নিরীহ লোককে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতে বিচারকের কাছে মৌখিক এ দাবি জানান তিনি।

পিপি আদালতকে বলেন, ওসি থাকাকালীন নরপিশাচের মতো আচরণ করেছেন প্রদীপ কুমার দাশ। তার অপরাধ কর্ম নিয়ে কেউ কথা বলতে পারেনি। ফরিদুল মোস্তফা খান নামে এক সাংবাদিক সংবাদ পরিবেশনের করায় তাকে চরম ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এটাই তার অপেশাদারি আচরণের জ্বলন্ত প্রমাণ। নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান আদালতে সাক্ষীও দিয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের অভিযোগও উঠেছে সাবেক ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে। এসব কারণে ওসি থাকাকালীন পাওয়া রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও পদক বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপসহ এ মামলার ১৫ আসামিকে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়।

আদালতে সূত্রে আরও জানা যায়, আলোচিত এ মামলায় ৮৩ জন সাক্ষী করা হলেও তার মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষীদের জেরাও সম্পন্ন করে আসামিপক্ষ। গত ১ ডিসেম্বর অষ্টম দফায় ৬৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হওয়ার পর কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আসামিদের বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত। একইসঙ্গে ৯ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

ঘটনার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশের নামে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।

               

সর্বশেষ নিউজ