২৫, এপ্রিল, ২০২৪, বৃহস্পতিবার
     

২০ দিনে ৩০ গুণ সংক্রমণ

বাংলাদেশে করোনায় সংক্রণের হার এখন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় সংক্রমণের হার শতকরা ২৬ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে। এটা এপর্যন্ত সর্বোচ্চ হার না হলেও সংক্রমণ বাড়ার হারের দিক থেকে প্রতিদিন নতুন রেকর্ড হচ্ছে।

২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৮৮ জন৷ মারা গেছেন চার জন। সংক্রমণের হার ২৬.৩৭ ভাগ।

এর আগের দিন বুধবার ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন নয় হাজার ৫০০ জন। মারা গেছেন ১২ জন।

গত ১০ দিনের চিত্র দেখলে ভয়াবহ পরিস্থিতি বোঝা যাবে৷ ১১ জানুয়ারি আক্রান্ত দুই হাজার ৪৫৮ জন, মারা গেছেন দুইজন৷ ১২ জানুয়ারি আক্রান্ত দুই হাজার ৯১৬, মৃত্যু চার৷ ১৩ জানুয়ারি আক্রান্ত তিন হাজার ৩৫৯, মৃত্যু ১২৷ ১৪ জানুয়ারি আক্রান্ত চার হাজার ৩৭৮, মৃত্যু ছয়৷ ১৫ জানুয়ারি আক্রান্ত তিন হাজার ৪৪৭, মৃত্যু সাত৷ ১৬ জানুয়ারি আক্রান্ত পাঁচ হাজার ২২২, মৃত্যু আট, ১৭ জানুয়ারি আক্রান্ত ছয় হাজার ৬৭৬, মৃত্যু ১০৷ ১৮ জানুয়ারি আক্রান্ত আট হাজার ৪০৭, মৃত্যু ১০। ১৯ জানুয়ারি আক্রান্ত ৯ হাজার ৫০০, মৃত্যু ১২। ২০ জানুয়ারি আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৮৮ হন, মারা গেছেন চার জন। এই বিবেচনায় ১০ দিনে সংক্রমণ বেড়েছে সাড়ে চার গুণ। আর যদি ১ জানুয়ারির বিবেচনা করা হয় তাহলে সংক্রমণ বড়েছে ৩০ গুণ। ১ জানুয়ারি করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে ৩৭০ জন। মারা গেছেন চার জন।

বাংলাদেশে এপর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জন৷ মারা গেছেন ২৮ হাজার ১৮০ জন। দেশের ১২টি এলাকাকে নতুন করে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ১২টি এলাকা হলো: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, লালমনিরহাট, গাজীপুর, পঞ্চগড় ও খাগড়াছড়ি। তবে এখন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ৮০ ভাগই ঢাকায়। ঢাকায় আক্রান্তদের ৬৯ ভাগ ওমিক্রনে আক্রান্ত বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। এর বাইরে ৩১টি জেলা মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে।

আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর জানান, এখন ঢাকা শহরে ৭০-৭৫ ভাগই ওমিক্রনের সংক্রমণ। আর ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি। ফলে দ্রুত ছাড়াচ্ছে৷ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে যাওয়ায় এখন ঢাকার বাইরে এবং গ্রামাঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, ‘আগামী দুই-তিন সপ্তাহ এটা বাড়তে থাকবে৷ এই হারে বাড়লে দিনে সংক্রমণ ৩০-৩৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। আর আগে দেখা যেত পিক-এ গিয়ে কমে যায় কিন্তু এবার সহসা পিক থেকে নামবে না। এবার ছাড়ানোর হার অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। হাসপাতালেও আগের পিকের সমান রোগীই যাবে। যাদের টিকা দেয়া আছে তারা আক্রান্ত হলেও বেশি জটিলতা হবেনা। কিন্তু যারা এখনো টিকা দেননি এবং বয়ষ্ক ও নানা শারীরিক জটিলতা আছে তাদের জন্য বিপদ। তাই টিকা নিতে হবে এবং মাস্ক পরতে হবে। মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।’

বিএসএমএমইউ-এর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম মনে করেন, হাসপাতালে নেয়া নয়, সংক্রমণ ঠেকানোই হলো মোকাবেলার উপায়৷ নয়তো কোনোভাবেই হাসপাতালে সবাইকে জায়গা দেয়া যাবে না। তাই তিনি মনে করেন,‘টিকা দেওয়ার গতি আরো বাড়াতে হবে৷ মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে আইন প্রয়োগ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি করতে হবে। আর ঘরে বাইরে সবখানেই সভা-সমাবেশ বন্ধ করতে হবে। কারণ বদ্ধ জায়গায় করোনা বেশি ছড়ায়। সরকার নির্দেশনা দিয়ে বসে থাকতে পারে না। এটা কার্যকর করাও তার দায়িত্ব।’

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের করোনা ঠেকাতে ১৫ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর হতে বলেছেন। তিনি বলেন, এটা বাস্তবায়নে তাদেরই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। টিকা দেয়ার গতিও বেড়েছে বলে তিনি জানান।

সরকারি হিসেবে এপর্যন্ত করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৯ কোটি ১৩ লাখ ২২ হাজার ৫৩৮ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার ২৭২ জন। বুস্টার ডোজ পেয়েছেন আট লাখ ৭৩ হাজার ৪৪১ জন। দেশে প্রথম বারের মত বৃহস্পতিবার জনসন এন্ড জনসনের তিন লাখ ৩৬ হাজার ডোজ টিকা এসেছে।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে

               

সর্বশেষ নিউজ