সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান কাল কিংবা পরশু শুরু হচ্ছে। সেই হিসাবে ঈদুল ফিতরের এখন এক মাস বাকি। কিন্তু করোনা মহামারি মোকাবিলায় আগামীকাল থেকে সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন শুরুর ঘোষণায় রোজা শুরুর আগেই শুরু হয়ে গেছে ঈদের কেনাকাটা। গত দুইদিনের মতো মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর মার্কেটগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়েছে। গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্রেতার ঢল নেমেছে। ঈদের এই আগাম কেনাকাটা দেখে বোঝার সাধ্যি নেই, দেশে ভয়াবহ করোনা মহামারি চলছে।
ক্রেতারা বলছেন, সামনে কঠোর লকডাউন। যে যেভাবে পারছে ঢাকা ছাড়ছে। যদিও ৭ দিনের লকডাউনের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ঈদের আগে এই লকডাউন খুলবে বলে মনে হয় না। তাই কিছু কিছু করে ঈদের কেনাটাকা সেরে রাখছেন তারা।
এদিন রাজধানীর মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ ক্রেতার উপস্থিতি অনেক বেশি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরের বাইরে বের হলেই সার্বক্ষণিক মুখে মাস্ক পরিধান, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা ও জনসমাবেশ এড়িয়ে চলাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বার বার বলা হলেও গুলিস্থান কিংবা নিউ মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে সে চিত্র দেখা যায়নি।
গুলিস্থানে নিজের জন্য ও এক ছেলের জন্য জামা কিনছেন শারিফুন নাহার শান্তা। ডেমরায় থাকেন। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আগামীকাল থেকে লকডাউন, পরিবারসহ আজ বাড়ি চলে যাবো। তাই বাচ্চার জন্য জামা কিনছি। আমার জন্যও একটা থ্রি পিচ কিনেছি।’
তিনি বলেন, ‘কাল থেকে শুরু হওয়া লকডাউন কবে শেষ হবে সেটা বলা মুশকিল। করোনা পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। মনে হয় না ঈদের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তাই ঈদের জন্য কিছু কেনাকাটা করে রাখছি।’
আরেক ক্রেতা নবিউল্লাহ বলেন, ‘মায়ের জন্য শাড়ি, বাবার জন্য পাঞ্জাবি আর আমার জন্য প্যান্ট-শার্ট কিনবো। আজই বাড়ি চলে যাবো। ঈদের আগে হয়তো আর ঢাকায় আসা হবে না। তাই ঈদ বাজার সেরে নিচ্ছি।’
ঢাকা ট্রেড সেন্টার (সাবেক বঙ্গ বাজার মার্কেটে) এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। মার্কেটের পাইকারি বিক্রিতা হাসান ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘মার্কেট খুলে দেয়ার পর থেকে মোটামুটি ভালোই বিক্রি হচ্ছে। গতকাল সোমবার বেশি বিক্রি হয়েছে, আজও ভালোই হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাহিরের দোকানদাররা আসতে না পারলেও কুরিয়ারে তাদের অর্ডারগুলো আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
ওই মার্কেটের এএস গার্মেন্টস দোকানের মালিক আলহাজ্জ আব্দুল আজিজ ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে, তবে লকডাউনের আগে যেরকম বিক্রি হয়েছে সেরকম না। আমরা পাইকারি বিক্রি করি। ঢাকার বাহির থেকে যে ক্রেতারা আসতো তারা আসছে না। কেউ কেউ কুরিয়ারে অর্ডার নিচ্ছে। সেটাও খুবই অল্প সংখ্যক।’
রাজধানীর নিউমার্কেট ওভারব্রিজের কাছেই ফুটপাতের দোকান থেকে ছোট বাচ্ছাদের জামা কিনছেন আব্দুর রহিম। তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আজ বাড়ি যাবো। ঈদের আগে লকডাউন খুলবে না মনে হয়। তাই দুই ভাতিজার জন্য জামা কিনছি। ঈদ তো, তাই ওদের নতুন জামা কিনে দিতে হয়। কিন্তু ঈদের আগে মার্কেট খুলে কিনা, সেই অনিশ্চয়তা থেকেই আগেভাগে কিনে নিচ্ছি।’
এসব মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতাদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই। ক্রেতাদের অবস্থা তথৈবচ। কারও কারও মুখে মাস্ক থাকলেও তা সঠিকভাবে পরিধান করা হয়নি। থুতনির নিচে বা কানের পাশে ঝুলে আছে। হৈচৈ চিৎকার চেঁচামেচিতে সরব মার্কেট দেখে বিন্দুমাত্র বোঝার উপায় নেই, দেশে করোনা ভাইরাস নামক কোনও মহামারি চলছে।
সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় ৮৩ জনের মৃত্যু হলেও এর কোনও প্রভাব নেই মার্কেটগুলোতে। অসংখ্য ক্রেতা-বিক্রেতা যারা স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাদের সচেতন বা বাধ্য করতে কোনও সরকারি সংস্থা কিংবা বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানের তৎপরতাও চোখে পড়েনি।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এখন বাজার, মার্কেট এবং গণপরিবহন। দেশে এখন পর্যন্ত যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বড় অংশই হয় বাজার কিংবা মার্কেট গেছেন, নয়তো গণপরিবহনে চলাচল করেছেন।’
এদিকে গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ৯ দিনের লকডাউনের মতো বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া লকডাউন ‘গা ছাড়া’ হবে না বলে জানিয়েছেন সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল মন্ত্রী।
তারা বলেছেন, আগামীকাল থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে পারবে না। যারা একান্ত জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হবেন তাদের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ‘মুভমেন্ট পাস’ ইস্যু করা হবে।