এবার ভিন্নভাবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করবে মালয়েশিয়া। সবুজ জ্বালানি ব্যবহার করে রোববার প্রথমবারের মতো সয়াবিন তেল দিয়ে তৈরি জৈব জ্বালানি ব্যবহার করে বিমান উড়াবে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স।
রোববার (বিশ্ব পরিবেশ দিবস) স্থানীয় সময় বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে তাদের প্রথম ফ্লাইটটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে কুয়ালালামপুর ছাড়বে। গত সোমবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিমান সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রায় ৩৮ শতাংশ টেকসই জ্বালানি ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য বর্জ্য ও রান্নার তেলের মতো কাঁচামাল থেকে তৈরি জ্বালানি দিয়ে আকাশে উড়বে বোয়িং ৭৩৭-৮০০।
সিঙ্গাপুর থেকে সেটি আবার কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে রওনা দেবে স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে। সবুজ জ্বালানি ব্যবহারকে ঐতিহাসিক করতে যাত্রী আকর্ষণে বুকিংয়ের ওপর ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করেছে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।
মালয়েশিয়ার বিমান সংস্থাটি জানিয়েছে, টেকসই আগামীকালের জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে আরও কার্যকর সবুজ জ্বালানির উৎস খুঁজে নিয়মিত এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করবে তারা। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট বলছে, ইকোনমি ক্লাসের টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।
কুয়ালালামপুর থেকে সিঙ্গাপুর যেতে বিজনেস ক্লাস প্রতি টিকিটের মূল্য এক হাজার ৯২২ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (৫৩ হাজার ১২৯ টাকা)। আর ফিরতি ফ্লাইটের জন্য লাগবে দুই হাজার ৫ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত।
টেকসই বিমান জ্বালানি (এসএএফ) হল বর্জ্য তেল এবং চর্বি, পৌরসভার বর্জ্য, অ-খাদ্য ফসলসহ বিভিন্ন উৎস থেকে তৈরি এক ধরনের জ্বালানি। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) বলেছে, একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে এ জ্বালানি উৎপাদন করা যায়-যা সরাসরি বাতাস থেকে কার্বন শোষণ করে।
এ জৈব জ্বালানি ব্যবহারে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ। সবুজ পদ্ধতিতে ফ্লাইট চালানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রযুক্তি যেমন হাইড্রোজেন এবং ব্যাটারি পাওয়ারের জন্য দীর্ঘ রানওয়ে প্রয়োজন। ফ্লাইটগ্লোবালের এশিয়া ব্যবস্থাপনা সম্পাদক গ্রেগ ওয়াল্ড্রন বলেন, ‘সাধারণত, যে এয়ারলাইনগুলো টেকসই বিমান জ্বালানি ব্যবহার করছে তারা একটি মিশ্রণ ব্যবহার করবে (প্রচলিত জ্বালানির সঙ্গে)। নির্দিষ্ট কিছু ফ্লাইট সেক্টরে টেকসই জ্বালানির একটি নির্দিষ্ট অনুপাত ব্যবহার করা হয়।
তারাই দেশের প্রথম এয়ারলাইন-যারা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করেছে। এর আগে এই জ্বালানি ব্যবহার করে উদ্বোধনী ফ্লাইটটি উড়ে এসেছিল ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর। সে সময় নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর পৌঁছেছিল এমএইচ৭৯৭৯ ফ্লাইটটি। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডাচ বিমান সংস্থা কেএলএম রান্নায় ব্যবহৃত তেল থেকে উৎপন্ন জৈব জ্বালানি ব্যবহার করে ২০০ টিরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছিল। কেএলএম-এর মুখপাত্র গেডিস রাইডার বলেন, বিমানগুলো ৫০ ভাগ সাধারণ কেরোসিন ও বাকি ৫০ ভাগ রান্নায় ব্যবহৃত তেল থেকে উৎপাদন করা জৈব জ্বালানি ব্যবহার করবে। নতুন ধরনের এই জ্বালানি ব্যবহারের জন্য বিমানের অবকাঠামোগত বা যান্ত্রিক কোনো পরিবর্তন আনতে হবে না।
সে সময় মার্কিন কোম্পানি ডায়নামিক অয়েলস এই নতুন ধরনের জৈব জ্বালানি উৎপাদন করত। এতে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হতো রান্নায় ব্যবহৃত তেল।
রান্নার তেল জৈব জ্বালানিতে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভারতও। দেরাদুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব পেট্রোলিয়ামের দাবি, এ ধরনের জৈব জ্বালানি দিয়ে গাড়ি এমনকি বিমানও চালানো যাবে।