১৫, নভেম্বর, ২০২৪, শুক্রবার
     

ইউক্রেন যুদ্ধের শততম দিনে রাশিয়ার অর্জন কতটুকু?

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ১০০তম দিন পার হয়েছে। এখন হিসাব-নিকাশ চলছে ১০০ দিন পর কোথায় দাঁড়িয়ে আছে ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে, ইউক্রেনকে তাদের ২০ ভাগ অঞ্চল মূল্য হিসেবে দিতে হয়েছে।

এই যুদ্ধ এখন ঠিক কি অবস্থায় আছে – তার অনেকখানি ধারণা পাওয়া যেতে পারে নিচের তিনটি উক্তি থেকে।

এক. ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলছেন, তার দেশের ২০ শতাংশ ভূখণ্ড এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।

দুই. যুক্তরাজ্যের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ তাদের সবশেষ মূল্যায়নে বলছে, রাশিয়া এখন পূর্ব দনবাসে কৌশলগত সাফল্য পাচ্ছে, যদিও এর জন্য তাকে প্রচুর মূল্য দিতে হচ্ছে।

তিন. ন্যাটোর প্রধান ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ অন্যদিকে বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন ‘ওয়ার অব অ্যাট্রিশন’ বা ‘দাঁতে দাঁত চেপে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া’-র অবস্থায় উপনীত হয়েছে এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে হবে।

শুক্রবার ইউক্রেন হামলার শততম দিনের বিবৃতিতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্র পেসকভ এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, বিশেষ সামরিক অভিযান’র লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবেই।

বললেন, ‘মস্কোপন্থি দুই অঞ্চল দনবাস ও লুহানস্কের বাসিন্দাদের কিয়েভ বাহিনীর নির্যাতন থেকে রক্ষা করতেই ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া।

নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ইতোমধ্যেই পূরণ হয়েছে। চলমান অভিযানের প্রধান লক্ষ্যগুলোর একটি হলো-দনবাসের দোনেস্ক পিপলস রিপাবলিক এবং লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ রুশ আক্রমণের ১০০তম দিনে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও।

বলেছেন, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী এখানে আছে, আমাদের দেশের জনগণ এখানে আছেন। আমরা ইতোমধ্যে ১০০ দিন ধরে ইউক্রেনকে রক্ষা করে আসছি।

জয় আমাদেরই হবে। গৌরব ইউক্রেনের। ভিডিওতে জেলেনস্কি ও তার দল দেশটির প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সামনে দাঁড়ানো ছিলেন। এ সময় ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের মূল্যায়নে বলছে, দনবাস দখলের যুদ্ধে রাশিয়া এখন নিয়ন্ত্রক অবস্থানে আছে বলেই মনে হচ্ছে, তারা লুহানস্ক অঞ্চলের ৯০ শতাংশ ভূখণ্ডের দখল নিয়ে নিয়েছে, এবং আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই হয়তো তারা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে।

একই সঙ্গে তারা বলছে, এই যুদ্ধের জন্য সৈন্য সমাবেশ করতে গিয়ে তাদের বিপুল মূল্যও দিতে হয়েছে।।

ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া এখন দনবাসে কৌশলগত সাফল্য অর্জন করছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো বলছে যে, যুদ্ধ শুরুর সময় রাশিয়ার যে মূল উদ্দেশ্যগুলো ছিল- সেগুলোর একটিও আসলে অর্জিত হয়নি।

তারা বলছে মস্কো চেয়েছিল, শুরুতেই তারা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং ইউক্রেনীয় সরকারের কেন্দ্রগুলো দখল করে নেবে।

কিন্তু ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধ তাদের সেই প্রয়াস ব্যর্থ করে দেয়।

যুদ্ধের ১০০ দিনের মাথায় এখনকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্র তৈরি করেছেন বিবিসির জেমস ল্যানডেল।

সব যুদ্ধেই উত্থান-পতন থাকে, আর এর গতিপথও প্রায় কখনোই সরল হয় না প্রশ্ন হলো, রাশিয়া যদি এ যুদ্ধে জয়লাভ করে – তাহলে কেমন হতে পারে সেই বিজয়?

পশ্চিমা কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, রাশিয়া যদিও ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিতে তেমন সুবিধে করতে পারেনি – কিন্তু রাজধানী কিয়েভ দখল করা এবং ইউক্রেনের অধিকাংশ অঞ্চলকে পদানত করার পরিকল্পনা তারা এখনও করে যাচ্ছে। সেই চূড়ান্ত লক্ষ্য রাশিয়া এখনও ত্যাগ করেনি।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সেই রেজনিকভ বলছেন যে রাশিয়া এখন প্রলম্বিত যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে, এবং ইউক্রেনের দক্ষিণ দিকে গড়ে তুলছে কয়েক স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

বিবিসির বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনও হতে পারে যে রাশিয়া হয়তো দনবাসে তাদের বর্তমান সাফল্যকে কাজে লাগাবে, এবং সেখানে নিজের অবস্থানকে সংহত করার পর বহু সৈন্যকে অন্য জায়গায় যুদ্ধ করতে পাঠাতে পারবে।

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের অনুমান, তখন হয়তো আবার কিয়েভ দখলের চেষ্টা করতে পারে রাশিয়া।

এমনও হতে পারে যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো সবাইকে অবাক করে দিয়ে একতরফাভাবে একটা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে দিতে পারেন।

অন্যদিকে ন্যাটো জোটের প্রধান ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ পশ্চিমা দেশগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য তৈরি হবার কথা বলছেন।

এর মানে- যুদ্ধে কোন পক্ষই হয়তো এগুতে পারছে না – কিন্তু পিছিয়েও যাচ্ছে না, এক জায়গায় থেকেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, মাসের পর মাস বা এমনকি বছরের পর বছর ধরে।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো মনে করতে পারেন – তিনি যদি এই ‘কৌশলগত ধৈর্য’ দেখাতে পারেন তাহলে পশ্চিমা দেশগুলো একসময় এই ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তাদের মনোযোগ চলে যাবে অর্থনৈতিক সংকটের দিকে বা চীনের হুমকির দিকে।

তবে, পশ্চিমা দেশগুলো যদি দৃঢ়সংকল্প দেখিয়ে যেতে থাকে, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করতেই থাকে – তাহলে এ যুদ্ধ একটা ‘চিরকালের যুদ্ধে’ পরিণত হতে পারে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

               

সর্বশেষ নিউজ