ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, গতবারের তুলনায় এবার বাংলাদেশে ভালো নির্বাচন প্রত্যাশা করে জাপান। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে আশা জাপানের।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব)।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী বছরের শেষে নির্বাচন হওয়ার কথা। এ নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যম প্রতিদিন খবর প্রচার করছে। নির্বাচনের ব্যাপারে আমি সরকারের দিক থেকে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি লক্ষ করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নতুন আইন প্রণয়ন ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মতো বিষয়। তাই আমি আশা করব, গতবারের তুলনায় এবার ভালো, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার পদক্ষেপ নেবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আপনারা হয়তো শুনে অবাক হতে পারেন, ঢাকায় জাপান দূতাবাস ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরপরই উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি প্রচার করেছিল। সেখানে মূল উদ্বেগের প্রসঙ্গ ছিল নির্বাচনকালীন সহিংসতা। প্রত্যেক নাগরিক যাতে অবাধে ভোটাধিকারের চর্চা করতে পারে, এটি জরুরি। এ পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
ইতো নাওকি বলেন, ‘জাপান যে বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে ভালো ও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়, তা সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বলেছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আমাদের প্রত্যাশার বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে অব্যাহতভাবে তুলে ধরতে থাকব।’
অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের অবাধে দায়িত্ব পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ভালো নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারাটা জরুরি। জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি গণমাধ্যমে কীভাবে প্রতিফলিত হতে পারে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট আইনের প্রসঙ্গ টেনে ইতো নাওকি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ঘিরে এই মুহূর্তে সাংবাদিকদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। তাই এখন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধে কাজ করার সুযোগ থাকতে হবে।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর আগ্রহের বিষয়টি বুঝতে জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সফরে এসেছিল। প্রতিষ্ঠানটি রাডারসহ অন্যান্য সামগ্রী বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে চায়।
ইতো নাওকির কাছে জানতে চাওয়া হয়, জাপানের কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিরক্ষাসামগ্রী বিক্রির বিষয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশে এসেছিল। জবাবে তিনি বলেন, মিতসুবিশি ইলেক্ট্রনিকসের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন।
ডিকাব টকে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, সম্প্রতি জাপান প্রতিরক্ষাসামগ্রী রপ্তানির ক্ষেত্রে আইন শিথিল করেছে। ফলে জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো এশিয়ার কিছু দেশে প্রতিরক্ষা পণ্য রপ্তানি করছে। জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ সফর করেছে।প্রতিরক্ষা খাতকে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রে হিসেবে উল্লেখ করেন ইতো নাওকি।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রতিরক্ষাসামগ্রী সংগ্রহের উৎস বহুমুখীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই এই খাত নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র হতে পারে। দুপক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেন তিনি।
ইতো নাইকি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ আন্তর্জাতিক পরিসরে বিনিয়োগ আসার জন্য একটি আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এ সেতুর ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আরও আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মতো বাংলাদেশ এত বড় অবকাঠামো নির্মাণে যে সাহস দেখিয়েছে তার জন্য জাপানের বিনিয়োগকারীদের ৬০ শতাংশ এ দেশে বিনিয়োগ করতে চায়।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি। আশা করি, অচিরেই বাংলাদেশের জনপ্রতি আয় ৩ হাজার ডলার পেরিয়ে যাবে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ইপিজেড জাপানের বিনিয়োগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা-টোকিও সরাসরি ফ্লাইট অচিরেই চালু হওয়ার আশা ব্যক্ত করে ইতো নাইকি বলেন, এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও বাড়বে। জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ একটি অন্যতম ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কারণ এশিয়ার অন্যতম বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসাবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ইতো নাওকি বলেন, ইন্দো প্যাসিফিক ইকোনমিক ফোরাম যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ। বাংলাদেশ এ ফোরামে যোগ দেবে কি না, সেটা বাংলাদেশকে ভালোভাবে অনুধাবন করতে হবে। তবে আমরা চাই, একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো প্যাসিফিক গড়তে। যেন সব দেশ লাভবান হতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জাপান। এর মধ্যে মেট্রোরেল একটি। ডিসেম্বরে এর প্রথম ফেস চালু হবে। মেট্রোরেল চালু হলে এ শহরের মানুষ স্বস্তিতে চলাচল করতে পারবে বলে আশা করি।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপান রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চায়। সংখ্যায় কম হলেও দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করাটা জরুরি বলেও জানান তিনি।
ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈন উদ্দীন।