১৬, নভেম্বর, ২০২৪, শনিবার
     

আগেভাগেই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

ঈদের এখনো চার দিন বাকি। কর্মস্থলের ছুটি হয়নি। তারপরও রাস্তাঘাটে ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগেই বাড়ির পথে ছুটছেন অনেকে। বুধবার রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথগুলোতে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। যার প্রভাব পড়ে পুরো রাজধানীতে। তীব্র যানজট দেখা দেয় সড়কগুলোতে। আজ শেষ অফিস। আর আজ থেকেই মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বুধবার মোটরসাইকেল আরোহীদের বাড়তি চাপ ছিল সড়ক-মহাসড়কে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ঘরমুখী মানুষের চাপ মূলত শুরু হবে শুক্রবার থেকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর কারণে এবার ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কম হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের মাওয়া ও পাটুরিয়ায় অন্তহীন যে ভোগান্তি পোহাতে হতো তা এবার হয়তো হবে না। কারণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ যাত্রী সড়কপথে পদ্মা সেতু হয়ে ছুটে চলায় ঘাটের বিড়ম্বনা এড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়া নৌযানেও তুলনামূলক ভিড় কম হওয়ায় সদরঘাট থেকে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে রওয়ানা দিতে পারবে।

বুধবার কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। ট্রেন স্টেশনে থামতেই হুড়মুড়িয়ে উঠে যায় অগ্রিম টিকিটকাটা যাত্রীরা। সঙ্গে বিনা টিকিটের যাত্রীদের চাপও ছিল।

সরেজমিন দেখা যায়, সকালে মানুষ রাজধানী ছাড়তে শুরু করে। সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রী ভিড় প্রচণ্ড ছিল। যাত্রী ও যানবাহনের চাপে রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে। গাজীপুর ও সাভারের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকেই শত শত যাত্রীকে জড়ো হতে দেখা যায়। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলগামী পরিবহনগুলো নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ছেড়ে যায়। তবে যাত্রী সংকটে কিছু রুটের গাড়ি নির্ধারিত সময়ের পরও ছাড়তে দেখা গেছে। এদিকে থেমে থেমে বৃষ্টি ও রাজধানী থেকে বের হওয়ার সময় যানজটের কারণে ঘরমুখো মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণির অবস্থা ছিল বেশি খারাপ। এই দুটি সড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করলে যানবাহনগুলোকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

একজন যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সকাল ৮টায় গাড়িতে উঠেছি। এখন একটা বাজে। পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকা পার হতে পারিনি। দুর্ভোগ এড়াতে আগেভাগে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ সফল হলো না। সেই দুর্ভোগেই পড়তে হলো।’

আরেক যাত্রী বলেন, মহাখালী টার্মিনাল থেকে একযোগে অনেক গাড়ি ছাড়ার কারণে বিমানবন্দর রুটে যানজট হয়।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রা এবার অনেকটাই স্বস্তির হবে-এই ধারণা ছিল প্রায় সবার। বাস্তবেও তাই দেখা যাচ্ছে। বুধবার সদরঘাটে যাত্রীচাপ তেমন ছিল না। বেশিরভাগ যাত্রী নির্বিঘ্নে সড়কপথে রওয়ানা হয়েছেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে বিলাসবহুল নতুন নতুন বাস নেমেছে। ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার চিত্রও নেই।

এছাড়া পদ্মা সেতু উত্তর থানা মোড় থেকেও বাসে উঠতে দেখা গেছে যাত্রীদের। তবে ঈদ সামনে রেখে বাড়তি ভাড়া আদায়ের পুরোনো অভিযোগ এবারও আছে। পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় ট্রাক কিংবা পিকআপে মোটরসাইকেল পার করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, ‘রাস্তায় পরিবহণ সংকট। বাড়তি ভাড়া। নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে যাব, সেখানেও বাধা। ফেরিতে মোটরসাইকেল তুলতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি এমন যে-দুর্ঘটনা শুধু মোটরসাইকেল চালকরাই ঘটায়।’ বাড়তি ভাড়া ও পরিবহণ সংকটের কারণে ট্রাকযোগে বৃষ্টিতে ভিজেও শত শত মানুষকে পদ্মা সেতু পার হতে দেখা গেছে। তাদের একজন বলেছেন, ট্রাকে ভাড়াও কম, আবার সেতু দেখাও সহজ। তাই ট্রাকেই যাচ্ছি।

আবার অনেকেই পিকআপে মোটরসাইকেল পার করেও খুশি। তাদের বক্তব্য-‘এটাও ভালো। আগে মাওয়া ঘাটে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এবার অন্তত সেই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা মিলেছে।’

অপরদিকে এদিন ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে ছিল যানবাহনের চাপ। সকাল থেকেই পাটুরিয়ায় প্রতিটি ফেরি যানবাহন ও যাত্রী বোঝাই হয়ে ছেড়েছে। মোটরসাইকেলের চাপও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ভোগান্তি ছাড়া পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ পাড়ি দিতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। একজন যাত্রী জানান, আগের তুলনায় এই ঘাট অনেক ফ্রি। এ রকম থাকলে এবার ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে। আগে ৩-৪ কিলোমিটার যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এবার এখনো তা দেখা যায়নি। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে।

এদিকে নৌপথে যাত্রী পরিবহণ নিরাপদ ও বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে ৮টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করেছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। ঈদের আগে তিন দিন ও পরে তিন দিন এসব টিম সদরঘাট, মাওয়া, পাটুরিয়ায় নৌরুটে দায়িত্ব পালন করবে।

বুধবার ট্রেনের অগ্রিম টিকিটধারীদের দ্বিতীয় দিনের যাত্রা ছিল। এদিন কমলাপুর থেকে ৩৯ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন ছেড়ে গেছে। মেইল, কমিউটার এবং আন্তঃনগর ট্রেন মিলে এদিন টিকিটধারী যাত্রী ভ্রমণ করেছে প্রায় ৫৫ হাজার। এছাড়া প্রায় দেড়গুণ যাত্রী বিনা টিকিটে ভ্রমণ করেছে। প্রতিটি বগিতেই অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। ট্রেনে দায়িত্বে থাকা একাধিক টিটিই জানান, কমলাপুর থেকে ছেড়ে বিমানবন্দর পার হলেই বিনা টিকিটের যাত্রীরা এসি এবং কেবিনে ঢুকে পড়েন।

রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার জানান, বিনা টিকিটে যারা যেতে চায় তাদের ঠেকাতে দায়িত্ব পালন করছেন সংশ্লিষ্টরা। ট্রেন ছাড়ার পর অনেকে চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়ছেন। ট্রেন স্টেশনে থামতেই হুড়মুড় করে উঠে পড়ছেন যাত্রীরা। কিছু ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে স্বীকার করে তিনি বলেন, বুধবার ২০ মিনিট থেকে ঘণ্টাখানেক বিলম্বে চলেছে ৭টি ট্রেন। এটাকে আমরা বিলম্ব বলছিল না। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কিছুটা ধীরগতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। কারণ ঈদের সময় প্রতিটা ট্রেনেই অতিরিক্ত যাত্রী থাকে।

               

সর্বশেষ নিউজ