ঈদুল আজহা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য উৎসবের দিন, আনন্দের দিন। একইসঙ্গে ত্যাগ ও উৎসর্গের দিন। বিশ্বের সব মুসলমানদের সঙ্গে ঈদুল আজহার বৃহৎ ধর্মীয় এই উৎসবে মিলিত হয়েছে বাংলাদেশের কোটি প্রাণ।
ধনী-গরিব, প্রতাপশালী-দুর্বল সব শ্রেণিপেশার মানুষ আজ ঈদগাহে এককাতারে মিলিত হচ্ছেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদের জামাত আদায় করে গুনাহ মাফের জন্য মহান রবের কাছে দোয়া করবেন। কষ্টের টাকায় কেনা পশু কুরবানি কবুল হওয়ার জন্য ফরিয়াদ করবেন। নামাজ শেষে একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করে নিজ নিজ আবাসস্থলে ফিরবেন।
আজকের দিনের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে পশু কুরবানি। সামর্থবানরা গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও উট আল্লাহর নামে কুরবানি করবেন। আর কুরবানির মাংস আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মাঝে বণ্টন করবেন। ইসলামের মহান শিক্ষা—‘প্রতিবেশিকে অভূক্ত রেখে নিজের উদরপূর্তি করো না’। এই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে যারা কুরবানি দেয়নি তাদের বাসায় মাংস পাঠিয়ে সহমর্মিতার প্রকাশ ঘটাবেন।
তিনদিন পর্যন্ত পশু কুরবানি করা যাবে। তবে প্রথম দিনেই বেশিরভাগ মানুষ কুরবানি করে ফেলে।
গত দুই বছর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মানুষ স্বস্তিতে উদযাপন করতে পারেনি করোনা মহামারির কারণে। এবারো ঈদুল আজহার প্রাক্কালে দেশে করোনা আবার বাড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার—দুটিই বাড়ছে। এমন এক পরিস্থিতিতেও ঈদ উৎসব ঘিরে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই ঘরে ঘরে। এই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলিম ভাইবোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবার ঈদ উদযাপনের আবহ আগেই শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আনন্দ একটু বেশিই। কারণ পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার রাজধানী ও এর আশপাশে কর্মরতদের বাড়ি যেতে আগের মতো ভোগান্তি ছিল না।
তবে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের কাছে এবারের ঈদ অনেকটা নিরানন্দের মধ্য দিয়েই উদযাপিত হবে। প্রায় পৌনে ১ কোটি মানুষ বন্যায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের ঘর, গোলার ধান বানের পানিতে ভেসে গেছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল আটটায়। এখানে একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ছাতা ও মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে না আসতে বলা হয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল সাতটা থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত মোট পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া দেশের বড় বড় ঈদগাহ ময়দানের মধ্যে দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ঈদ জামাত, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদ জামাতের সকাল আটটায়।
এ ছাড়া সারা দেশের পাড়া–মহল্লায় মসজিদ, ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই ঈদে পশু কুরবানিই প্রধান ইবাদত। ঈদের নামাজ আদায় করে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন কুরবানির জন্য। তবে ঢাকাবাসী বর্জ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ঈদের দ্বিতীয় দিনের মধ্যে কুরবানি শেষ করার আহ্বান জানানো হয়েছে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে।-যুগান্তর