করোনাভাইরাস ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জালানির দাম বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খুব খারাপ সময়, খুব ঝুঁকিপূর্ণ সময়। এ সময়ে ঐক্যের বিকল্প নেই।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের কর্মীদের হুঁশিয়ার থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা আজ কত বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন, সারা বিশ্বে যুদ্ধ, সেই প্রতিক্রিয়ায় আজ জ্বালানির দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এই ইনফ্লেশন, অবাক লাগে, শ্রীলংকার কথা বাদ দিলাম, আজ ইংল্যান্ড-আমেরিকাতে ৯১ দশমিক ১। সর্বত্রই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশকে এই কঠিন সময়ে অগ্রসর হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এখন সারা রাত জেগে থাকেন, বাংলাদেশের মানুষ যাতে ঘুমাতে পারে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি তিনি সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত বন্যা, করোনাভাইরাস, যুদ্ধের প্রভাব— এসব তিনি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। শক্ত করে ধরে আছেন। তাকে শক্তি দিতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থেকে শক্তি দিতে হবে আওয়ামী লীগকে। কথায় কথায় নিজেরা অন্তঃকলহে জড়াবেন না। খুব খারাপ সময়, খুব ঝুঁকিপূর্ণ সময়, এ সময়ে ঐক্যের বিকল্প নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ কিছু করতে পারবে না।
শেখ হাসিনার কারাবন্দির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজ এ দিন শুধু শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বন্দি দিবস । এ দিন শেখ হাসিনাকে বন্দি করে আমাদের বিকাশমান গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, রাজনীতির জন্য অনেকেই জেলে গেছেন, আমাদের নেত্রী বন্দি হয়েছেন, ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। কিন্তু প্রথম বন্দি হন শেখ হাসিনা। তারা এসে বিরোধী দলকেই প্রথম বন্দি করে। বিরোধী দলের নেতা প্রথম বন্দি হন, সরকারি দলের নেতা তখনও বন্দি হননি। কী দুর্ব্যবহার ড. ওয়াজেদের সঙ্গে, কী দুর্ব্যবহার ঢাকা কোর্টের সামনে! বঙ্গবন্ধুকন্যাকে সামান্যতম শ্রদ্ধা তারা দেখায়নি।
রাজনৈতিক নেতারা সেনাশাসিত সরকারের সঙ্গে আঁতাত না করলে ওই সরকার বেশিদিন থাকতো না বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নেত্রীর কারাবন্দি দিবসে একত্রিত হয়েছেন। সেদিন যদি দেশের রাজনীতিকদের একটা অংশ ওই জরুরি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা না করত, তাহলে বাংলাদেশের ওয়ান ইলেভেন টিকতে পারত না। এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হতো। অনেক রাজনীতিক সেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে রাজনীতিকে মাইনাস ফর্মুলায় নিয়ে গেছে। আজকে আমি বলব, আমাদের শত্রু-মিত্র চিনতে হবে। চলার পথে শত্রু-মিত্র চিনতে হবে। একবার যে বিশ্বাসঘাতক, বারে বারে সে বিশ্বাসঘাতক।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি বলে… আমাদের পতনের নাকি সাইরেন বাজে। কোথা থেকে শুনলেন সাইরেনটা? কোথায় শুনলেন? রাস্তায় যখন গাড়ি চলে ওই সাইরেন শুনেছেন? কী সাইরেন শুনেছেন? শুনবেন, শুনতে পাবেন আপনাদের বিদায়ের ঘণ্টার সাইরেন। নেতিবাচক রাজনীতি আপনাদের অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে, আপনাদেরই বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে।
রাজনীতির মাঠে খেলতে আসার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে… খেলা হবে, রাজনীতির মাঠে খেলা হবে। নির্বাচনের মাঠে খেলা হবে। আসুন, খেলায় আসুন, নির্বাচন আর রাজনীতির মাঠে খেলায় আসুন। আগুন নিয়ে খেলবেন না, আমরা প্রতিহত করব। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে সেই আগুনের খেলা প্রতিরোধ করবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। ১/১১ এর ষড়যন্ত্রকারীরা এখন সক্রিয়, বিদেশিদের সঙ্গে আঁতাত করছে। বিএনপি জানে, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তাই তারা সেই ষড়যন্ত্রের খেলায় মেতে উঠেছে। কোনো অবস্থাতেই এটা হতে দেওয়া হবে না। কোনো অনির্বাচিত সরকারকে আর আসতে দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনও আছে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকুক— তারা মানতে চায় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হবে, দেশ এগিয়ে যাবে। এ জন্য তাদের আওয়ামী লীগের প্রতি ভীতি আছে। আজ আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার। তাদের ষড়যন্ত্রকে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে প্রতিহত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মণি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।