মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন-
জমি কেনার সময় কিছু প্রাথমিক সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই জরুরী। তা না হলে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যা তৈরী হতে পারে। মামলা মোকদ্দমা সহ জমি বেহাত হয়ে যেতে পারে। আপনি প্রতারিত হতে পারেন। জমি কেনার সময় নিম্নের বিষয় গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে-
১) প্রথমেই প্রস্তাবিত জমিটি সরেজমিনে গিয়ে দেখতে হবে। তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন জমিটি আসলে কেমন। আদৌ ভাল জমি নাকি ডোবা-নালা-পুকুর।
২) সংলগ্ন জমির মালিক বা এলাকাবাসীর নিকট হতে জমির বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে হবে। এরাই আপনাকে জমির বিষয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারবেন। তবে এখন ভূমি ক্রয়-বিক্রয় দালাল চক্রের নিকট জিম্মি স্বার্থ না থাকলে ভাল ভূমিরও নানান দোষ বলে বেড়ায় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে ।
৩) বিক্রেতার দেয়া মালিকানার দলিল, বায়া দলিল ,ওয়ারিশ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), পর্চা – ( সি.এস/ এসএ/ আরএস/ মহানগর/ মিউটেশন পর্চা ), ডিসিআর, হাল সনের খাজনার দাখিলাসহ ইত্যাদি সরাসরি ভূমি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তার নিকট হতে সঠিকতা যাচাই করতে হবে । জমিতে কোন সরকারি স্বার্থ (খাস, ভিপি, পরিত্যাক্ত, অধিগ্রহণ বা এ্যাকুইজিশনকৃত, কোর্ট অব ওয়ার্ডস, ওয়াকফ ইত্যাদি) জড়িত কি না ইত্যাদি বিষয়ে তহসিল অফিসই আপনাকে প্রকৃত তথ্য দিতে পারে।
৪) যে জমিটি কিনতে চাচ্ছেন তা বিক্রেতার ক্রয়কৃত সম্পত্তি হলে তা বিক্রেতার নামে অবশ্যই মিউটেশন করা থাকতে হবে। বিক্রেতার নামে মিউটেশন না থাকলে জমি রেজিস্ট্রেশন হবে না।
৫) যে ভূমিটি ক্রয় করবেন মৌজা ম্যাপে ঐ দাগ নম্বরটি আছে কিনা ?
৬) বিক্রেতার দেয়া দলিলসমূহ সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য জেলা রেজিষ্ট্রার এর অফিসের ভলিউমের সাথে মিলাতে হবে ।
৭) সরকার নির্ধরিত ফি জমা দিয়ে স্থানীয় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে অথবা জেলা রেজিষ্ট্রার এর অফিস হতে জমিটির ক্রয়-বিক্রয়ের সর্বশেষ তথ্য জানা যাবে ।
৮) তহশীল অফিস থেকে জমিটি সার্টিফিকেট মামলাভূক্ত কিনা তা জানা যাবে ।
উপরোক্ত তথ্য মিল থাকলে ৩ মাস মেয়াদী রেজিষ্ট্রি বায়না করে জমিটির দখল নিন বা তপসিল উল্লেখ করে জমিতে সাইনবোর্ড দিন তারপর ৩টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন জমিটির কোন গুপ্ত ওয়ারিশ সম্পর্কে জানার জন্য এতে পরে কোন সমস্যা হলেও আপনি আইনগত সুবিধা পাবেন। তাছাড়া, এই জমির অন্য কোনদাবীদার বা ওয়ারিশ থাকলে, মামলা মোকদ্দমাসহ অন্য কোন সমস্যা থাকলে তা প্রকাশিত হবে এবং আপনি ভবিষ্যতের একটি স্থায়ী ও জটিল সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন। প্রয়োজনে এবং অবস্থা বুঝে আপনার জমি কেনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন।
উপরোক্ত ধাপগুলো সন্তোষজনক হলে ক্রয়কৃত টাকার সমপরিমাণ দলিল করুন । দলিল কম টাকার করলে ভবিষ্যৎ এ ইনকাম ট্যাক্সের ঝামেলায় পড়বেন এবং কোন বিপদে পড়িলে আইনগত সুবিধা পাবেন না । তবে দলিলে সনাক্তকারীর স্বাক্ষর অবশ্যই বিক্রেতার ওয়ারিশদের থেকে নিবেন ।
পরিশেষে বলব এত টাকা দিয়ে জমি কিনবেন সামান্য কিছু ফিসের জন্য কৃপনতা না করে জমি ক্রয়ের পূর্বে একজন সিভিল এ্যাডভোকেট বা সিনিয়র দলিল লিখকের পরামর্শ নিন ।
বিক্রেতা সম্পত্তির মালিক কিভাবে হয়েছেন ?
যিনি সম্পত্তি করতে চাচ্ছেন তিনি কিভাবে সম্পত্তিটি মালিক হলেন বিষয়টি জানা ও যাচাই করা খুবই জরুরি। কারণ বিভিন্ন উপায়ে সম্পত্তির মালিক হওয়া যায় এবং সেই অনুযায়ী দলিলপত্র যাচাই করতে হবে।