শিয়া সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও চারশ বছরের ঐতিহ্য পবিত্র আশুরা। কিন্তু ২০১৫ সালে পুরান ঢাকার হোসেনি দালান ইমামবাড়ায় বোমা হামলার পর থেকেই তাজিয়া মিছিলে কড়াকড়ি নিরাপত্তা আরোপ করা হয়। এ বছর তার ব্যতয় ঘটেনি। আশুরা উপলক্ষে রাজধানীর হোসেনি দালান ইমামবাড়া, বড় কাটারা ইমামবাড়া ও এর আশেপাশের শিয়া সম্প্রদায় কেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া (শোক) মিছিলকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
পবিত্র আশুরায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আশুরাকে ঘিরে নাশকতার কোনো আশঙ্কা নেই বলেও এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকালে রাজধানীর হোসেনি দালান ইমামবাড়া, বড় কাটারা ইমামবাড়া ও এর আশেপাশে নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন।
শিয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত পুরান ঢাকার হোসেনি দালান ইমামবাড়া থেকে শুরু হয়েছে তাজিয়া মিছিল। সকাল ১০টায় এ মিছিল বের হয়ে রাজধানীর বকশিবাজার, উর্দুরোড, লালবাগ চৌরাস্তা, ঘোড়া শহীদের মাজার, আজিমপুর, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডি দুই নম্বর সড়কের লেক পাড়ে কারবালার ময়দান নাম স্থানে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়া মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বকশিবাজার, লালবাগ, ফরাশগঞ্জ, পল্টন, মগবাজার থেকেও তাজিয়া মিছিল বের হয়।
হোসেনি দালান থেকে বের হওয়া মিছিলে হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশুর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে। লাল-কালো আর সবুজ অক্ষর-খচিত নিশান হাতে তারা খালি পায়ে মিছিল করেছে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। মিছিল থেকে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতমে শোকের আবহ ছড়িয়ে পড়েছে রাজপথে। অন্যদিকে, সুষ্ঠুভাবে তাজিয়া মিছিল সম্পন্ন করতে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন নিষিদ্ধ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই সঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশ ও র্যাব।
হোসেনি দালান ইমামবাড়া এর যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ বাকের রেজা মাজলুম বলেন, আশুরার তাৎপর্য মেনে প্রতিবছর আমরা দিনটি উদযাপন করি। কারবালার সেই বিয়োগান্তক ঘটনাকে স্মরণ করি।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিল প্রস্তুতির সময় বোমা হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। ওই ঘটনায় ঢাকার চকবাজার থানায় একটি মামলা হয়। উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওই হামলার পর থেকে প্রতিবছর আশুরার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবারও আশুরাকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।