জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এর মধ্যে আকাশচুম্বী হয় মুরগি ও ডিমের দাম। প্রতি ডজন ডিম ৪০ থেকে ৬০ টাকা বাড়তি দামে কিনতে হয় ক্রেতাদের। প্রতি কেজি মুরগিতেও একইভাবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বেড়ে যায়। এতে ক্রেতাদের নাভিশ^াস ওঠে। ফলে মাছ-গোশত কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে নিম্ন আয়ের মানুষ। অবশেষে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকা এই দুইটি পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজারঘুরে দেখা যায়, বাজারে লাল ডিমের দাম কমে ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। গত সপ্তাহে যে ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। হাঁসের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। দেশী মুরগির ডিমের ডজন ২১০ টাকা। একইভাবে ব্রয়লার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ২১০ টাকা কেজি। কমেছে সোনালি মুরগির দাম। কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩১০ টাকা। লেয়ার মুরগির দামও কমেছে। কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকায়।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে খামারিরা ও পাইকাররা ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমরা যে দামে ক্রয় করি তার থেকে ৫-১০ টাকা লাভে বিক্রি করি। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমাদের করার কিছুই থাকে না। বাসাবো বাজারের ক্রেতা আসলাম হোসেন বলেন, আমরা নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষ। সবকিছুর দাম বেড়েছে। গোশত কিনে খাওয়া তো দূরের কথা ভালো মাছ কিনেও খেতে পারি না। ভালো কিছু কিনতে গেলে পকেটে আর টাকা থাকে না। ফলে শাকসবজির চিন্তা করি কিন্তু সেই শাকসবজির বাজারেও আগুন। এ দেশে গরিব বাঁচতে পারবে না। দেশের ৮০ শতাংশ গরিব মানুষ সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বাজারে বেশির ভাগ সবজি গত সপ্তাহের দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সিমের কেজি ২০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। লম্বা বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। চালকুমড়া পিস ৫০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৫০, চিচিঙ্গা ৬০, করলা ৮০ টাকা, পটোল ৪০, ঢেঁড়শ ৬০, কচুরলতি ৭০, পেঁপে ৩০, বটবটি ৮০ টাকা, ধুনদুল ৫০ টাকা। এইসব বাজারে কাঁচামরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। শুকনো মরিচের কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। শুধু সিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। সাপ্লাই বাড়ায় সবজির দাম কমেছে। বাজারে আলুর কেজি বিক্রি ৩০ টাকা। পেঁয়াজের দাম কমেছে। দেশী পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা। এসব বাজারে রসুনের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। বাজারে চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। আদার কেজি ৯০ থেকে ১১০ টাকা।
বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৯০ টাকা। এ ছাড়া প্যাকেট চিনির কেজি ৯৫ টাকা। এ ছাড়াও এসব বাজারে দেশী মসুরের ডালের কেজি ১৩০ টাকা। ভারতীয় মসুরের ডাল ১১০ টাকা। এ ছাড়া ভোজ্যতেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা।
বাজারে গরুর গোশতের কেজি ৬৬০ থেকে ৬৮০ টাকা। খাসির গোশতের কেজি ৯০০ টাকায়।
গত সপ্তাহের বাড়তি ধানে বিক্রি হচ্ছে চাল। সব ধরনের মোটা ও চিকন চাল আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। বাসাবোর চাল ব্যবাসায়ী শফিকুল বলেন, চালের দাম বাড়ার পেছনের কারণ হচ্ছে সিন্ডিকেটের কারসাজি। পাইকারি ও সিন্ডিকেটরা পরিবহন খরচের অজুহাত দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়েছে। প্রায় সব ধরনের মোটা ও চিকন চলের দাম বাড়তি। মোটা চালের বস্তায় দাম বেড়েছে ২৫০ এবং চিকন চালের বস্তায় দাম বেড়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।