প্রায় ৪ বছর আগে দক্ষিণী সিনেমা ‘কেজিএফ’ ঝড় তুলেছিল ভারতে। এর উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছিল ভারত ছাড়িয়ে পাশের দেশগুলোতেও । এ বছর মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটির দ্বিতীয় কিস্তি। বক্সঅফিসে ব্যাপক সফল সেই সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এবার ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডে (সিরিয়াল কিলিং) জড়ালো ১৯ বছরের এক কিশোর। এভাবে প্রায় ৪ থেকে ৫ টি খুন করার পর অবশেষে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সংবাদামধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, কেবল বিখ্যাত(!) হওয়ার জন্যই সিরিয়াল কিলিংয়ের পথ বেছে নিয়েছিল শিব প্রসাদ নামে ওই কিশোর। এভাবে চার নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যা করেছে সে। পরবর্তী নিশানা হিসেবে পুলিশ সদস্যদের ওপর নজর ছিল তার।
ভারতীয় গনমাধ্যমগুলো থেকে জানা যায় , এক ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন চুরি করেছিল অভিযুক্ত কিশোর। সেই সূত্র ধরেই শুক্রবার ভোপাল থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা তরুণ নায়ক জানিয়েছেন, ওই কিশোর কেবল গভীর রাতে শিকারে বেরোতো। ঘুমন্ত নিরাপত্তারক্ষীদের নিশানা বানাতো সে। তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বিখ্যাত (বা কুখ্যাত) হওয়া। কন্নড় সিনেমা কেজিএফ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিল শিব প্রসাদ। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত কিশোর সাগর এলাকায় তিন রাতে তিন নিরাপত্তারক্ষীকে এবং গত রাতে ভোপালে আরও একজনকে হত্যা করেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের ধরন প্রায় একই। কোনো ভুক্তভোগীকেই লুট করা হয়নি। ফলে শহরে তথাকথিত ‘স্টোনম্যান’- এর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোপাল থেকে ১৬৯ কিলোমিটার দূরে সাগর এলাকায় শুরু হয়েছিল শিব প্রসাদের হত্যাযজ্ঞ। গত মে মাসে সেখানে একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ সাইটের এক প্রহরীকে খুন করে তার মুখে জুতা রাখা হয়।চ গত বৃহস্পতিবার রাতে মার্বেল রড ব্যবহার করে সোনু ভার্মা (২৩) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। সোনু ভার্মা একটি মার্বেলের দোকানে নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। এর আগে গত ২৮ আগস্ট হত্যা করা হয় কল্যাণ লোধি নামে এক ব্যক্তিকে। তিনি একটি কারখানার নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। কল্যাণের মাথা হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়। এর পরের রাতে একটি আর্টস অ্যান্ড কমার্স কলেজের ৬০ বছর বয়সী নিরাপত্তারক্ষী শম্ভু নারায়ণ দুবেকে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। তার পরের রাতে একটি বাড়ির প্রহরী মঙ্গল আহিরওয়ারকে হত্যা করে অভিযুক্ত কিশোর।
এই হত্যাকাণ্ডে গুলোর ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সারা শহরে। টহল জোরদার করা হয়। পরে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে এক ব্যক্তিকে হত্যার দৃশ্য। এতে দেখা যায়, হাফপ্যান্ট ও হাফশার্ট পরা হত্যাকারী তার শিকারকে আঘাত করছে এবং একপর্যায়ে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দিচ্ছে। পরে কেউ এ ঘটনা দেখেনি নিশ্চিত হয়ে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে সে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র বলেছেন, এগুলো অন্ধ হত্যাকাণ্ড ছিল। দ্বিতীয় বা তৃতীয় শিকারের মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে তাড়া করে। ফোনের অবস্থানের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে ভোপাল থেকে ধরা হয়েছে।