২৩, ডিসেম্বর, ২০২৪, সোমবার
     

নিউইয়র্কে ঐক্যের ডাক আইজিপির

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার নেপথ্যে তিন বছর ধরে বাংলাদেশিদের একটি চক্রের নিয়োগ দেওয়া চারটি লবিং ফার্ম কাজ করেছে। এসব বাংলাদেশি অবয়বে বাঙালি হলেও তারা প্রকৃত বাঙালি না। তারা আর্টিফিসিয়াল বাঙালি। তারা দেশ ও দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিকভাবেই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাতে ‘যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক কমিটি’র উদ্যোগে নিউইয়র্কের গুলশান ট্যারেসে এক নাগরিক সংবর্ধনায় বেনজীর আহমেদ এসব কথা বলেন। জাতিসংঘে পুলিশপ্রধানদের সম্মেলনে অংশ নিতে বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র ইউনিটের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ দলটির নেতাকর্মী, ব্যবসায়ীসহ বাংলাদেশিরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তা ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে তারা স্লোগান দেন।

তিনি বলেন, ‘আমেরিকানদের সঙ্গে আমাদের অনেক গোল (লক্ষ্য) সেট করা আছে। আমেরিকানরা সন্ত্রাসবাদের শিকার, আমরাও সন্ত্রাসবাদের শিকার। তাদের সব ঘোষণা ও নীতি রয়েছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের নীতিও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমেরিকারও তা-ই। তো আমাদের লক্ষ্য এক।’

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমেরিকা ম্যাক্সিকানদের মাধ্যমে মাদকের ভিকটিম, আমরাও মিয়ানমারের মাধ্যমে মাদকের ভিকটিম। আমরা ও আমেরিকা মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমেরিকা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, আমরাও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বিশ্বে আমেরিকা গণতন্ত্রের মডেল। আমরাও গণতন্ত্রে উন্নতি করেছি। এটাও আমাদের দুই দেশের একই লক্ষ্য। দুই দেশেরই এরকম অজস্র লক্ষ্য অভিন্ন। আমাদের সামাজিক উন্নয়নে আমেরিকার অবদান রয়েছে। তাই আমি বলব, এই নিষেধাজ্ঞা যেটা হয়েছে, এটা অবয়বের বাঙালিরা করেছে। তারা ফার্ম নিয়োগ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের একক কিছু না, এটা সবার। তাই এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে সবাইকে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের প্রয়োজনে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ও নাগরিকদের প্রয়োজনে— একটি জেনারেশনকে দায়িত্ব নিতে হয়।’

আইজিপি বলেন, ‘ছয়শত লোক হারিয়ে গেছে, তারা কোথায়? তাদের নাম কী? তাদের ঠিকানা কী? তাদের কবর কোথায়? মতিঝিলে হেফাজতের প্রোগ্রামে নাকি তিন হাজার লোক মারা গেছে। পরে আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, যারা মারা গেছে তাদের নাম, ঠিকানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম দেন। তারা দিতে পারল না। আমাদের দেশের এই অধিকার, স্বাধিকার, প্রাধিকার নামের কিছু এনজিও এগুলো করেছে। এই তথ্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। সামনে কিন্তু আরও সমস্যা আসতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বাঙালির চার হাজার বছরের ইতিহাসে আমরা নিজেরা নিজেদের কখনো শাসন করিনি। অনেকে সেন, পাল ও নবাব বংশের কথা বলেন। আসলে তারা বাঙালি ছিলেন না। অথচ এই বাংলা ছিল শস্য-শ্যামল ও শস্যভাণ্ডার। চার মাস কৃষকরা চাষাবাদ করত। হিমালয় থেকে আসা পলির কারণে এই জমি ছিল উর্বর। এছাড়াও ছিল মাছ। মানুষ অভাবে ছিল না।’

আইজিপি বলেন, ‘বাঙালি হলো গোল্ডফিশ মেমোরি। আমাদের ১৯৭১ সালের আগের ইতিহাস কী ছিল, তা আমরা কেউ মনে করি না। ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের চেহারা কেমন ছিল? যাদের মনে আছে, তারা বলতে পারবেন। ১৯৭১ সালে যখন দেশ স্বাধীন হয়, তখন পশ্চিমের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, এই দেশ টিকবে না। তাদের যুক্তি ছিল, সাত কোটি মানুষের খাদ্য বাংলাদেশ উৎপাদন করতে পারবে না। প্রতিবছর ৬ থেকে ১৮ লাখ টন খাবার প্রয়োজন। এজন্য ধারাবাহিকভাবে আমাদের ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ হামলা করত। কারণ আমরা উৎপাদন করতে পারতাম না। আমরা প্রকৃতির ওপর নির্ভর ছিলাম। যে বছর বন্যা হয়েছে ফসল হয়নি, যে বছর খরা হয়েছে ফসল হয়নি। তাই আমরা ১৯৭১ সাল বা তার আগে খাবার উৎপাদন করতে পারতাম না।’

পুলিশের আইজি আরও বলেন, ‘সেই অর্থনীতিবিদদের আরও যুক্তি ছিল, এ দেশে রপ্তানির কোনো পণ্য নেই, শিল্প-কারখানা এবং আমাদের খনিজসম্পদ নেই। তাই এই দেশ টিকবে না। ১৯৭২ সালে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল, তা ছিল কৃষি খাতনির্ভর। কিন্তু এখন কৃষি খাতনির্ভর বাজেট কমতে কমতে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘সেসব অর্থনীতিবিদের মুখে ছাই দিয়ে, কেবল ছাই দিয়ে না, চুনকালি দিয়ে আমাদের অর্থনীতি কোথায় চলে গেছে। করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না এলে আমাদের জিডিপি ১০ শতাংশ থাকত এখন। কারণ করোনার আগে আমাদের জিডিপি ছিল ৭.৫ শতাংশ। এটা বিশ্বব্যাংকের কথা। ২০৩০ সালে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪০ সালে আধুনিক দেশে উন্নতি হওয়ার কথা রূপকথা না। এটা বাস্তবতা। আমরা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারি। আমরা মাথা উঁচু করেই পৃথিবীতে বসবাস করব।’

আইজিপি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করার আরেকটি দর্শন হলো, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করা। আমরা দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছি। বিশ্বে আমরা ৩৬তম বড় অর্থনৈতিক দেশ। কয়েক বছরের মধ্যে ২৪তম দেশে রূপান্তরিত হব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভেতরকার একটি শত্রুতার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছি। আমাদের অন্তর্নিহিত লড়াই চলছে। এই চক্রটি দেশে ও মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। তাদের লক্ষ্য কী আমি জানি না। এদের বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে।’

প্রসঙ্গত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ
বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর।

               

সর্বশেষ নিউজ