৭৫ বছর পূর্বে! জন্মেই দেখলেন একটি নতুন জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, মানুষের স্বপ্ন পূরণের আন্দোলন, প্রত্যাশা পূরণের আন্দোলন। তাঁর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আন্দোলন দানা বাঁধে, পূর্ণতা পায়। একসময় নিজেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন জাতির স্বপ্ন পূরণের সুকঠিন আন্দোলনে। উপরন্তু জন্মগ্রহণ করেন রাজনৈতিক পরিবারে। মূলত: বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাঙালি জাতির স্বপ্ন পূরণের দীর্ঘ কঠিন সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের এই আপোষহীন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে বেশিরভাগ সময়ই কারাভ্যন্তরে কাটাতে হয়। আর কারা জীবনের বাইরের বেশিরভাগ সময়ই সারাদেশে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে কাটান। তাই বুঝে ওঠার সাথে সাথেই তাঁকে মহীয়সী মায়ের সঙ্গে পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান হয়েও এই সংগ্রামে সামিল হন।
কলেজ জীবনেই ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। পাশাপাশি তিনি দেখেছেন বাবার অবর্তমানে মা দল এবং দলের নেতা-কর্মীদের কীভাবে সামলেছেন। অর্থাৎ তিনি রাজনীতি দেখেছেন এবং করেছেন।
শেখ হাসিনা এবং বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে অবস্থানকালীন পরিবারে ঘটে ইতিহাসের নির্মম ঘটনা, নিষ্ঠুর ঘটনা- বাবা-মাসহ পরিবারের সকলকে হারান! এ ঘটনার পর দিশেহারা হয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন এখান থেকে সেখানে, সম্মুখীন হয়েছেন নতুন নতুন নির্মম অভিজ্ঞতারও। দমে যান নি শেখ হাসিনা, তিনি যে দমে যাওয়ার পাত্র নন।
একদিকে হতবাক দিশেহারা দেশের মানুষ, দ্বিধাবিভক্ত দল। এই অবস্থায় বহুমুখী এক পরিস্থিতির মধ্যে দলের ঐক্যের প্রতীক হয়ে, দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে, অথৈ সাগরের মধ্যে সামান্য খরকুটো হয়ে আবির্ভূত হন শেখ হাসিনা! কালবোশেখী ঝড় আর লক্ষ লক্ষ গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের গগন বিদারী স্লোগানের মধ্যে তিনি শোককে শক্তিতে পরিণত করার আহ্বান জানান। তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত কোটি কোটি বঞ্চিত, দুঃখী মানুষের মধ্যে তাঁর বাবা-মা, ভাই- বোনসহ প্রিয়জনকে খুঁজে নেন।
নানা টানাপোড়েনের মধ্যে শুরু হলো তাঁর ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে গণতন্ত্রের সুকঠিন অভিযাত্রা। দীর্ঘ ৯ বছর আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন গণতান্ত্রিক সরকার, ফিরিয়ে আনেন মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার। আবার শুরু করেন সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বিরোধী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এই সংগ্রাম সফল করতে তিনি অসংখ্যবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যান এবং সফল হন।
পাহাড়ে রক্তক্ষয়, গঙ্গার পানির হিস্যা, স্থলসীমান্ত সমস্যা, সমুদ্র বিজয়সহ সমাধান করেন অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জটিল সমস্যার। গ্রেনেড হামলার নিশ্চিত মৃত্যু থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি! এতেও দমানো যায়নি এই আলোর পথের দুর্দমনীয় যাত্রীকে। তিনি আবার দ্বিগুন বেগে, নতুন বেগে ধাবিত হন লক্ষ্য পূরণে বাবার স্বপ্ন পূরণে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠায়।
এরই মধ্যে তিনি অর্জন করেন অসংখ্য আন্তর্জাতিক ও বিশ্ব সম্মান শান্তি ও মানবতা প্রতিষ্ঠায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য! দেশকে সম্মানিত করেন তাঁর সততার জন্য, সাহসের জন্য, বিশ্ব পরিবেশ রক্ষার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। সম্মানিত হন, স্বাস্থ্য শিক্ষায়, সর্বোপরি চ্যালেঞ্জ বিজয়ে। দেশকে সমৃদ্ধ করেন অর্থনৈতিক উন্নয়নে, তাঁর দূরদর্শী এবং সঠিক নেতৃত্বে।
আমরা বিস্ময়ে অবাক হই, যখন দেখি একজন মানুষ তাঁর আপনজন সকলকে হারিয়ে ছুটে চলেন মানুষের স্বপ্ন পূরণে, লক্ষ্য ছুঁতে। অবাক হই, যখন দেখি একজন মানুষ এগিয়ে যান শত বাঁধা পেরিয়ে, ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রই যখন দেখি একজন মানুষ তাঁর আপনজন হারানোর অসহনীয় শোক, কষ্ট ও বেদনাকে ভুলে গিয়ে মানুষকে স্বপ্ন দেখান, স্বপ্ন পুরন করেন! শুধুমাত্র তিনিই পারেন, যে মানুষের কষ্টে দুঃখ পান,সুখে হাসেন, যে মানুষকে ভালোবাসে, অধিক ভালোবাসে, শুধুই ভালোবাসে সে-ই শেখ হাসিনা, জীবন্ত কিংবদন্তী!!
আশরাফুল আলম পপলু
সদস্য- পরিচালনা কমিটি
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর