২৩, ডিসেম্বর, ২০২৪, সোমবার
     

রংপুর মেডিক্যালের ৬০০ যন্ত্রপাতির সাড়ে ৪ শ’-ই অকেজো, এটা মেনে নেয়া যায় না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৬০০ যন্ত্রপাতির মধ্যে সাড়ে ৪ শ’-ই অকেজো বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, ‘দেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে নানা সমালোচনা ছিল এবং এখনো আছে। চিকিৎসা খাতের ঠিক কোন জায়গাটায় সমস্যা সেটি খুঁজে বের করতে আমরা এখন মাঠে নেমে গেছি। দেশের প্রান্তিক হাসপাতালগুলোতে সরেজমিন পরিদর্শন শুরু করেছি, রোগীদের সাথে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলছি। মেশিন কয়টি আছে, কয়টি নষ্ট, কী কারণে নষ্ট, কোন চিকিৎসকরা ডিউটি ঠিকভাবে করেন, কারা করেন না- এগুলো নিজে উপস্থিত থেকে তালিকা করে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, ‘দেশের ছয়টি বিভাগ পরিদর্শন শেষ করেছি। আর মাত্র দুটি বিভাগ বাকি আছে। এরপর দেশের সব হাসপাতালের ছোট-বড় খুঁটিনাটি সব বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন রকম কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে, যত যা কিছুই করা হোক, চিকিৎসা দিতে হবে চিকিৎসকদেরই। চিকিৎসা দিতে অবহেলা করা যাবে না। নিজ নিজ হাসপাতালকে নিজ উদ্যোগে সংশোধিত করতে হবে, উন্নত করতে হবে। আর চিকিৎসা দিতে হবে দরদ দিয়ে। মানুষকে চিকিৎসা সেবা এমনভাবে দেবেন যেনো বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা নিতে দেশের আর কোনো মানুষকে বিদেশে যেতে না হয়, বরং বিদেশ থেকেই বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে বিদেশীদের আসতে হয়।’

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটিতে বেড সংখ্যা এক হাজার হলেও চিকিৎসা নেয় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, হাসপাতালের কিছু বিভাগে ভালো চিকিৎসা সেবা দেয়া হলেও বেশ কিছু বিভাগের গুরুতর ত্রুটি লক্ষ্য করেছি। এসব চলবে না। আরেকটি অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এই হাসপাতালে প্রায় ৬০০ যন্ত্রপাতি থাকলেও এগুলোর মধ্যে সাড়ে ৪ শ’-ই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এটা তো মেনে নেয়া যায় না। হয় পুরাতন যন্ত্রপাতি দ্রুত মেরামত করতে হবে, নইলে নতুন মেশিন কিনতে হবে। কিন্তু সাড়ে ৪ শ’ মেশিন নষ্ট পড়ে থাকলে আপনারা (চিকিৎসক, নার্স) মানুষকে কী চিকিৎসা দেবেন? আমরা হাসপাতালে কী কী ওষুধ দেই আর রোগীদের কী কী ওষুধ আপনারা বাইরে থেকে কেনান এটা আমরা খুঁজে বের করছি। এরপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বক্তব্যের শেষপর্যায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখাসহ রোগীদের সেবায় আরো করণীয় নানারকম পরামর্শ দেন।

এর আগে সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রংপুরের নির্মাণাধীন ১৫ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার হাসপাতালের চলমান নির্মাণ কাজের পরিদর্শন করেন। নির্মাণ কাজ দ্রুততার সাথে করতে স্থানীয় প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এরপর মন্ত্রী ১০০ বেডের শিশু হাসপাতালে এবং রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত বিভিন্ন ইউনিটের রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার মান সরেজমিনে পরিদর্শন করেন ও সেখানকার চিকিৎসক, নার্সদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।

সভার সভাপতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খুরশিদ আলম জানান, করোনায় বাংলাদেশ যদি এত ভালো করতে পারে, চিকিৎসকরা প্রশংসা পেতে পারে তাহলে দেশের মানুষের চিকিৎসায় চিকিৎসকরা কেন ভালো করতে পারবে না। দেশের মানুষের উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা দিতে চিকিৎসকদের অবশ্যই আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে নার্স, স্টাফ ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও বক্তব্য রাখা হয়।

সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশিদ আলমের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল হক, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক টিটু মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর শামিউল ইসলাম, রংপুর বিভাগের বিএমএ সভাপতি ও রংপুর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ বিমল চন্দ্র রায়, এইচইডি’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডিয়ার বশির, রংপুর মেডিক্যালের পরিচালক ইউনুছ আলী, রংপুর বিভাগীয় হাসপাতাল পরিচালকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও নার্সরা বক্তব্য দেন।

সূত্র : ইউএনবি

               

সর্বশেষ নিউজ