প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রশ্নে বড় দুদলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক। এই অনড় অবস্থানের মধ্যে নির্বাচন হলে এবং কোনো বড় দল নির্বাচনে অংশ না নিলে সিইসি হিসাবে আমি বলব, নির্বাচনের মূল ফলাফলের ওপর ঝুঁকি থাকতে পারে। একটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, মানুষ বিপদগ্রস্ত হতে পারেন।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) নয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সিইসি।
এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা হবে এবং নির্বাচনে সব বড় দল অংশ নেবে। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জ নিয়েও কথা বলেন।
ওই মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আনিছুর রহমান ও মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের আমন্ত্রণে আসা কয়েকজন বিদেশি ব্যক্তিও এ মতবিনিময়ে অংশ নেন। তাদের মধ্যে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালা নাথ খানালও উপস্থিত ছিলেন। পর্যবেক্ষকেরা পক্ষপাতহীন আগামী নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা করেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা চাই না সে ধরনের পরিস্থিতি (আইনশৃঙ্খলার অবনতি) হোক। সেজন্য আমরা বলব, প্রধানতম দল, যারা সরকারে অধিষ্ঠিত দলের প্রতিও আমার আহ্বান থাকবে, আপনারাও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যান বিরোধী দলগুলোকে (নির্বাচনে) সঙ্গে নিতে। তারাও যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনটাকে যেন অবিতর্কিতভাবে তুলে আনতে পারি। পুরো জাতির কাছে যেন এই নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, আমরা যেন দেশে এবং বিদেশে সে স্বীকৃতি লাভ করতে পারি।
সিইসি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে সেটা দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেখাতে চাই। কিন্তু এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। মূল বিভক্তি নির্বাচন বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী হবে আর নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে- সেটা এখনো নিরসন হয়নি। এই প্রশ্নে দুটি দল এখনো অনড়। নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতা হলো ইসি নির্বাচন করবে সংবিধান অনুযায়ী। বর্তমান সংবিধানে যেটা বহাল আছে সেটাই অনুসরণ করতে হবে।
সিইসি আরও বলেন, একইভাবে ইসির প্রত্যাশা থাকবে সব দল, প্রধানতম রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে এবং নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করবে। দলগুলোর কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে ভোটকেন্দ্রে ভারসাম্য সৃষ্টি হয় না। তিনি আশা করেন, আগামী কয়েক মাসে হয়তো একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হবে এবং সব রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরা চাই আগামী নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক।
পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, মতবিনিময়টা মূলত ছিল একাডেমিক আলোচনা। গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতাগুলো আলোচিত হয়েছে। তিনি বলেন, উনারা আমাদের দেশে নির্বাচন কেমন হয়, তা জানতে চেয়েছেন। উনারা আশা করেছেন আমাদের আগামী নির্বাচনটা যেন সুন্দরভাবে হয়। জানতে চেয়েছেন, পর্যবেক্ষককে আমরা স্বাগত জানাই কিনা? আমরা বলেছি, পর্যবেক্ষকের বিষয়ে আমরা খুবই উন্মুক্ত। আমরা স্বচ্ছতা চাচ্ছি। আর স্বচ্ছতার জন্য অবশ্যই গণমাধ্যম লাগবে। পর্যবেক্ষক লাগবে। মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকেরা বস্তুনিষ্ঠভাবে রিপোর্ট করতে পারলে অনেক বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত হতে পারে।
প্রতিনিধি দলের সদস্য নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালা নাথ খানাল বলেন, নেপাল ও বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। গণতন্ত্রেরও উন্নয়ন হচ্ছে। তবে কিছু সমস্যা আছে। নির্বাচন নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে অনেক কিছু করতে হবে, এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী নির্বাচন ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে, এটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে জেনে তারা আনন্দিত। তিনি আশা করেন বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ হবে।
জার্মান প্রতিনিধি ভরকার ইউ ফ্রেডরিচ বলেন, ইসির সঙ্গে আলোচনায় তাদের চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনেছি। গণতন্ত্র চর্চায় কেউ শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে না। সর্বোপরি আমরা আশা করি বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে। প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণের ওপর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করবে বলে মনে করেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্রেডরিচ বলেন, এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যে কোনো একটি দলকে অংশগ্রহণ করতেই হবে। নিবন্ধিত এবং যোগ্যতা থাকলে তাদের ভোটে অংশগ্রহণ করার অধিকার আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন- নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য তাহ মোহাম্মদ মিয়া, ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. হাবিবুর রহমান, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।