এস এম সাইফুল ইসলাম কবির. বাগেরহাট:
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় ক্ষমতাধর দলিললেখক-জমিকেনাবেচা সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার বিষয়ে স্থানীয় এমপি শেখ হেলাল উদ্দীনের কাছে নালিশ করায় সিন্ডিকেট প্রধান মো. রবিউল ইসলাম খান ওরফে রবি খান কালের কন্ঠ প্রতিনিধি সাংবাদিক লেখক কপিল ঘোষকে স্বপরিবারে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এই ব্যাপারে রবিবার রাত ১১টার দিকে (২৪ সেপ্টেম্বর,২০২৩) চিতলমারী থানায় রবি খানসহ তার সঙ্গীদের নামে সাধারণ ডায়রী (জিডি) হয়েছে। এই সিন্ডিকেটের হামলা বা জিম্মি করে রাখার ভয়ে গত তিন সপ্তাহ ধরে কপিলের সন্তানেরা স্কুলে যেতে পারেনি। তাদের পৈত্রিক বসতবাড়ি জবরদখলের ভয়ে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে। গ্রামেও বসেছে রাতের পাহারা।
এই সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় ইতোমধ্যে দুর্গাপুরের আশিষ ঘোষ, শ্যামপাড়ার পাগল গাইন সহ একাধিক ভুক্তভোগী হিন্দু পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
জানা যায়, দলিললেখক-জমিকেনাবেচা সিন্ডিকেটের প্রধান মো. রবিউল ইসলাম খান ওরফে রবি খান চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাবুল হোসেন খানের ছোট ভাই। সে উপজেলা দলিল লেখক সমিতিরও সভাপতি। এই সুবাদে তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রি অফিসকে কৌশলে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে। কৌশলে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দেয়া, সরকারী বন্দোবস্তকৃত খাস জমি রেজিষ্ট্রি দলিল করানো, দলিলের সিরিয়ালের জন্য চাঁদা আদায় সহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। পরসম্পদ জবরদখল, হামলা-মারপিটের অভিযোগও আছে।
সাংবাদিক কপিল ঘোষের স্ত্রী শিক্ষানবীস আইনজীবি ও উন্নয়নকর্মী নাহিদা ইয়াসমিন জানান, এলাকার অভিভাবক জননেতা শেখ হেলাল উদ্দীন এমপি মহোদয় গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) চিতলমারী উপজেলা ডাকবাংলোতে জরুরী কর্মীসভায় অংশগ্রহণ করেন। সন্ধ্যায় সভা শেষে তাঁর কাছে রবি খানের নেতৃত্বাধীন দলিললেখক-জমিকেনাবেচা সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার ঘটনা তুলে ধরে প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়। এমপি মহোদয় সবকথা শুনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল, থানার ওসি এএইচএম কামরুজ্জামান খানকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়ে চলে যান। এরপর সেখান থেকে ফেরার পথে মো. রবিউল ইসলাম খান ওরফে রবি খান, সেকেন্দার মুন্সী, মো. রিয়াজ খান, শিপন মুন্সী সহ অন্যান্যরা গালিগালাজ করতে থাকে। তাদের নিষেধ করলে মারতে তেড়ে আসে। উপস্থিত লোকজন তাদের ঠেকায়। এসময় তারা সাংবাদিক কপিল ঘোষসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যা বা ক্ষয়ক্ষতি করে আদালতে বিচারাধীন পৈত্রিক সম্পত্তি জবরদখলের হুমকি দিয়ে চলে যায়। এই বিষয়টি ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য জিডি হয়েছে।
চিতলমারীর চরবানিয়ারী ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক লেখক কপিল ঘোষ জিডিতে আরো উল্লেখ করেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় ওই হুমকিদাতারা (বিবাদী) আমাদের সম্পত্তি জবরদখল করে দেশ ছাড়া করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ইতোপূর্বে তারা কপিলের বড় ভাই আশিষ কুমার ঘোষকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে ক্ষয়ক্ষতির হুমকি দিয়ে আসছিল। পুর্বপুরুষ হতে প্রাপ্ত কোটি কোটি টাকা দামের পৈত্রিক সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ এবং আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
কপিল ঘোষ জানান, রহস্যজনকভাবে তাদের বড় ভাই আশিষ কুমার ঘোষ গত ৩০ আগস্ট, ২০২৩ নিখোঁজ হন। পরদিন ৩১ আগস্ট এই ব্যাপারে চিতলমারী থানায় সাধারণ ডায়রী (জিডি) করেন। ০৯ সেপ্টেম্বর রাত আটটার দিকে আশিষ কুমার ঘোষ চিতলমারী থানায় হঠাৎ উপস্থিত হন। থানায় লিখিত দেন তিনি নিখোঁজ হননি বা কেউ তাকে জিম্মি করে রাখেনি। এই সময় রবি খান সিন্ডিকেট সদস্যদের নিয়ে থানায় ছিলেন। রবি খান তখন জানায়, আদালতে বিচারাধীন আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তির মালিক এখন তারা! যেকোন সময় তারা দখলে আসবে। এই বিষয়টি ২২ সেপ্টেম্বর এমপি সাহেবকে নালিশ করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রবি খানেরা হুমকি দেয়।
এই ব্যাপারে মো. রবিউল ইসলাম খান ওরফে রবি খান জানান, সাংবাদিক কপিলের স্ত্রীর সাথে সম্পত্তি নিয়ে শুধু কথা কাটাকাটি হয়েছে। কপিলের বড় ভাই আশিষ ঘোষের পাওয়ারনামীয়দের কাছ থেকে তারা ওই সম্পত্তি নিয়েছেন এবং দখলে যাবেন বলে জানান। তিনি কোন হুমকি দেননি বলে দাবী করেন। আদালতে বিচারাধীন সম্পত্তি দলিল হল কিভাবে ? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা উপজেলা সাব-রেজিস্টার জানেন।
চিতলমারী উপজেলা সাব-রেজিষ্টার মিন্টু চক্রবর্ত্তী জানান, এটা আদালতে বিচারাধীন সম্পত্তি কি-না তিনি জানেন না। সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তির স্বার্থে উপযুক্ত কাগজপত্র থাকলে তিনি দলিল রেজিষ্ট্রি করেন। সাধারনত বিরোধপূর্ণ জায়গার উপযুক্ত মালিকানা মহামান্য আদালতের সিদ্ধান্তেই চুড়ান্ত হয়।
চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম কামরুজ্জামান খান জানান, সাংবাদিক কপিল ঘোষদের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে রয়েছে। সে কিংবা তার পরিবারের কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়- তা দেখভাল করা হচ্ছে। হুমকির বিষয়ে রবিবার রাতে কপিল ঘোষ থানায় জিডি করেছেন।
প্রসঙ্গত, কপিল ঘোষ কালের কন্ঠের চিতলমারী ও কচুয়া উপজেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। তার লেখা একাধিক বই শ্রাবণ প্রকাশনী ঢাকায় মহান একুশে বইমেলায় গত কয়েক বছরে প্রকাশ করেছে।