মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:
স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে আনুষ্ঠানিক রেল চলাচল উদ্বোধন করতে মাওয়া সুধী সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে তিনি মাওয়া সুধী সমাবেশস্থলে পৌঁছান। এ সময় মঞ্চে উঠে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্য হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি। তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা উপস্থিত আছেন।
সুধী সমাবেশ শেষে মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনে রেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে দুপুর ১২ টা ৪৫ মিনিটে তিনি মাওয়া রেলস্টেশন থেকে রেলে চড়ে ভাঙ্গা স্টেশনের উদ্দেশ্য রওনা দেবেন। এর আগে তিনি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। দুপুর ২টায় তিনি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে বক্তব্য রাখবেন।
এদিকে ভাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে পুরো জেলাসহ আশপাশের জেলা উপজেলাতেও বইছে উৎসবের আমেজ। সর্বস্তরের নেতা-কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বইছে রেল উদ্বোধন এবং দলীয় নেত্রীর আগমনী ঈদ আনন্দের উচ্ছ্বাস। তার আগমনকে সামনে রেখে ভাঙ্গাজুড়ে শুরু হয়েছে সাজ সাজ রব।
ঢাকা-ভাঙ্গা যে অংশের প্রাথমিকভাবে রেল সংযোগ চলবে সেটি যশোর বেনাপোল পর্যন্ত যাবে। মংলা বন্দরকে যুক্ত করায় সদ্য চালু হওয়া এই রেলপথ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে জানান রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।
তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪টি জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসবো। রেলওয়ে সেক্টরের উন্নয়ন বিগত বিএনপি সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেনটি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিশেষ ট্রেনে পদ্মা সেতু পার হবেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করছে। এর ৮২ কিলোমিটার অংশ ঢাকা ও ভাঙ্গাকে সংযুক্ত করে আগামীকাল খুলে দেওয়া হবে এবং এর যশোর সংযোগকারী অবশিষ্ট অংশটি আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত বছরের জুনে যুগান্তকারী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস পর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেল সার্ভিস উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে বিশেষ ট্রেনের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়।
এর আগে, পদ্মা সেতুতে পাথরহীন রেললাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর গত ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রেন চালায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প’-এর আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯,২৪৬.৮০ কোটি টাকা। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১,০৩৬.৭০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।
প্রকল্পের বিশদ বিবরণে বলা হয়েছে, সমাপ্ত হওয়ার পর, রেল যোগাযোগ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী শহরের প্রবেশ পথ আরো বর্ধিত হবে- যা মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং নড়াইল জেলার নতুন এলাকাকে যুক্ত করবে।
প্রকল্পটি ঢাকা-যশোর-খুলনাকে ২১২.০৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট দিয়ে বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপন করবে। এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি উপ-রুট স্থাপন করবে এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী ও বিজি কন্টেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। এই রুটটি কন্টেইনার বহনের জন্য গতি এবং লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে।