ক্রাইমভিশন ডেস্ক:
আবজাল হোসেনের কথা মনে আছে? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। আবজালেল স্ত্রী রুবিনা খানম একই অফিসের সাবেক স্টেনোগ্রাফার। এই দম্পতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে।
অবৈধ সম্পদ অর্জনে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার আবজাল বর্তমানে কারাবন্দি। তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে তিনটি। তবে এর মধ্যে একটি মামলার তদন্ত শেষ হলেও বাকি দুটির তদন্ত শেষ করতে পারেনি দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। ফলে স্বাস্থ্য খাতের মাফিয়া খ্যাত আবজালের বিচার শুরু করা যায়নি।
তিন বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকলেও সাজাপ্রাপ্ত আসামি না হওয়ায় আবজাল কারাগারে রয়েছেন বেশ আরাম-আয়েশে। সাজাপ্রাপ্ত বন্দি না হওয়ায় তাকে কোনো কাজও করতে হয় না। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন রাজার হালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী একই অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার রুবিনা খানম মিলে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন আবজাল হোসেন। তার স্ত্রী রুবিনা খানম অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সেখানে তাদের বাড়ি রয়েছে।
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, আবজাল বেতন-ভাতা বাবদ মাসে ৩০ হাজার টাকার মতো পেতেন। অথচ চড়তেন নিজস্ব দামি গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তার ও স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে।
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।
উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের একটি ভবন স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে কিনেছিল আবজাল। এ ভবনের ছয় তলায় থাকতেন এ দম্পতি। উত্তরায় একই সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কেও আরেকটি ভবন রয়েছে তার।
২০১৯ সালের ২৭ জুন জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে এ দম্পতির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। একটি মামলায় অবৈধভাবে অর্জিত ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। অপরটিতে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আরও ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। তবে তিন বছর পার হলেও মামলা দুটির তদন্ত শেষ করতে পারেনি দুদক।
জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচালক মো. সাহিদুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে দুদকের তিনটি মামলা রয়েছে। এর একটি মামলায় আদালতে অভিযোগ পত্র (চার্জশীট) জমা দেওয়া হয়েছে। অন্য দুটি মামলার তদন্ত চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আবজালকে দেখতে কারাগারে কেউ না এলেও তিনি নিয়মিত কারাগার থেকে মুঠোফোনে পরিবার ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন। আর স্বজনরা কারাগারের ক্যান্টিনে নিয়মিত টাকা জমা দেন- তার খাবারের জন্য।
কারাগারের একটি সূত্র ঢাকা টাইমসকে জানায়, কারাগারের সেলে গল্পগুজব করে সময় পার করেন আফজাল। কারাগারে অন্য বন্দীদের সাথে দেশের চলমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়েও আলাপ আলোচনা করেন স্বাস্থ্যখাতের এই মাফিয়া।
আবজাল হোসেন ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন।
হাইকোর্টে আফজালের জামিনের আবেদন
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের আলাদা দুই মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহকারী (হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা) আবজাল হোসেনের জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন তার আইনজীবী। গত ৫ অক্টোবর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ জামিন আবেদন জমা দেওয়া হয়। আগামী ১২ অক্টোবর এই মামলায় শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ব্যাপারে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, বৃহস্পতিবার এই মামলায় শুনানি হওয়া কথা রয়েছে।
আবজালের বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তার। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন।