৭ই জানুয়ারি নির্বাচন সামনে রেখে একের পর এক নানা কর্মসুচীতে যাচ্ছে বিএনপি। পরবর্তীতেও একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে ভোটবিরোধী অবস্থানে থাকবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। সবকিছু ঠিক থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই তা ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ কর্মসূচি সফল করতে মাঠ সাজাচ্ছে দলটি। সরকার পদত্যাগের একদফা এবং নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের লক্ষ্যে জনমত তৈরিতে সারা দেশে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এতে সারা দেশে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে দলটি। এ সুযোগে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এখন নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। বাকিদেরও এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায় , কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়িয়েছে বিএনপি। চলমান পরিস্থিতি ঢাকার বিদেশি দূতাবাস ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অবহিত করছে দলটি। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ২৪ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে কারান্তরীণ থাকা অবস্থায় ১০ জনের মৃত্যুর তথ্যসহ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের চলমান অবস্থা সম্পর্কে দূতাবাসগুলোতে সর্বশেষ চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। এছাড়া গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি আজ শেষ হচ্ছে। এদিন ফের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। জানা গেছে, ভোটের আগে টানা কর্মসূচি নিয়ে নেতাদের মধ্যে দুই মত রয়েছে। একটি পক্ষ বলছে, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে যেভাবে সাড়া পড়েছে তাতে আরও কয়েকদিন একই কর্মসূচি দেওয়া হলে আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে তারা ভোটের দিনসহ ৪ অথবা ৫ দিনের টানা ‘অলআউট’ কর্মসূচি চান। অসহযোগের মধ্যে তা হরতাল বা অবরোধ হতে পারে। তাদের যুক্তি, কম সময়ে সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথে নামলে আন্দোলন সফল হবে। বেশি দিন টানা কর্মসূচি থাকলে ধরপাকড় যেমন বাড়বে, তেমন জনগণ তা ভালোভাবে নাও নিতে পারে। আরেকটি পক্ষ, পহেলা জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ বা হরতালের পক্ষে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, একটি আন্দোলনের নানা পর্যায়ে কর্মসূচি বিভিন্ন ধরনের হয়। আমরা সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে হরতাল-অবরোধসহ প্রহসনের নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে গণসংযোগ কর্মসূচি করছি। আমরা যে একটা দুর্বৃত্ত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, সেটা আমরা লিফলেটে জনগণের কাছে তুলে ধরেছি। সাধারণ মানুষ তা মন থেকে গ্রহণ করছেন। এরপর পরিস্থিতিই বলে দেবে, কর্মসূচি কী হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, ভোটারদের ন্যূনতম আগ্রহ না থাকলেও গণতান্ত্রিক বিশ্বকে তথাকথিত ভোটের উৎসব দেখানোর জন্য জনগণের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন শুরু হয়েছে। ভোট না দিলে সাধারণ মানুষকে এলাকা ছাড়া করার ভয় দেখানো হচ্ছে। ভোটের উৎসবের বদলে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা চলছে। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে নামানো হয়েছে ‘আমি আর ডামি’র এই ভোট নাটকে। তবে এসব করে কোনো লাভ হবে না। দেশপ্রেমিক কোনো ভোটার পাতানো নির্বাচনকে জায়েজ করতে ওইদিন ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে সমমনা অন্যান্য দল ও জোটের উদ্যোগেও চলছে ভোট বর্জনের ডাক। ভোটারদের কাছে এই নির্বাচনকে তামাশার নির্বাচন হিসাবে তুলে ধরতে একদিকে যেমন চলছে লিফলেট বিতরণের মতো গণসংযোগ কর্মসূচি, তেমনি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে প্রচারণা। আগামীতে এই কর্মসূচিকে আরও বেগবান করা হবে। সঙ্গে একদফার আন্দোলনকেও কঠোর করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। যেখানে দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ভোটারদের ভোটদানে বিরত রাখার পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনকে বেগবান করতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, লিফলেট ছাড়াও বিএনপি দু-এক দিনের মধ্যে ভোটবিরোধী স্টিকার তৈরি করবে। ওইসব স্টিকার যানবাহন ও বিভিন্ন স্থাপনা এবং হাটে বাজারে লাগানো হবে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোটের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রচার। বিভিন্ন গান তৈরি করে, নিমো তৈরি করে দলের নেতাকর্মীরা এই প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন।