মাগুরা প্রতিনিধি
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার চর-রামচন্দ্রপুর গ্রামের অপূর্ব বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কখনো নিজেকে লোকাল ডিসি, কখনো ডিসির বন্ধু, আবার কখনো ডিসি-এসপি’র সন্তানের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন বলে ভূক্তভোগিরা অভিযোগ করেন।
সরেজমিন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার টিকারবিলা, আড়ুয়াডাঙ্গী, রামচন্দ্রপুর, চর-রামচন্দ্রপুর, কোদলা, রাজাপুর, করন্দী গ্রামে গিয়ে ভূক্তভোগিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চর-রামচন্দ্রপুর গ্রামের কমলেন্দু বিশ্বাসের ছেলে অপূর্ব বিশ্বাস টিকারবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তিন বার এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করেন। পরে তিনি মাগুরাতে গিয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রকল্পের অধীনে চারুকলা প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি নেন। এরপর থেকেই তিনি নিজ এলাকায় নিজেকে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী বলে প্রচার করেন। আর এর প্রভাব খাটিয়ে নানা অপকর্মের সঙ্গে লিপ্ত হন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি সরকারি বরাদ্দের ইজিবাইক এনে দেওয়ার কথা বলে চর-রামচন্দ্রপুর গ্রামের মিলন বৈদ্যের কাছ থেকে ৮০ হাজার ও ইকমান শেখের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেন। একই গ্রামের আকরাম শেখের ছেলে আল আমীনকে ডিসি অফিসের চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা নেন। চন্দ্রকান্ত সরকারের বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন ৫ হাজার ৫০০ শ’। রামচন্দ্রপুর গ্রামের প্রদীপের কাছে জমি বন্ধক রেখে ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিলেও বাকি ৩৫ হাজার টাকা ফেরত না দিয়েই জমি অন্যের কাছে বন্ধক রেখেছেন। একই গ্রামের শহীদের কাছে জমি বিক্রির কথা বলে ৫ হাজার টাকা নিয়ে তাকে আর জমিও দেননি টাকাও ফেরত দেননি। অন্যের পরিচয় পত্র ব্যবহার করে ত্রাণের টিন এনে সেগুলো আর তাদের না দিয়ে নিজেই আত্মসাত করেছেন। এদিকে ১১ পল্লী মহাশ্মশানের জমির নামপত্তনের কথা বলে মূল দলিল নিয়ে সেগুলো আর ফেরত দিচ্ছেন না বলে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি রথীন্দ্র্রনাথ ভৌমিক জানিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের সরকারি ভাতা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অর্ধ-শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে পরিচয় পত্র ও ১ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। আর এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা করে হয়রানি করেন। মামলাবাজ অপূর্ব ইতোমধ্যে এলাকার অর্ধ-শতাধিক লোকের নামে তিনি নানা অজুহাতে কয়েকটি মামলা করেছেন এবং প্রতিটি মামলায়ই তিনি পরাজিত হয়েছেন।
এ বিষয়ে ভূক্তভোগি ইকমান শেখ জানান, অপূর্ব আমার ছোটকালের বন্ধু। আমাকে একটি সরকারি ইজিবাইক এনে দেওয়ার কথা বলে ২০ হাজার টাকা নেয়। এখন ইজিবাইকও দিচ্ছে না, টাকাও দিচ্ছে না। একই কাজে ৮০ হাজার টাকা দেওয়া চর-রামচন্দ্রপুর গ্রামের মিলন বৈদ্যও একই কথা বলেন।
অপূর্ব বিশ্বাসের বিষয়ে জানতে চাইলে আমলসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দিদার হোসেন বলেন, অপূর্বর নামে বেশকিছু অভিযোগ আমার কাছে এসেছে, কিন্ত তাকে না পাওয়ায় কিছু করতে পারছি না। প্রশাসনের কাছে ওর বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য রঞ্জু মেম্বারও অপূর্বর বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অপূর্ব বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, জমিজমা নিয়ে আমার সাথে মামলা চলছে। সে কারণে এলাকার কিছুলোক আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।