৩, ডিসেম্বর, ২০২৪, মঙ্গলবার
     

নারী ক্রিকেটে অধিনায়কের দাপট দেখতে পাচ্ছি না তো? 

নিজস্ব প্রতিনিধি :

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের আসন্ন ওয়ার্ড কাপের জন্য দল ঘোষণা করা হয়েছে গত ১৮ই সেপ্টেম্বর।  এতো বড় একটা টুর্নামেন্টে সিলেকশন বা দল নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার আলোচনা বা সমালোচনার গন্ধ পেলাম না কোনো মিডিয়াতে। কারন পুরুষ ক্রিকেট নিয়ে যেমন মাতামাতি হয়, নারী ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার তেমন কেউ নাই। তাই সেখানে স্বজন প্রীতি হলেও জবাব দেবার ভয় নেই।

বিশ্বকাপ উপলক্ষে এবার যে দল গঠন করা হয়েছে তা একেবারেই পক্ষপাতিত্বমূলক ও একগুঁয়েমি মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। আর এইসবের মুল কারিগর ক্যাপটেন নিগার সুলতানা জ্যোতির অনুপ্রেরণায় হয়েছে বলে ধারণা। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তিনি ক্যাপটেন হবার পর থেকেই চলছে সিনিয়র ছাঁটাই। তোয়াক্কা করছেন না খেলোয়াড়দের কোনো ফর্ম এবং অভিজ্ঞতা।

জুনিয়রদের দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কাজ করানো সহজ হয়, এই চিন্তা ভাবনা নিয়ে এবারের বিশ্বকাপের জন্য দল গঠন করা হয়েছে।। তাঁর খামখেয়ালীতে ইতিমধ্যে দল থেকে ছিটকে গেছে সালমা খাতুন,রুমানা আহমেদ, শুকতারা রহমানদের মতো ফর্মে থাকা খেলোয়াড়েরা।

নিজের মুঠোবন্দি দল নিয়ে ইতিপূর্বে যে খেলাগুলো হয়েছে, সেখানে নিজে ভালো খেললেও দলের সাফল্য শূন্য। কারণ অধিনায়ক জ্যোতির ব্যক্তগত পছন্দের ক্রিকেটাররা চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে দেওয়া যেতে পারে, গত দুইটা সিরিজ আর এশিয়া কাপ। যেখানে সাফল্যের কোনো বালাই নেই।

বিশ্বকাপ উপলক্ষে নির্বাচিত এবারের এই দলের দিকে চাহিলে সেখানে দেখা যায়, ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ জয়ী দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে মাত্র চার জন নারী ক্রিকেটারের স্থান হয়েছে এবারের  টি-২০ ওয়ার্ড কাপে।

জানা যায়, গত এক বছর ধরে টপ অর্ডারে চলছে ব্যাপক পরিবর্তন। প্রায় প্রতি সিরিজেই অধিনায়কের মন মতো বিভিন্ন সিদ্ধান্তসমূহ  পরিবর্তন হচ্ছে। এমনকি, জোর করে অবসরে যাওয়ার জন্য সিনিয়রদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও গুঞ্জন আছে।

পাশাপাশি এমনও শোনা গেল, রুমানা আর সালমা খাতুন অবসরে যেতে চাইলে তাদের জন্য ম্যাচ আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন শিপন। এমন ধরনের প্রস্তাবের কারণে, জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুমানা আহমেদ খুবই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বলে জানা যায়।দ

আমরা জানতে পারি, সর্বশেষ বাংলাদেশ এ নারী দল শ্রীলংকা সফর করে। মুলত আসন্ন ওয়ার্ড কাপের প্রস্তুতি এবং দল নির্বাচনের জন্য শ্রীলংকার মাটিতে শ্রীলংকা এ দলের সাথে ৫ টি টি-২০ ম্যাচ খেলানো হয়। কিন্তু এখানেও বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির গন্ধ পাওয়া গেল।

শ্রীলংকাতে সবাইকে সমান সুযোগ দেয়া হয় নাই বলে শোনা গেল। দলের সিনিয়র, অভিজ্ঞ ও ফর্মে থাকা ওপেনার শামীমা সুলতানাকে মাত্র দুইটা ম্যাচ খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। শামীমা সেই দুটি ম্যাচে যথাক্রমে ৪৮ ও ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন। তাঁর দুটো ইনিংসই ছিল দলের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইনজুরি কাটিয়ে তাঁর এই ফেরাটা ছিল সত্যি অসাধারণ ও দৃষ্টিনন্দন। কিন্তু তাঁকেও সুযোগ দেওয়া  হয়নি ওয়ার্ড কাপের মতো বড় আসরে।

অপর দিকে ৩ থেকে ৫ টা ম্যাচ খেলেও তেমন স্কোর বা সাফল্য না নিয়েও দলে জায়গা পেয়েছেন কেউ কেউ। মুর্শিদা খাতুন গত এক বছর ধরে নিয়মিত ওপেনিং করছেন না। তবুও টিমে টিকে আছেন ওপেনার হিসাবে। এমনকি শ্রীলংকা সফরেও ব্যটিং ওপেন করেননি তিনি। তবে খেলেছেন টপ অর্ডারে। কিন্তু এক ম্যাচেও ছুঁতে পারেননি দুই অংকের ঘর।

আমরা জানতে পারি, শ্রীলংকা যাওয়ার আগে রাজশাহীতে মেয়েদের এনসিএল হয়। সেখানেও নেই মুর্শিদার রান। শুধুমাত্র একটা ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং হেসেছিল। তবে সেখানে সাফল্যের ঝুলি খুবই দূর্বল। তবুও কি কারণে এবারের বিশ্বকাপের দলে আছেন, তার উত্তর খুঁজে বের করা কঠিন।

তাছাড়া, অভিজ্ঞতা আর বড় কোন স্কোর ব্যতিতই দলে জায়গা হয়েছে নতুনদের। অন্যন্য দেশগুলো যেখানে অভিজ্ঞ আর জুনিয়রদের নিয়ে দারুণ কম্বিনেশন টিম সাজিয়েছে বাংলাদেশ সেখানে হাঁটছে উল্টো পথে। ফিটনেসের অজুহাত দিয়ে ছেঁটে ফেলার চেষ্টা চলছে। কিন্তু দলের অনেক জুনিয়রদের ফিটনেস সিনিয়রদের থেকে যে কম, এমন অনুভব করে থাকি। এই সব অনুভবের মধ্যে তীব্র প্রশ্ন জাগে, নারী ক্রিকেটে অধিনায়কের দাপট দেখতে পাচ্ছি না তো?

যদি এখনো সুযোগ থাকে তবে অধিনায়কের ব্যক্তিগত বৈষম্য বাদ দিয়ে দেশ ও দশের স্বার্থে দল পরিবর্তন করা উচিত।

               

সর্বশেষ নিউজ