সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর এই দায়িত্ব পালনকালে গাইবান্ধার ‘ফুলছড়ি হাজী সাত্তার’ ট্রাস্টকে তিনি ‘ডোনেশনের’ নামে কোটি কোটি টাকা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। এ ট্রাস্ট তার বাবা হাজী এম এ সাত্তারের নামে গঠিত। এ ছাড়া তার এলাকার বেশিরভাগ মসজিদ-মাদ্রাসা-মন্দিরে তিনি কোম্পানি কোর্ট থেকে আদেশের মাধ্যমে ডোনেশন (অনুদান) দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। একটি মসজিদে চার দিনের ব্যবধানে ১১ লাখ টাকার ডোনেশন দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানি কোর্টের ডোনেশনের টাকা এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসায় দেওয়ার পেছনে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। কারণ, তার আসন গাইবান্ধা-৫ থেকে তার স্ত্রী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন। এলাকার মানুষের মন জোগাতে এবং নির্বাচনী মাঠে নিজেদের কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখতে কোম্পানি কোর্টকে ব্যবহার করেছেন। তার এসব কর্মকাণ্ড উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের জন্য করা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং বহুমাত্রিক দুর্নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তার বাবার নাম আলহাজ এম এ সাত্তার সরকার এবং মা আসমা সাত্তার। বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ির কালিরবাজার। তিনি ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর থেকে তিনি বেঞ্চের একজন জুনিয়র বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১৭ সালের মে মাসের দিকে তাকে হাইকোর্টের একক কোম্পানি বেঞ্চের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর থেকেই কোম্পানি কোর্ট থেকে ডোনেশনের নামে টাকা বাগিয়ে নিতে শুরু করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাজী ফার্মস লিমিটেড কোম্পানি আইনের ২২৮ ও ২২৯ ধারার অধীনে আত্রাই পোলট্রি লিমিটেডসহ ৪৯টি কোম্পানির হস্তান্তরগ্রহীতা হিসেবে হাইকোর্টে আবেদন করেন। কোম্পানি ম্যাটার নং-১১২/২০২০। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি খুরশীদ অলম সরকার একটি রায় দিয়েছেন। রায়ে আত্রাই পোলট্রি লিমিটেডসহ ৪৯টি কোম্পানির সব সম্পত্তি ও দায়-দেনা স্থানান্তরের আবেদনকারী কাজী ফার্মসের অধীনে দেওয়া হয়। আদেশদানের ১৪ দিনের মধ্যে রায়ের একটি সত্যায়িত অনুলিপি জয়েন স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিয়ে কাজী ফার্মসের নামে নিবন্ধন করতে বলা হয়। তবে এই রায় ও আদেশ কার্যকরে ডোনেশন দেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ডোনেশন হিসেবে ট্রান্সফারি কোম্পানি কাজী ফার্মসকে ২০ লাখ টাকার পে-অর্ডার ‘ফুলছড়ি হাজী সাত্তার ট্রাস্ট’, উপজেলা রোড, কালিরবাজার, ফুলছড়ি গাইবান্ধার অনুকূলে দিতে হবে। এ ট্রাস্ট বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত একটি ট্রাস্ট।
শুধু কাজী ফার্মসের ক্ষেত্রে দেওয়া রায়টিই নয়, এমন শত শত মামলার রায়ে ‘ফুলছড়ি হাজী সাত্তার ট্রাস্ট’কে ডোনেশন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের কোম্পানি বেঞ্চ। এই বিচারপতির কোম্পানি কোর্টের দায়িত্ব পালনের শুরু থেকে দেওয়া সব রায় ও আদেশ বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি। তবে সুপ্রিম কোর্টের আদিম দেওয়ানি শাখায় রক্ষিত ‘রেজিস্ট্রার খাতা’ থেকে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের প্রায় দুইশ মামলার রায় ও আদেশ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, অন্তত ৬৫টি মামলার রায় ও আদেশে ‘ফুলছড়ি হাজী সাত্তার ট্রাস্ট’-এর নামে ডোনেশন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে সর্বনিম্ন ১ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ডোনেশন দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এ ছাড়া বাকি মামলাগুলোতে দেওয়া ডোনেশনের টাকার বেশিরভাগই বিচারপতির নিজ এলাকা ফুলছড়ির বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরে দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকা থেকেই তার স্ত্রী ফারজানা রাব্বী বুবলী গত জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। বিশ্লেষণ করা রায় ও আদেশগুলোর মধ্য থেকে অন্তত ৫টি মামলার রায় ও আদেশের কপি উত্তোলন করা হয়। রেজিস্টার খাতায় উল্লেখিত ডোনেশনের টাকার পরিমাণ সব রায় ও আদেশের কপিতে সঠিক আছে। সব রায় ও আদেশের কপিতে ডোনেশনের টাকা ট্রাস্টের নামে ফুলছড়ির কালিরবাজার জনতা ব্যাংক শাখার ১০২১০১২৭৯৯ নম্বর হিসাবে দিতে বলা হয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোম্পানি ম্যাটার নং-৪৬/২০ মামলায় ৫ লাখ টাকা ডোনেশন নেওয়া হয়েছে ‘ফুলছড়ি হাজী সাত্তার ট্রাস্ট’-এর নামে। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ এমজেএল (মবিল যমুনা লুব্রিক্যান্টস) বাংলাদেশ লিমিটেডকে ৫ লাখ টাকা ডোনেশন দিতে নির্দেশ দেন। ওই আদেশ অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ সুপ্রিম কোর্টের আদিম দেওয়ানি শাখায় ‘ফুলছড়ি হাজী সাত্তার ট্রাস্ট’-এর অনুকূলে টাকা জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র (চেক অথবা পে-অর্ডার) জমা দেওয়া হয়। একইভাবে কোম্পানি ম্যাটার নং-২৭৬২০/১৮ মামলায় ৫ লাখ টাকার ডোনেশন নেওয়া হয়েছে। ‘ফুলছড়ি হাজী সাত্তার ট্রাস্ট’-এর অনুকূলে এই টাকা দেওয়ার প্রমাণপত্র আদিম দেওয়ানি শাখার রেজিস্টার খাতায় ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল এন্ট্রি করা হয়। কোম্পানি ম্যাটার নং-১৪৭/২০১৬ মামলায় ৪ লাখ টাকার ডোনেশন নেওয়া হয়েছে ওই ট্রাস্টের নামে। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই আদিম দেওয়ানি শাখায় ট্রাস্টের অনুকূলে টাকা জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র দাখিল করা হয়েছে। একইভাবে কোম্পানি ম্যাটার নং-৩১২/২০১৮ মামলায় ৫ লাখ, ৩০৯/২০১৭ মামলায় ৩ লাখ, ৪১/২০১৯ মামলায় ৩ লাখ, ১৭৩/২০১৮ মামলায় ৫ লাখ, ৩০৭/২০১৮ মামলায় ৫ লাখ, ১৭২/২০১৮ মামলায় ৪ লাখ, ২২১/২০১৮ মামলায় আড়াই লাখ, ৩৭৫/২০১৫ মামলায় ২ লাখ, ২২৩/২০১৪ মামলায় ২ লাখ, ৩৪৩/২০১৮ মামলায় ২ লাখ টাকা ওই ট্রাস্টের অনুকূলে ডোনেশন হিসেবে নিয়েছেন। ২০১৭ সালে কোম্পানি কোর্টের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট কত টাকা ওই ট্রাস্টের অনুকূলে ডোনেশন হিসেবে নিয়েছেন তার বিস্তারিত বের করা সম্ভব হয়নি।
এই বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলছড়ি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ জামে মসজিদের নামে চার দিনে মোট ১১ লাখ টাকা বিভিন্ন কোম্পানিকে ডোনেশন হিসেবে দিতে আদেশ দিয়েছেন এ বিচারপতি। এর মধ্যে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট এই মসজিদের নামে ১১৩/২০২০ মামলার পক্ষ থেকে ডোনেশন হিসেবে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রমাণপত্র জমা দেওয়া হয়েছে আদিম দেওয়ানি শাখায়। একই বছরের ১৩ আগস্ট ৩৩/২০২০ মামলায় ১ লাখ, ১৮ আগস্ট ৬১/২০২০ মামলায় ২ লাখ, ১৯ আগস্ট ১৫২/২০২০ মামলায় ডোনেশন হিসেবে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার প্রমাণপত্র জমা দেওয়া হয়েছে আদিম দেওয়ানি শাখায়। এই একই মসজিদের নামে ৩৭৬/২০১৮ মামলায় ১০ লাখ টাকা ডোনেশন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। যে টাকা জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আদিম দেওয়ানি শাখার রেজিস্টার খাতায় এন্ট্রি করা হয়। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোম্পানি কোর্টের দায়িত্ব পালনকালে বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার ফুলছড়ি হাজী সাত্তার ট্রাস্ট ছাড়াও বেশিরভাগ ডোনেশনের টাকা ফুলছড়ি এলাকার বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরে দিয়েছেন।
ফুলছড়ির কালিরবাজারে সরেজমিন দেখা যায়, গাবগাছি হাউস নামে একটি বিশাল বাড়ির দ্বিতীয়তলায় জনতা ব্যাংক শাখা অফিস। এই শাখাতেই ফুলছড়ি হাজী সাত্তার ট্রাস্টের নামে খোলা হিসাব নম্বরে ডোনেশনের টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আনুমানিক তিন একর জায়গাজুড়ে করা এই বাড়িটির মালিকও বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার। কালিরবাজারের কোথাও ফুলছড়ি হাজী সাত্তার ট্রাস্টের নামে দৃশ্যমান কোনো সাইনবোর্ড বা অফিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এই ট্রাস্টে বাইরের তেমন কোনো লোকবল নিয়োগ করা হয়নি। বিচারপতির পরিবারের সদস্যরাই ট্রাস্টটি পরিচালনা করেন। এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা-মন্দিরে দান করা হয় এ ট্রাস্টের নামে। এ ট্রাস্ট থেকে একটি ফরম পূরণ করে জমা দেওয়ার পর মসজিদ-মিন্দিরে টাকা যায়। ওই টাকা সরাসরি কোম্পানি কোর্ট থেকে দেওয়া হয় নাকি ট্রাস্টের ফান্ডে যে টাকা ঢুকেছে, সেখান থেকে দেওয়া হয়, স্থানীয়রা সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে পারেননি।
‘যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা’ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, ‘এটা সঠিক হয়নি। এভাবে বাবার নামে করা ট্রাস্টে টাকা দিলে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এটা কেন দিল? ব্যক্তিস্বার্থে এ ধরনের কাজ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে বলে মনে করি।’
হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক এক বিচারপতি বলেন, ‘প্রভিশন আছে, কোম্পানি কোর্টের জরিমানার একটি অংশ মহৎ কাজে ব্যয় করা যাবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করবে। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনো রায়ের অংশ ব্যবহার করা যায় না। বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এটা মিসকনডাক্টের মধ্যে পড়ে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, নিরপেক্ষতা ও সততার সঙ্গে সাধারণ জনগণের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের। বিচারপতিরা শপথ নিয়ে থাকেন অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে তারা কিছুই করবেন না; কিন্তু কোনো বিচারপতি যদি নিজের বাবার নামে ট্রাস্ট খুলে টাকা নিয়ে থাকেন কিংবা তার স্ত্রীর নির্বাচনী কাজে সহযোগিতার জন্য আদালতকে ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে তা দুঃখজনক। এসব কাজের মাধ্যমে তিনি তার অনুরাগ-বিরাগের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করার যে শপথ নিয়ে থাকেন, তা থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। এসব কর্মকাণ্ড সামাজিকভাবেও দৃষ্টিকটূ। ন্যায়দণ্ড যিনি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিয়েছেন, তিনি সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখবেন—এটাই সবার প্রত্যাশা থাকে; কিন্তু তিনি তার পরিবার কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থ আছে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানকে বিচারিক সুবিধা দিয়ে ন্যায় বিচারের পরিপন্থি কাজ করেছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা একটি বহুমাত্রিক দুর্নীতি ও বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার। তিনি বলেন, বিচার বিভাগে দলীয়করণ হয়েছে। এ কারণে দুর্নীতিও হয়েছে। এগুলো সবারই জানা; কিন্তু এ ধরনের বহুমাত্রিক দুর্নীতির ঘটনা বিরল। একদিকে দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে ওই বিচারপতি ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি করেছেন। আবার একই ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনীতিতে সুবিধা নেওয়ার আশায় বিচারিক আদেশের মাধ্যমে তার এলাকার বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরে দান করেছেন। আমি আশা করব, প্রধান বিচারপতি অনতিবিলম্বে এই বিচারপতিকে বিচারের আওতায় আনবেন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে নজির স্থাপন করবেন। যাতে করে বিচার বিভাগে এ ধরনের বহুমাত্রিক দুর্নীতি আর না হয়। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনই বন্ধ পাওয়া গেছে।
‘আচরণবিধিতে যা বলা আছে’ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের জন্য ৩৯ দফার আচরণবিধি চূড়ান্ত করে দেন আপিল বিভাগ। ২০১৭ সালের ২ আগস্ট তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির রায়ে এসব আচরণবিধি উল্লেখ করা হয়। এই আচরণবিধিতে বিচারকদের পেশাদারিত্ব ও নৈতিক মানদণ্ড কেমন হবে, কোন কোন বিষয়ে তারা সচেতন থাকবেন, কোন ধরনের আচরণ পরিহার তাদের করতে হবে, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে কোন কোন বিষয়ে তাদের সতর্ক থাকতে হবে—এসবের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই রায়ে। রায়টি এখনো বহাল রয়েছে।
ওই রায়ে দেওয়া আচরণবিধির ১৫ নম্বর ধারায় বলা হয়, দেশ-বিদেশের কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনো বিচারক জড়িত থাকতে পারবেন না। ২১ ধারায় বলা হয়, একজন বিচারক জনবিতর্কে অংশ নিতে পারবেন না। প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক বিতর্কেও অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি বিচার বিভাগে মুলতবি রয়েছে, এমন কোনো বিষয়েও বিতর্কে জড়াতে পারবেন না। ২৫ নম্বর ধারায় বলা হয়, একজন বিচারককে তার আচরণ ও কাজ দিয়ে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।
২৯ নম্বর ধারায় বলা হয়, বিচারকের পরিবারের কোনো সদস্য যদি কোনো মামলার কোনো পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন, তা হলে ওই বিষয়ে বিচারক অংশ নিতে পারবেন না। ৩০ নম্বর ধারায় বলা হয়, আইন পেশায় জড়িত রয়েছেন এবং মক্কেলকে আইনি সহযোগিতা দেন, এমন কোনো ব্যক্তিকে বিচারক তার বাসস্থানে স্থান দেবেন না। ৩১ নম্বর ধারায় বলা হয়, একজন বিচারক তার পরিবারের কোনো সদস্যকে এমন কোনো সামাজিক বা অন্য কোনো সম্পর্কে জড়াতে দেবেন না, যা তার আদালতের কোনো বিষয়কে প্রভাবিত করতে পারে। ৩২ নম্বর ধারায় বলা হয়, একজন বিচারক কারও সম্পদ ব্যবহার করতে পারবেন না বা এমন কারও কাছ থেকে ঋণ নিতে পারবেন না, যার দ্বারা বিচারকাজে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরিবারের সদস্যদেরও এমন কাজ থেকে বিরত রাখবেন। ৩৪ নম্বর ধারায় বলা আছে, বিচারক বা বিচারকের পরিবারের সদস্যরা বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো উপহার চাইবেন না, কোনো উপহার বা ঋণ নেবেন না।- কালবেলা