২৬, ডিসেম্বর, ২০২৪, বৃহস্পতিবার
     

কূটনীতিতে সফল বাজারে অস্বস্তি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পূর্তি হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। সরকার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্র ও প্রশাসন মেরামতে এরই মধ্যে ৬টি কমিশন গঠন করেছে। কমিশনগুলো শিগগির তাদের কাজ শুরু করবে। ইউনূস দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ব পরিমণ্ডলে তার যে পরিচিতি ও সুনাম রয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে তার ডাকে সাড়া দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, পাকিস্তানসহ বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বহু দেশ। এসব দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা ইউনূসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এটিকে কূটনীতিতে সরকারের বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তবে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে এখনো দৃশ্যমান সফলতা দেখাতে পারছে না সরকার। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সরকারও এ নিয়ে বিপাকে রয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. এম হুমায়ুন কবির কালবেলাকে বলেন, দুই মাস খুব বেশি সময় নয়। গত ১৫ বছরে আমরা যে অবস্থায় ছিলাম, সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, গত জুলাই-আগস্টে যে নৃশংসতা দেখেছি, সে প্রেক্ষাপটে দুই মাসে এই সরকারকে বেশ ইতিবাচক অবস্থানেই রাখব। এটা স্বাভাবিক সময়ের দুই মাস নয়। সেই আলোকে দেখলে গত সরকারের রেখে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ থেকে দাঁড়ানোটাই ছিল এই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে চেষ্টা করছে।

বাজারের আগুনে পুড়ছে মানুষ:

বড় কিছু পদক্ষেপ নিয়ে সরকার তার সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারলেও দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সাধারণ মানুষের মন অর্জন করতে পারছে না। কারণ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। সরকারের কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। এ নিয়ে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। সরকারের উপদেষ্টারাও বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা স্বীকার করছেন। যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, অনেক পণ্য ডিউটি ফ্রি করার পরও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। এজন্য বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুতই মাঠে নামবে টাস্কফোর্স।

একজন বাজার বিশ্লেষক বলেন, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। গত সরকারের আমলে বাজারের অস্থিরতার জন্য আমরা বিভিন্ন সিন্ডিকেটকে দোষ দিতাম। অথচ গত দুই মাসে এ জায়গাটায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাজারের কাঠামো মোটামুটি আগের মতোই আছে। যেহেতু এখন কোনো সিন্ডিকেট থাকার কথা নয়, সেহেতু এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা একটু বেশি। সেই প্রত্যাশার জায়গায় সরকার যথেষ্ট দক্ষতা দেখাতে পারেনি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না:

শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ভালোভাবে কাজ করছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সরকারের তরফ থেকে বারবার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর বিগত সরকারের অনুসারী পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা সরকারকে সহযোগিতা করছেন না। তারা সক্রিয়ভাবে মাঠে নামছেন না। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানোর পর পরিস্থিতি দিন দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ এসেছে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্যে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুর মোহাম্মদ কালবেলাকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে যায়নি। তবে দিন দিন উন্নত হচ্ছে। আরও এক-দুই মাসের মধ্যে তা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে চলে আসবে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে দায়িত্ব নেয়নি। একটা বিক্ষোভ-বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এসেছে। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না। যারা নিরাপত্তা দেবে, আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখবে সেই পুলিশ বাহিনীই বেশি আক্রান্ত হয়েছে। পুলিশের গাড়ি, থানাসহ নানা লজিস্টিক সাপোর্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে জনবল ও মনোবলে একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে। এখনো পুলিশের মধ্যে একটা ভয় রয়েছে। তাই সবকিছু পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সময় দিতে হবে।

বিশৃঙ্খল জনপ্রশাসন :

দুই মাসেও শৃঙ্খলা ফেরেনি নতুন সরকারের প্রশাসনে। অস্থিরতা ও বিতর্কও পিছু হটছে না। বিশেষ করে ডিসি নিয়োগ নিয়ে নানা মহা কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগের পর কয়েকজন ডিসির পদায়ন বাতিল হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগ দিয়ে তা আবার বাতিলেরও একাধিক ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনে বিশৃঙ্খলার পেছনে হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট আমলাদের মদদ রয়েছে বলে ধারণা করছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সরকারও নড়েচড়ে বসেছে। বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কোনো কর্মকর্তাকে আর গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পদায়ন করবে না সরকার।

এদিকে মোটাদাগে কিছু ব্যর্থতা থাকলেও কূটনীতি ও অর্থনীতির গতি ফেরাতে সরকারের নানা পদক্ষেপ বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। সফলতার এ ধারা অব্যাহত থাকলেও সরকারের প্রতি মানুষের সমর্থন আরও বাড়বে।

কূটনীতিতে সাফল্যের বার্তা :

বিশ্লেষকরা বলেন, জাতিসংঘের সব প্রথা ভেঙে দিয়ে সাধারণ অধিবেশন চলাকালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বাইডেনের বৈঠকের পর বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলোও ইউনূসের প্রতি তাদের সমর্থন ও সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন। বিশ্বনেতাদের এমন আগ্রহের পেছনে মূলত ড. ইউনূসের ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা রয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে সংগঠিত বর্বরোচিত গণহত্যার কথা শুনেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধানরাও বাংলাদেশের উন্নয়নে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। মূলত নোবেলজয়ী প্রফেসরের সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ কূটনৈতিক সফলতা দেখাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. এম হুমায়ুন কবির বলেন, ভারত ছাড়া বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নয়নের জায়গাতে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। এটার অন্যতম কারণ বাংলাদেশের এই পরিবর্তন পুরো বিশ্ব ইতিবাচকভাবে দেখছে। এই সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা যে ইতিবাচক তার একটা অনুমোদনও মোটামুটি মিলেছে।

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন একটি বহুপক্ষীয় আলোচনার জায়গা। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গেলেন, সেখানে বহুপক্ষীয় আলোচনার চেয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বেশি হয়েছে। সেটা আমাদের জন্য ইতিবাচক। পুরো পৃথিবীর কাছে এবার বাংলাদেশ বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি নজর কেড়েছে। এটা এককভাবেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও পরিচিতির কারণে সম্ভব হয়েছে। এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও উন্নত করতে সহায়ক হয়েছে।

রাষ্ট্র সংস্কারে ৬ কমিশন :

অন্তর্বর্তী সরকারের একমাস পূর্তি উপলক্ষে গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ তুলে ধরেন। এ জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করার কথা জানান তিনি। এরই মধ্যে পাঁচটি কমিশনের পূর্ণাঙ্গভাবে গঠন করে গেজেট জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

ড. ইউনূস বলেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অপরিহার্য। সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু করতে চায় তার সরকার। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বা পরিবার বা কোনো গোষ্ঠীর কাছে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আশঙ্কা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা আমরা ভাবছি। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জনমালিকানাভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত চারটি প্রতিষ্ঠান সংস্কার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন। এসব কমিশনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছে।

আর্থিক খাতে স্বস্তি ফিরছে :

রাষ্ট্র চিন্তকদের ভাষ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাসে সবচেয়ে বেশি সংস্কার হয়েছে আর্থিক খাতে। রিজার্ভ বাড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ বেশ কয়েকটি দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে ঋণের আশ্বাস পেয়েছে বাংলাদেশ। এসব ঋণ ছাড় হলে রিজার্ভ বাড়বে। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তনের পর রেমিট্যান্সও অব্যাহতভাবে বাড়ছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর দুই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৬২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। অক্টোবরে সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর হিসেবে আহসান এইচ মনসুর ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছেন। তিনি এরই মধ্যে নানা কাজের মাধ্যমে সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

এদিকে সরকারের দুই মাসে বাংলাদেশকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ প্রায় সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ড. ইউনূস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গার বৈঠকে বাংলাদেশকে সংস্কারে খরচের জন্য সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলার দেবে একেবারে নতুন ঋণ হিসেবে আর বাকি দেড় বিলিয়ন ডলার দেবে আগের প্রকল্পগুলো চালিয়ে নেওয়ার অংশ হিসেবে। মোটাদাগে সরকার এই অর্থ ডিজিটাইজেশন, তারল্য সহায়তা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং পরিবহনে খরচ করতে পারবে।

আর আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েবার সঙ্গে করা বৈঠকেও এসেছে নতুন ঋণের আশ্বাস। এমন একসময় ড. ইউনূস আইএমএফপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যখন ঋণ দেওয়ার জন্য সংস্থাটির একটি মিশন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এরই মধ্যে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে আইএমএফ। এর পরও সংস্থাটি ড. ইউনূসের নেতৃত্বের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আরও ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চায়। আইএমএফ মনে করে, একটি বিশেষ সময়ে ক্ষমতায় আসা নতুন সরকার অনেক খাতে সংস্কার করবে। এ জন্য তারা পাশে থাকতে চায়। এ অর্থ বাজেট সহায়তা হিসেবে সরকার খরচ করতে পারবে।

আগামী তিন বছরে একটা প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশকে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে আইএসডিবি। এ ছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এডিবি। সংস্থাটি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি খাতে সংস্কারের জন্য দেবে ৫০ কোটি ডলার। এটা পাওয়া যাবে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে। এর বাইরে জ্বালানি খাতের উন্নয়নেও এডিবির কাছে ১০০ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটি চলমান প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলারের বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। সব মিলিয়ে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ১ হাজার ৩৬০ কোটি বা সাড়ে ১৩ বিলিয়নের বেশি ঋণ সহায়তা পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মঈনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, দেশের আর্থিক খাতের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। বিগত সরকারের সময়ে লাখ লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। এমন বাস্তবতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আর্তিক খাতের স্থিতিশীলতা ফেরাতে যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, সেগুলো অবশ্যই ইতিবাচক। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেভাবে তারা এগুচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে তারা পারবে। তিনি বলেন, এসব সংস্কার কাজ বেশ সময়ের ব্যাপার। এটা এক বছরের মধ্যে শেষ হবে না। তবে আর্থিক খাতকে একটা স্বাস্থ্যকর জায়গায় নিয়ে আসার জন্য যত সময় লাগুক না কেন, সেটা তাদের দিতে হবে। যারা নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে তারা লুটপাট করার জন্যই এই চাপ দিচ্ছে। এতে কোনো লাভ হবে না।

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর :

আনুষ্ঠানিকভাবে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। গত ২৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেন। ফলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পথে তার অঙ্গীকার পূরণের পথে হাঁটছে। সরকারের এমন পদক্ষেপ নাগরিকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক মাইলফলক।

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনটি ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে গৃহীত হয়েছিল। তবে এতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। অনেক বছর ধরে বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ রয়েছে। গুম হওয়া স্বজনদের নিয়ে গঠিত ‘মায়ের ডাক’সহ তাদের একাধিক সংগঠন এ কনভেনশনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও শেখ হাসিনার সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. এম হুমায়ুন কবির বলেন, জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের অনুরোধের পরও শেখ হাসিনা গুমবিরোধী সনদে সই করেননি। সেই প্রেক্ষাপটে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটার জন্য সরকার সাধুবাদ প্রাপ্য। শুধু বিরুদ্ধ মতের জন্য পৃথিবীর কোনো সমাজেই আইনের সুযোগ না দিয়ে আপনি তাকে গুম করে ফেলতে পারেন না। এটা জীবন নিয়ে খেলা করার মতো। এক্ষেত্রে সরকার একটি সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে।

ভিসি নিয়োগে প্রশংসা কুড়াচ্ছে সরকার:

দলীয় লেজুড়বৃত্তির বাইরে গিয়ে প্রশাসনিক দক্ষতা ও একাডেমিক যোগ্যতার ভিত্তিতে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বরেণ্য শিক্ষাবিদদের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেও একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদকে চেয়ারম্যান পদে বসিয়েছে সরকার। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে সরকার কোনো আপস করবে না বলে বিভিন্ন ফোরামে তারা বলছে।- কালবেলা

               

সর্বশেষ নিউজ