প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসমর্থিত সূত্রে কেউ কেউ দাবি করছিলেন যে বাংলাদেশের পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু গতকাল বাংলাদেশের একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলের অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, শেখ হাসিনা ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন। ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয়, দেশটির আজমাইন শহরে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরব আমিরাতের এই শহরে নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ব্যক্তিগত একটি বাড়ি আছে বলে জানা যায়। হাসিনা সেখানেই উঠেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংবাদে আরো দাবি করা হয়, শেখ হাসিনা ভারত ছেড়েছেন বলে কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে। কোন প্রেক্ষাপটে এবং কী শর্তে শেষমেশ আরব আমিরাত আজমাইন শহরে শেখ হাসিনাকে আশ্রয়ের অনুমতি দিয়েছে সে সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কোনো মিডিয়া।
ভারতের কোনো মিডিয়াও এ নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ করেনি। এর আগে ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে যেতে পারেন হাসিনা-এ ধরনের খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রচার করলেও সত্যি হাসিনা ভারত ছেড়েছেন কি না সে ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ রয়েছে তারা। ফলে হাসিনার ভারত ছেড়ে যাওয়ার খবর আসলে গুঞ্জন কিংবা গুজব কি না তা নিশ্চিত করা যায়নি। এ ধরনের খবর প্রকাশ করে এসএস টিভির ইউটিউব চ্যানেল, আইবি টিভি, ইউএসএ, জাতীয় দৈনিক কালবেলা, ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ, নাগরিক টিভি, দি ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন মিডিয়া। তবে কোনো মিডিয়াই নিশ্চিত কোনো সূত্র উল্লেখ করতে সমর্থ হয়নি। এ দিকে ঢাকার একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র জানিয়েছে, নয়াদিল্লি থেকে ঢাকাকে এর মধ্যে জানানো হয়েছে যে, শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় নেবেন যেকোনো সময়। দিল্লির কর্তারা ঢাকার সাথে সম্পর্কোন্নয়নের পথে হাসিনার ভারত অবস্থানকে বাধা বলে মনে করছেন। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতার সাথে শেখ হাসিনার কথোপকথন ফাঁস করা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি হয়। এর একটিতে তিনি টুপ করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বেন বলেও উল্লেখ করেন। আরেকটিতে তাকে অন্তর্ঘাতী কাজকে উসকে দিতে শোনা যায়।
এর আগে শামীম ওসমানকে দিল্লিতে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ায় দেখা যায়। সেই ছবিও গণমাধ্যমে আসে। এর কিছুদিন পর দুবাইয়ের একটি শপিংমলে দেখা মেলে তার। সেখান থেকে ধারণা পাওয়া যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতেই অবস্থান করছেন শামীম ওসমান।
দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামল ফেলে মাত্র ৪৫ মিনিটের নোটিশে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্টের সেই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এত দিন ভারতেই অবস্থান করছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়ায় ভারতে থাকার বিষয়টি নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়।
এরপর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে ভারত থেকে তিনি অন্য কোনো দেশে পাড়ি জমাতে পারেন। তবে ইউরোপ নাকি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে যাবেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। এ নিয়ে ভারত সরকারও স্পষ্ট করে কিছুই জানায়নি।
শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে মোদি সরকারকে দেশের ভেতরে-বাইরে যথেষ্ট চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলেও ভারত সরকারকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে বেশ কিছু গণমাধ্যম জানায়। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে জানতে চাওয়া হয় হাসিনা কোন প্রটোকলে ভারতে অবস্থান করছেন।
এদিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে শতাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। ফলে ড. ইউনূসের সরকার চায়, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে।