গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রতারণার মাধ্যমে বাড়িসহ এক প্রবাসীর
প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেয়ে এবং মেয়ে জামাইয়ের বিরুদ্ধে। সব হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারটির বর্তমানে পথে বসার উপক্রম। নিজের সম্পত্তি ফিরে পেতে বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তিনি।সেই মামলায় প্রতারক মেয়ে ও মেয়ে জামাইকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
ঘটনাটি ঘটেছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের শান্তিনগর গ্রামে। ভুক্তভোগী প্রবাসীর নাম গিয়াস উদ্দিন। খবর নিয়ে জানা যায়, তার মেয়ে মৌরিন আফরিন রানী ও তার স্বামী মাহবুব আলম মনির তার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বাড়ির সহ প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন। জমি কিনার নামে ৩২ লক্ষ, সেই জমিতে বিল্ডিং করার জন্য ৭০ লক্ষ এবং বিভিন্ন সময় পাঠানো আরো ৭৩ লক্ষ টাকাসহ মোট ১কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সরেজমিনে শনিবার (০৯ নভেম্বর) সকালে বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের শান্তিনগর গ্রামে গিয়ে ভুক্তভোগী গিয়াস উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাসিন্দা ছিলাম। গত কয়েক বছর আগে আমার মেয়ে মৌরিন আফরিন রানীকে বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের কাজিরগাঁও গ্রামের মাহফুজ মিয়ার ছেলে মাহবুব আলম মনিরের সাথে বিয়ে দেই। বিয়ের পর মনির আমাদের এই এলাকায় জমি কেনার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলেন। তার কথায় বালুয়াকান্দি মৌজায় আরএস ৫১নং দাগে ১০ শতাংশ জমি কিনতে রাজি হই আমরা। আমার স্ত্রী আমেনা বেগমের নামে জমি রেজিস্ট্র করার কথা বলে ৩২ লক্ষ টাকা দেওয়া হলেও কৌশলে জমি রেজিস্ট্রি করা হয় আমার মেয়ে মৌরিন আফরিন রানীর নামে। সে জমিতে বিল্ডিং নির্মাণের খরচ বাবাদ আরো ৭০ লক্ষ টাকা আমরা তাকে দেই। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আমার মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের একাউন্টে আমরা আরো ৭৩ লক্ষ টাকা পাঠাই। ২০১৮ সালে দেশে আসার পরে জানতে পারলাম আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমাদের মিথ্যা বলে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে মেয়ের নামে। এখন মেয়ে এবং মেয়ের জামাই আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে। সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে আমাদের এলাকাছাড়া করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আমি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং থানা পুলিশকে জানিয়েছিলাম কোন লাভ হয়নি তাই বাধ্য হয়ে কোর্টে মামলা করেছি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, ‘আমি জমিটির বায়না দিয়ে বিদেশ চলে গিয়েছিলাম। বাকি টাকা পাঠানোর পর আমাকে জানানো হয়েছিল জমিটি আমার নামে কেনা হয়েছে। সে জমিতে আমাদের জন্য বিল্ডিং করা হচ্ছে এখন দেখছি আমরা প্রতারিত হয়েছি। আমার স্বামী,আমি, আমার দুই ছেলের প্রবাস জীবনের সকল ইনকামের টাকা এখানে রয়েছে। নিজের মেয়ে এবং মেয়ে জামাইয়ের মাধ্যমে আমরা এভাবে প্রতারিত হবো সেটা চিন্তাও করতে পারিনি। আমাদের এখন আর কিছু নেই, আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাধ্য হয়ে সম্পত্তি ফিরে পেতে আমরা কোর্টে মামলা করেছি। টাকা পাঠানোর সকল প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আমরা সেগুলো আদালতে জমা দিয়েছি’।
স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল প্রধান বলেন, আমরা যতটুকু জানি এই জায়গা কিনতে এবং বাড়ি নির্মাণের সকল খরচ দিয়েছেন সৌদি আরব প্রবাসী গিয়াস উদ্দিন। তার মেয়ে এবং মেয়ের জামাই প্রতারণার মাধ্যমে তার কাছ থেকে বাড়িসহ জায়গাটি হাতিয়ে নিয়েছে। ঘটনাটি যা ঘটেছে তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। নিজের মেয়ে যদি বাবার সাথে এরকম প্রতারণা করে তাহলে মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে?
স্থানীয় বাসিন্দা তমিজা খাতুন বলেন, ‘একটা মানুষের ৩০ বছরের প্রবাস জীবনের ইনকাম আরেকজন হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা যারা প্রতিবেশী বিষয়টি জানার পর আমরা অবাক হয়েছি। এই শোকে তিনি স্ট্রোক করে এখন শয্যাশায়ী। অসহায় এই লোকটির প্রতি আমাদের মায়া হয়। শুনেছি আদালতে মামলা হয়েছে দেখি সেখান থেকে কি রায় আসে’।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত মেয়ের জামাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য জানতে তার বাড়িতে যাওয়া হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
বিষয়টি সম্পর্কে বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত রয়েছি। ভুক্তভোগীর মেয়ে তার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। আমরা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম তবে কাজ হয়নি। শুনেছি বিষয়টি নিয়ে কোর্টে মামলা হয়েছে’।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বিষয়ে আমরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫নং আমলী আদালত, মুন্সীগঞ্জে একটি মামলা দায়ের করি। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। গত ৩১শে অক্টোবর আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি আমি জানলাম। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বেশ কিছুদিন আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।