মোহন মোড়ল, শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) শ্রীনগরে সিংগাপুর প্রবাসী রমজান মুন্সী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শ্রীনগর খাল থেকে হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ৪দিন পর ঢাকার কদমতলীসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী ওয়াসিম খানসহ (৩৬), শাহিন (২২) ও রনিকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গত ২৫ নভেম্বর সোমবার রমজান মুন্সী জমি রেজিস্ট্রি করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। রমজান মুন্সী শ্রীনগর উপজেলার গাদিঘাট গ্রামের মাজেরহাটির সিরাজুল ইসলাম খোকা মুন্সীর ছেলে।
দেউলভোগ ব্রিজের পাশে তার রমজান মুন্সী ক্রয়কৃত জায়গায় বহুতল ভবণ নির্মানের প্রস্তুতি শুরু করেন। এ সময় তার প্লটের পাশের মালিক মুক্তার মাঝির ছেলে ইভান জায়গা দাবী করে লোকজন নিয়ে কয়েকবার বাঁধা দেয়। রমজানের পূর্ব পরিচিত দেউলভোগ এলাকার কানু খানের ছেলে ওয়াসিমসহ কয়েকজন মিলে বিষয়টি দশ লাখ টাকায় মিমাংসা করে দেয়। রমজান মুন্সী দশ লাখ টাকা ইভানকে দিলে সে না দাবী দলিল করে দিবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
গত ২৪ নভেম্বর রাত ১০ টার দিকে ওয়াসিম ফোন করে পরদিন সকালে রমজান মুন্সীকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে বলে দেউলভোগ আসতে বলে। ওয়াসিমের নানা বাড়ী রমজান মুন্সীর পাশের বাড়ি হওয়ায় ছোট বেলা থেকেই তাদের সখ্যতা ছিল। এ কারণে ওয়াসিমের উপর ভরসা করে রমজান মুন্সী ২৫ নভেম্বর বেলা ১১ টার দিকে দেউলভোগ মোড়ে ওয়াসিমদের বিল্ডিংয়ের সামনে আসে। রমজান মুন্সীকে এ সময় ওয়াসিম দেউলভোগ বাজারে তার মালিকানাধীন অটোগ্যারেজে (সাবেক কেন্দ্রীয় সমবায় ভবণ) নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে রমজানের কাছে টাকা দাবী করে। রমজান মুন্সী টাকা দিতে অস্বীকার করে জোরে কথা বলা শুরু করলে ওয়াসিম রৌদ্রমুর্তি ধারণ করে। পরে তার গ্যারেজের ম্যানেজার শাহিন, অটোচালক রণি ও রিয়াজসহ তাকে বেঁধে ফেলে এবং মুখে কসটেপ লাগিয়ে দেয়। পরে ওয়াসিম তার সহযোগীদের সহায়তায় গলায় রশি পেচিয়ে হত্যা করে।
রাত ৩টার দিকে রমজানের কোন সারা শব্দ না পেয়ে ওয়াসিমকে খবর দেওয়া হয়। ওয়াসিম এসে দেখে রমজান মারা গেছে। পরে সেখান থেকে রমজানের লাশ বস্তায় ভরে পাশের খালের একটি নৌকায় উঠানো হয়। নৌকা নিয়ে রওনা হলে উপজেলা পরিষদের পাশের ব্রিজের কাছে এসে তা ডুবে যায়। এ সময় লাশ রেখেই তারা তীরে উঠে এসে যে যার মতো চলে যায়। গত ২৭ নভেম্বর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রমজান মুন্সীর লাশটি শ্রীনগর উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় ৫শ’ গজ উত্তরে খালে শিমুল তলা নামক স্থানে ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।
গত ২৯ নভেম্বর রমজান মুন্সীর স্ত্রী নাজমা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে শ্রীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তকারী অফিসার শ্রীনগর থানার এসআই হালিম মো. তারেক অভিযান চালিয়ে ঢাকার কদমতলী এলাকা থেকে ওয়াসিমকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলার হরপাড়া থেকে শাহিন ও দেউলভোগ এলাকা থেকে রনিকে গ্রেফতার করা হয়।
শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কাইয়ূম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পুলিশ দ্রততম সময়ে রমজান মুন্সী হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করে রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। তাদেরকে মুন্সীগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।