২১, ডিসেম্বর, ২০২৪, শনিবার
     

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিবরামপুর নৌকার হাট

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান, শ্রীনগর উপজেলা ও ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাড়ৈখালী ইউনিয়নে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই হাটের অবস্থান। হাটে নানা বয়সী মানুষের ভিড়। কেউ ক্রেতা, কেউ বিক্রেতা, কেউবা দর্শনার্থী। দোকানে দোকানে বাহারি পণ্যের সমাহার। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই ব্যস্ত। নির্ধারিত সময়ে কেনাবেচা, ঘোরাঘুরি সব শেষ করতে হবে। এক সময়ে বাংলাদেশের সেরা বেচাকেনার হাটের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম । এখানে এক সময় কোটি কোটি টাকার লুঙ্গি ও সুতা পাইকারী বিক্রি হত । সে লুঙ্গি ও সুতা দেশের বিভিন্ন হাট বাজার ও স্থানীয় দোকানে বিক্রি হত । তিন উপজেলার মানুষেরা এই হাটের উপর নির্ভরশীল ছিল । এ হাটে লুঙ্গি,সুতা, মনোহরী মালসহ নিত্যনৈমত্তিক ব্যবহারের সকল মালই বিক্রি হত । কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শতবর্ষী এ হাটটি । বেচাকেনা কমে গেলেও সারা বছর কাঠ ও বর্ষা মৌসুমে নৌকা বিক্রির হিড়িক পড়ে এ হাটে । এ হাটের আশে পাশে নিচু এলাকা হওয়ায় ব্যাপক নৌকা বিক্রি হয় এ হাটে । মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা জেলার প্রায় অঞ্চলেই টিনের ঘর ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃতভাবে তোলে থাকেন মানুষ তাই কাঠের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এ অঞ্চলে । বরিশালের ব্যবসায়ীরা এ হাটে অনেক কাঠ বিক্রি করে থাকেন ।
প্রতি শনিবার মিলে এ হাট । অন্যান্য পণ্যের মতো কোষা নৌকার প্রসরা বসে এ হাটে। আড়িয়াল বিল কেন্দ্রিক গ্রামীণ জনপদে বর্ষাকালে এই নৌকার প্রচলন যুগ যুগান্তরের। ১৯ আগস্ট শনিবার প্রখর রোদের মধ্যেও হাটের ক্রেতা বিক্রেতাদের সমাগম ছিলো চোখে পড়ারর মত। দর কষাকষির মধ্য দিয়ে চলে নৌকা বেচাকেনা। নৌকা কিনে কেউ কেউ ভ্যান বা পিকআপে নিয়ে যায় আরও কেউ কেউ চালিয়ে নিয়ে যায় ।
বিক্রেতারা জানান, এবার বর্ষায় পানি তেমন না হওয়ায় নৌকার চাহিদা কম। নৌকার দামও অনেক কম। ২ থেকে ৪ হাজার টাকায় চাম্বল,কড়ই কাঠের কোষা নৌকা বিক্রি হয় শিবরামপুর হাটে। শান্ত জলে ও টানে নৌকার বেচাকেনা হয়।একের পর-এক নৌকা আসছে আর যাচ্ছে। এ হাটে সবজি, ফল, ধান, চাল, ডাল এবং বিভিন্ন জাতের কবুতরসহ নানান পণ্য নিয়ে ঘাটে আসছেন দূর-দূরান্তের মানুষজন। তবে হাটের কিছু উন্নয়নকাজ জরুরি, বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
সরেজমিন হাটে ঘুরে দেখা গেছে, যে স্থানে হাট, তার আশপাশটা অনেক সুন্দর। নৌপথ ও স্থল পথের মিলনস্থল এ হাট । গাছগাছালিতে ভরা। হাটের সময় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা।
হাটে প্রায় শতাধিক দোকান আছে। দোকানিরা যাঁর যাঁর দোকানে বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। এসব পণ্যের মধ্যে হাটে আসা লোকেরা মিষ্টি ও ভাজি দিয়ে থাপড়ানো রুট খুব মজা করে খায় । স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য, সবজি, প্লাস্টিকের সামগ্রী, কাঠের আসবাব, হাঁড়িপাতিল, পান-সুপারি, বিস্কুট, কোমল পানীয়, ফল, নানা জাতের মসলা, শিশুখাদ্য, খেলনা, কাপড়চোপড়, জুতা, ছাতা ও প্রসাধনসামগ্রী বিক্রি করতে দেখা গেছে। প্রতিটি দোকানের সামনেই মানুষের ভিড়। নির্ধারিত দোকানের বাইরে হাটের ভেতরেই খোলা জায়গায় হাঁস, মুরগি ও মাছ বিক্রি করতে দেখা গেল কয়েকজনকে।
হাট এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আঃ হালিম খান বলেন, শতবর্ষী এ হাটে ছোট বেলায় বাবার সাথে আসতাম হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে বাবা তার হাতের সাথে আমার হাত গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতেন । এ হাটের থাপড়ানো রুটি মিষ্টি দিয়ে থেতাম । কোথায় হারিয়ে গেল সেই রমরমা হাটের দৃশ্য । কোটি কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হত এ হাটে । হাটের জমির সীমানাও দিন দিন কমে আসছে ।
চিত্রকোট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামসুল হুদা বাবুল বলেন, ঐতিহ্যবাহী হাটটির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সকলস্তরের মানুষসহ তিন উপজেলার প্রশাসনের সহযোগীতা দরকার । এ হাটে আসি হৃদয়ের টানে এখানে আসিলে অনেকের সাথে দেখা হয় ।
এ হাটের কাঠ ব্যবসায়ী বরিশালের লুৎফর রহমান জানান, সব মিলিয়ে বেচাবিক্রি মন্দ না। দিন দিন বাজার জমছে কাঠের হাট । প্রশাসেনর নিকট অনুরোধ যেন এ হাটে সমস্যা সমাধানের জন্য পুলিশ মোতায়ন করা হয় ।

হাটে আসার রাস্তা সরু বলেও জানান ব্যবসায়ী ও হাটে আসা অনেক ক্রেতা । মানুষের চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে বলে জানান কয়েকজন। অনেক জ্যাম পড়ে যায় তাই হাট চলাকালীন সময়ে ট্রাফিক পুলিশের জন্য দাবী জানান ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলছিলেন, হাটের রাস্তা ও ভেতরে ক্রেতাদের চলাফেরার সুবিধার জন্য কিছু অংশ পাকা করা কিংবা ইট বিছিয়ে দেওয়া জরুরি। হাটের উন্নয়ন হলে এলাকার মানুষই উপকৃত হবেন।
স্থানীয় শিক্ষক রবিউল আউয়াল বলেছিলেন, এ হাট আগের মত জমজমাট হলে অনেকের কর্মসংস্থানের সুষ্টি হবে। এতে এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হবে ।
দিন দিন বেচা কেনা কমে যাওয়া কারও কাম্য নয় । আবারও স্বমহিমায় ফিরে আসুক শতবর্ষী শিবরামপুর হাট ।

               

সর্বশেষ নিউজ