নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একটি সামরিক বিমানে করে মালদ্বীপে পাড়ি জমান তিনি।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও আগেই পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে প্রেসিডেন্টের পলায়নের পর শ্রীলংকার শাসনভার এখন কার হাতে। কার নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটি।
ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও পদ থেকে সরে যেতে চান। তিনি অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন। ২০ জুলাই পার্লামেন্ট সদস্যদের গোপন ভোটে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে মালদ্বীপে পাড়ি জমানোর ফলে শ্রীলংকার ক্ষমতা কঠামোয় উল্লেখযোগ্য শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে গোতাবায়া রাজাপাকসে বিস্তৃত নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। সেইসাথে শ্রীলংকান সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
তাই এখন শ্রীলংকার নতুন প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা।
গোতাবায়া পদত্যাগ করলে তার জায়গায় সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন তিনজন। তারা হলেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে, শ্রীলংকা পদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) এমপি ডালেস আলাহাপেরুমা ও বিরোধীদলীয় নেতা সাজিদ প্রেমাদাসা।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বাকি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকতে চান। এসএলপিপির একটি অংশ তাকে সমর্থনও করে যাচ্ছে। তবে এসএলপিপির আরেকটি অংশ তাকে সে পদে রাখতে চায় না। তাকে রুখতে তারা বদ্ধপরিকর।
এসএলপিপির এ অংশের সমর্থন আছে ডালেস আলাহাপেরুমার প্রতি। এর আগে রাজনৈতিক দল এসজেবি তাদের প্রার্থী হিসেবে সাজিদ প্রেমাদাসার নাম ঘোষণা করেছে। যে প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন।
সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক এই পরিস্থিতিতে সামনে চলে আসতে পারেন শ্রীলংকার পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দেনা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশটিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রেসিডেন্ট হিসাবে তারই শপথ নেওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তিনিও রাজাপাকসে পরিবারের মিত্র এবং এই কারণে জনগণ তাকে গ্রহণ করবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গত সোমবার শ্রীলংকার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা সজিথ প্রেমাদাসা বিবিসিকে বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পদে যেতে চেষ্টা করবেন। কিন্তু বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের মধ্যেই সন্দেহের কারণে তারও জনসমর্থনের অভাব রয়েছে।
এদিকে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরই দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
বুধবার সকালে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। এছাড়া পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে জারি করা হয়েছে কারফিউ।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একটি সামরিক বিমানে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় আবারও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে দেশটিতে। হাজারো বিক্ষোভকারী জড়ো হন রাজধানী কলম্বোতে।
প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমনে টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেরও পদত্যাগ চাইছেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বুধবার স্থানীয় সময় ভোরে মালের ভেলেনা বিমানবন্দরে পৌঁছায় গোতাবায়াকে বহনকারী সামরিক বিমান। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও দুই নিরাপত্তা প্রহরি। কলম্বোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের নিয়ে রওনা দেয় সামরিক বিমানটি।
মালদ্বীপে পৌঁছানোর পর গোতাবায়া, তার স্ত্রী ও দুই দেহরক্ষীকে গোপনস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে পালিয়ে যেতে ভারত সহায়তা করেছে বলে ওঠা অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে শ্রীলংকার ভারতীয় দূতাবাস।
এক বিবৃতিতে তারা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে বলেছে, তারা শ্রীলঙ্কার জনগনকে সমর্থন করা অব্যাহত রাখবে।
দায়িত্বে থাকা অবস্থায় দায়মুক্তি পেয়ে থাকেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট। সেই কারণে পদত্যাগের আগেই দেশ ছাড়তে চেয়েছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। নতুন প্রশাসন তাকে গ্রেফতার করতে পারে এই আশঙ্কা ছিল তার।