দেশের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে সরকারের হাতে। ওষুধের এই মূল্যবৃদ্ধির আগে অন্তত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে মানুষকে জানানোর নিয়ম। কিন্তু তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে শুধুমাত্র কোম্পানিগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে এবার ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে।
রোগীরা অভিযোগ করছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যখন তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা- এমন পরিস্থিতিতে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আকস্মিক ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের দাবির প্রেক্ষিতে দাম বাড়িয়েছে।কিন্তু এটি প্রচারের দায়িত্ব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় ওষুধের পুনঃনির্ধারিত দাম অনুমোদন করা হয়। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালে কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছিল। প্রায় সাত বছর পর আবারো বাড়ানো হয়েছে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম। এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ থেকে শতভাগ। মাত্র ৪০ টাকার এমোক্সিসিলিনের দাম করা হয়েছে ৭০ টাকা, ২৪ টাকার ইনজেকশন ৫৫ টাকা। ৯ টাকার নাকের ড্রপের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮ টাকা। কোনো কোনো ওষুধের দাম ৯৯ থেকে ১৩২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নিয়ম মেনেই ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। একটি টেকনিক্যাল কমিটি ওষুধ উৎপাদনকারীদের প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই করে মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। এরপর ওষুধের মূল্য পুনর্মূল্যায়ন করে সেগুলোর নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আচমকা বাড়ানো হয়েছে বিষয়টা এমন নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে বাজারে ওষুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। কোম্পানিগুলো কিছু ওষুধ উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছে না। সবকিছু পর্যালোচনা করে ওষুধ প্রশাসনের মূল্য নিয়ন্ত্রণ কমিটির পরামর্শক্রমে সরকার ওষুধগুলোর দাম আপডেট করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা সরকারের হাতে। এক্ষেত্রে আরও যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন ছিল। কিছু কিছু ওষুধের দাম যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবিত দামের চেয়ে মূল্য অনেকটা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
দাম বেড়েছে যেসব ওষুধের-
প্যারাসিটামল ৫০০ এমজি ট্যাবলেটের দাম করা হয়েছে ১ টাকা ২০ পয়সা, আগে ছিল ৭০ পয়সা।
প্যারাসিটামল ৫০০ এমজি ট্যাবলেটের (র্যাপিড) দাম করা হয়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা, আগে ছিল ৭০ পয়সা।
প্যারাসিটামল ৬৫০ এমজি ট্যাবলেটের (এক্সআর) দাম করা হয়েছে ২ টাকা, আগে ছিল ১ টাকা ৩১ পয়সা।
প্যারাসিটামল ১০০০ এমজি ট্যাবলেটের দাম করা হয়েছে ২ টাকা ২৫ পয়সা, আগে ছিল ১ টাকা ৪ পয়সা।
প্যারাসিটামল ৮০ এমজি ড্রাপস ১৫ এমএল বোতলের দাম করা হয়েছে ২০ টাকা, আগের দাম ১২ টাকা ৮৮ পয়সা।
প্যারাসিটামল ৮০ এমজি ড্রাপস ৩০ এমএল বোতলের দাম হয়েছে ৩০ টাকা, আগের দাম ১৮ টাকা।
প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সাসপেনশন (৬০ এমএল) বোতলের দাম হয়েছে ৩৫ টাকা, আগের দাম ১৮ টাকা।
প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সাসপেনশন ১০০ এমএল বোতলের দাম হয়েছে ৫০ টাকা, আগের দাম ৩০ টাকা ৮ পয়সা।
প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সিরাপ (৬০ এমএল) বোতল দাম ৩৫ টাকা, আগের মূল্য ১৮ টাকা।
প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সিরাপ (১০০ এমএল) বোতলের দাম করা হয়েছে ৫০ টাকা, আগের মূল্য ২৭ টাকা ৭২ পয়সা।
মেট্রোনিডাজল ২০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ৬০ পয়সা, বর্তমান মূল্য ১ টাকা।
মেট্রোনিডাজল ২৫০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ৯২ পয়সা, বর্তমান মূল্য ১ টাকা ২৫ পয়সা।
মেট্রোনিডাজল ৪০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ১ টাকা ৩৭ পয়সা, বর্তমান মূল্য ১ টাকা ৭০ পয়সা।
মেট্রোনিডাজল ৫০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ১ টাকা ৬৬ পয়সা, বর্তমান মূল্য ২ টাকা।
মেট্রোনিডাজল ২০০এমজি/৫এমএল সাসপেনশন ৬০ এমএল বোতলের আগের মূল্য ২৬ টাকা, বর্তমান মূল্য ৩৫ টাকা।
মেট্রোনিডাজল ২০০এমজি/৫এমএল সাসপেনশন ১০০ এমএল বোতলের আগের মূল্য ৩৪ টাকা ৯২ পয়সা, বর্তমান মূূল্য ৪৫ টাকা।
মেট্রোনিডাজল ৫০০এমজি/১০০ এমএল ইনফিউশন ১০০ এমএল বোতলের আগের মূল্য ৭৪ টাকা ৩৫ পয়সা, বর্তমান মূল্য ৮৫ টাকা।
এ ছাড়া এমোক্সিসিলিন বিপি ১২৫ এমজি/১.২৫ এমএল সাসপেনশন ১৫ মিলি বোতলের আগে ছিল ২৬ টাকা ৩৪ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা।
এমোক্সিসিলিন বিপি ১২৫ এমজি/৫ এমএল সাসপেনশন ১০০ মিলি বোতলের আগে ছিল ৪১ টাকা ৪০ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকা।
এমোক্সিসিলিন বিপি ২৫০ এমজি/৫ এমএল সাসপেনশন-ডিএস ১৫ মিলি বোতলের আগে ছিল ৬৭ টাকা ৯৪ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা।
এমোক্সিসিলিন বিপি ২৫০ এমজি ক্যাপসুল, আগে ছিল ৩ টাকা ১৫ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা।
এমোক্সিসিলিন বিপি ৫০০ এমজি ক্যাপসুল, আগে ছিল ৫ টাকা ৯০ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৭ টাকা ৫ পয়সা।
এমোক্সিসিলিন বিপি ৫০০ এমজি ইনজেকশন, আগে ছিল দাম ২৪ টাকা ১০ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৫৫ টাকা।
জাইলোমেট্রোজালিন এইচসিআই ০.০৫% নাসাল ড্রপ ১৫ এমএলের আগের দাম ৯ টাকা ৬০ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ১৮ টাকা।
জাইলোমেট্রোজালিন এইচসিআই ০.১% ন্যাজাল ড্রপ ১৫ এমএলের আগের দাম ১০ টাকা ৪ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা।
প্রোকলেপেরাজিন ৫এমজি ট্যাবলেট, আগের দাম ৪০ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৬৫ পয়সা।
প্রোকলেপেরাজিন ১২.৫ এমজি ইনজেকশন, আগের দাম ৪ টাকা ৩৬ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৯ টাকা।
ডায়াজেপাম ১০ এমজি/২ এমএল ইনজেকশন আগে ছিল ৩ টাকা ২২ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৭ টাকা।
মিথাইলডোপা ২৫০ এমজি ট্যাবলেটের আগের দাম ১ টাকা ৫০ পয়সা, এটি ১৩৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩ টাকা ৪৮ পয়সা।
মিথাইলডোপা ৫০০ এমজি ট্যাবলেটের আগের দাম ছিল ৫ টাকা ১৩ পয়সা, এটি বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা ৯ পয়সা।
ফ্লুরুসেমাইড ২০ এমজি/২ এমএল ইনজেকশনের দাম আগে ছিল ৫ টাকা ৯৯ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৯ টাকা।
ফ্লুরুসমাইড ৪০ এমজি ট্যাবলেট আগে ছিল ৫৬ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ১ টাকা।
ফেনোবারাবিটাল ৩০ এমজি ট্যাবলেটের আগের দাম ছিল ৬৮ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ১ টাকা।
ফেনোবারাবিটাল ৬০ এমজি ট্যাবলেটের আগের দাম ছিল ১ টাকা, বেড়ে হয়েছে ১ টাকা ৫০ পয়সা।
ফেনোবারাবিটাল ৫০ এমএল এলিক্সির ২০ এমজি৫ এমএল বোতলের আগের দাম ছিল ২১ টাকা ৭৮ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৪৩ টাকা।
ফেনোবারাবিটাল ১০০ এমএল এলিক্সির ২০ এমজি/৫ এমএল বোতলের আগের দাম ছিল ৫০ টাকা, বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকা।
ওআরএস ৫০০ এমএল স্যাটেসের আগের দাম ছিল ৪ টাকা ৩৫ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা।
ওআরএস ফ্রুটি ২৫০ এমএল স্যাটেসের আগের দাম ছিল ৪ টাকা ৪০ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা।
লিডোকেইন ১% ডব্লিউভি, ২০ এমজি/২ এমএল ইনজেকশনের আগের দাম ছিল ৩ টাকা ৬ পয়সা, ৯৯ শতাংশ বেড়ে ওষুধটির দাম হয়েছে ৭ টাকা।
লিডোকেইন ১% ডব্লিউভি, ৫০ এমএল ইনজেকশনের আগের দাম ছিল ২০ টাকা, বেড়ে ওষুধটির দাম হয়েছে ৩৫ টাকা।
লিডোকেইন ২% ডব্লিউভি, ৫০ এমএল ইনজেকশনের আগের দাম ছিল ২৫ টাকা, বেড়ে ওষুধটির দাম হয়েছে ৪০ টাকা।
ফলিক এডিস ০.০৫ এমজি/১০০ এমএল ওরাল সলিউশনের (১০০ এমএল বোতল) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা।
ক্লোরফেনিরামিন ২ এমজি/৫ এমএল সিরাপের (৬০ এমএল বোতল) আগের দাম ছিল ১৩ টাকা, বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা।
বেনজাথিন বেনজিলপেনিসিলিন ১২ লাখ ইউনিট/ভায়াল ইনজেকশনের আগের দাম ১৫ টাকা ৬০ পয়সা, প্রায় ৯৯ শতাংশ বেড়ে দাম হয়েছে ৩০ টাকা।
অ্যাসপিরিন ৭৫ এমজি ট্যাবলেটের আগের দাম ছিল ৫৫ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৮০ পয়সা।
অ্যাসপিরিন ৩০০ এমজি ট্যাবলেটের আগের দাম ছিল দেড় টাকা, বেড়ে হয়েছে ২ টাকা।
ফেনোক্সিমিথাইল পেনিসিলিন ২৫০ এমজি ট্যাবলেটের আগের দাম ছিল ২ টাকা, বেড়ে হয়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সা।
ফেনোক্সিমিথাইল পেনিসিলিন ৫০০ এমজি ট্যাবলেটের আগের দাম ছিল ৩ টাকা ৮৬ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা ৫০ পয়সা।
ফেনোক্সিমিথাইল পেনিসিলিন ২৫০ এমজি/৫ এমএল সিরাপের (৫০ এমএল বোতল) আগের দাম ছিল ২১ টাকা ৫০ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা।
প্রোমেথাজিন ৫ এমজি/৫ এমএল এলিক্সির (১০০ এমএল বোতল) আগের দাম ছিল ২১ টাকা ৩৫ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৩৫ পয়সা।
প্রোমেথাজিন ২৫ এমজি/এমএল ইনজেকশনের আগের দাম ছিল ৩ টাকা, বেড়ে হয়েছে ৭ টাকা।
নরগেস্টেরেল ০.৩০ এমজি+ইথাইনিলিস্ট্রাডল ০.০৩ এমজি ট্যাবলেটের দাম আগে ছিল একটা ৫০ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ২ টাকা।
ফেরোস ফেমেরেট ৭৫ এমজি ট্যাবলেটের আগের দাম ছিল ৩৮ পয়সা, বেড়ে হয়েছে ৫০ পয়সা।