নির্বাচনের মাঠে কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে তাকে মোকাবিলায় বন্দুক নিয়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ নিয়ে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। কথাটি কৌতুক ছিল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে সংলাপে সিইসির তলোয়ার–বন্দুক নিয়ে বক্তব্যের বিষয়টি তোলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
কেউ তলোয়াড় নিয়ে দাড়াঁলে প্রতিপক্ষকে রাইফেল নিয়ে দাঁড়াতে সিইসির আগের দিনের পরামর্শের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটা কী অস্ত্রবাজি বা মল্লযুদ্ধের জায়গা? নিশ্চয়ই সেই জায়গা নয়।
জবাবে সিইসি জানান, তিনি মন থেকে ওই বক্তব্য দেননি। আলোচনার প্রসঙ্গক্রমে তিনি কৌতুক করে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে কথাটি বলেছেন।
তিনি বলেন, এটা কী কখনো মিন করা হয়! একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটুকু জ্ঞান নেই? এই কথাটি সত্য হলে আমি তো আর্মস অ্যাক্টে লায়াবল। পুলিশ আামকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাবে। বুঝতে হবে এটা অন্তর থেকে বলা হয়েছে না কৌতুক করে বলা হয়েছে। দেশের পেপারগুলোতে এটা প্রধান খবর। একটা মানুষকে নামিয়ে দেয়া। এরপর তো আর কাজ করার মনোবলও থাকে না। ইচ্ছেও করে না। আজকে যে অবস্থা। আজকে যদি বিদায় হতে পারতাম ভালো লাগতো।
ব্যর্থ হলে পদত্যাগ করার মানসিকতা রাখার পরামর্শ দেন সাইফুল হক। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, পদত্যাগ করতে দেরি হবে না। যখন বিএনপি বললো আমাদের ওপর আস্থার কোন প্রশ্ন আসে না। আমরা সুবিধাভোগী। সরকার পরিবর্তন হবে নির্বাচনকালী সরকার হবে। আমাদের কথা হলো এটা নিয়ে আমরা মোটেও আতঙ্কিত নই। বিএনপির ইচ্ছার পক্ষে-বিপক্ষে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। বিদ্যমান কাঠামোর অধীনে আমরা সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সাথে এগিয়ে যাবো।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরস্পর বিরোধী অবস্থান জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ‘সংশয়’, ‘সংকট’ ও ‘অনিশ্চয়তা’ তৈরি করেছে। একটা বড় দল বলছে নির্বাচনে অংশ নেবে না। আরেকটি দল বলছে নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক পরিমন্ডলে এটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে।
এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে সঙ্কটে পড়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সোমবার সংলাপের দ্বিতীয় দিন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি এসব কথা বলেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের প্রস্তুতির কথা জানান সিইসি।
সোমবার নির্ধারিত চারটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি অংশ নেয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চারজন কমিশনার এবং ইসির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল সাড়ে ১০টা শুরু হয়ে নির্ধারিত বিরতি দিয়ে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সংলাপ চলে। সংলাপের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন প্রস্তাব ও সুপারিশ নিয়ে জবাব দেন সিইসি। একাধিক দিনে ভোটগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক দলের মতামতও জানতে চান তিনি। সংলাপের এক পর্যায়ে সিইসিকে অনেকটা ক্লান্ত দেখা যায়।
খেলাফত মজলিসের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, আমরাও মনে করি বিএনপি যদি এই নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে আমাদের অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন আয়োজনের উদ্দেশ্য সফল হবে না। নির্বাচন হয়তো আমরা করবো। আবার বিএনপি যেভাবে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন সেটা যদি অন্যান্য দল বিশেষ করে শাসক দলের সাথে বসে সুরাহা করতে পারেন, একটি ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারে, তাহলে সেই ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন করতে কোন বাঁধা নেই। সেই প্রতিশ্রুতি আমরা এখনো পাচ্ছি না। ওই অবস্থা এখনো আসেনি। আল্টিমেটলি বিএনপি কী নির্বাচনে আসছে, তা নিয়ে এখনো একটি সংশয় দ্বিধার মধ্যে আছি।