২১, নভেম্বর, ২০২৪, বৃহস্পতিবার
     

সিরাজদিখানের তৈরী বিশ্বখ্যাত সুস্বাদু ক্ষিরসা

সিরাজদিখান(মুন্সীগঞ্জ)প্রতিনিধি:
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের সন্তোষপাড়ায় তৈরি হয় বিশ্বখ্যাত সুস্বাদু খাবার ক্ষিরসা। অনেকে এটাকে পাতাক্ষিরও বলে থাকেন । গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরি হয় এই ক্ষিরসা । ইহার চাহিদা শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিদেশেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা । মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের কোন অনুষ্ঠানে খাবার তালিকায় এই ক্ষিরসা থাকবেনা তা কল্পনাতীত ।

প্রতিদিন কয়েক মণে দুধ ব্যবহার হচ্ছে এ ক্ষীরসা তৈরিতে। সব মৌসুমেই এর চাহিদা থাকলেও শীতের মৌসুমে এর চাহিদা অনেকাংশে বেশি। বাঙ্গালি ঐতিহ্যের পাটিশাপটা পিঠা তৈরিতেও প্রয়োজন হয় ক্ষিরসার। নতুন জামাইয়ের সামনে পিঠা-পুলির সাথে এ ক্ষীরসা ব্যবহার না করা যেন বেমানান। গ্রামবাংলায় মুড়ির সাথেও এ ক্ষীর খাওয়ার পুরনো রীতি রয়েছে। সন্তোষ পাড়া সাতটি পরিবার এখন মোখরোচক খাবার ক্ষীরসা তৈরি করে আসেছ।

তবে পুলিনবিহারী দেব প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে এ ক্ষীরসা তৈরি করে বিক্রি করতেন বলে তার উত্তরসূরিরা জানান। সে শত বছর আগের কথা।

এছাড়া ইন্দ্রমোহন ঘোষ, লক্ষ্মীরানী ঘোষও তৈরি করতেন পাতক্ষীর। তারা সবাই প্রয়াত। এখন তার বংশধররা বানাচ্ছেন। সুনীল চন্দ্র ঘোষ ,কার্তিক চন্দ্র ঘোষ, ভারতী ঘোষ, রমেশ সাম ঘোষ, বিনয় ঘোষ, মদুসূদন ঘোষ, সমীর ঘোষ ও ধনা ঘোষ এখন এ পেশায় রয়েছেন। সুনীল ঘোষের ৫ ভাইসহ অনেকেই এ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সুনীলঘোষের খ্ষিরসা বিশ্বব্যাপি সমাদৃত । আমেরিকা, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স ও জাপান থেকেও এ ক্ষীরের অর্ডার আসে।

পাতাক্ষীর তৈরিতে পারদর্শী জগন্নাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক বিজয় ঘোষ বলেন, প্রতি কেজি পাতক্ষীর তৈরিতে ৩ কেজি দুধ প্রয়োজন হয়। এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে জাল দিতে হয় দুধ। দুধের সঙ্গে সামান্য (৫০ গ্রাম) চিনি ব্যবহার করা ছাড়া কিছুই ব্যবহার হয় না এখানে। তবে ডায়াবেটিক রোগীর জন্য বিশেষ অর্ডার থাকলে এ চিনিও দেওয়া হয় না। জাল দিতে দিতে দুধ যখন ঘন হয় তখন মাটির পাতিলে রাখা হয়। ঘন্টাখানেক পর ঠান্ডা হলে তা কলা পাতায় পেঁচিয়ে বিক্রিযোগ্য করা হয়। তবে হাতের যশ আর কৌশলের কথাও বললেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ঘন করতে গেলে চুলোয় দুধে পোড়া লেগে যায়। তাই কাঠের বিশেষ লাঠি দিয়ে নাড়তে হয় সব সময়।

‘পাতা’ নিয়েই এর নাম করণ। হ্যাঁ, তৈরি সম্পন্ন হওয়ার পর এ ক্ষীর কলা পাতায় জড়িয়ে থাকে বলেই এ ক্ষীরের নাম হয়েছে ‘পাতক্ষীর’, বললেন ভারত ঘোষ।

শুধু সুনীল ঘোষের বাড়িতেই প্রতিদিন এ ক্ষীর তৈরি হয় ৫০ টিরও বেশি। প্রতিটি ক্ষীরের ওজন আধা কেজি। প্রতি আধা কেজি পাতক্ষীরের মূল্য ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি হিসেব করলে ৪০০-৪৫০ টাকা পড়ে যায়।।

এ প্রসঙ্গে সিরাজদিখান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফুল আলম তানভীর জানান, ভৌগলিক নির্দেশক পন্য (জি আই প্রডাক্ট) হিসেবে আমরা ঐতিহ্যবাহী খাবার পাতক্ষীরকে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে সরকারের নিকট প্রস্তাব পাঠিয়েছি । যাতে সারা দেশে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে ।

তিনি আরও জানান, এ পেশাটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা সকল জাতীয় প্রোগ্রাম বৈশাখী সহ অতিথিদের এ পাতাক্ষির দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকি ।

তবে এ বিষয়ে আরও উদ্দ্যোগ নিলে হয়তো বহিঃবিশ্বে রপ্তানীতে বিশেষ ভ’মিকা রেখে ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুরের সুনাম আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে ।

               

সর্বশেষ নিউজ