যথাযথ মর্যাদায় দেশবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা বলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৫০ মিনিটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাতে এক ফেসবুক পোস্টে এসব কথা জানান তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।
পাঠকদের জন্য জয়ের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
প্রিয় দেশবাসী
আসসালামুয়ালাইকুম
ভাই ও বোনেরা, ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একই সাথে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা, আমার তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেনেন্ট শেখ জামাল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার ছোট ভাই যার বয়স মাত্র ১০ বছর ছিল শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার একমাত্র চাচা মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু শেখ নাসের, রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন, পুলিশ অফিসার সিদ্দিকুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, কৃষি মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সারনিয়াবাদ, তাঁর ১০ বছরের ছেলে আরিফ ১৩ বছরের মেয়ে বেবি, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত, ভাইয়ের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শহীদ সারনিয়াবাদ, ভাগনে রেন্টুসহ অন্যান্য অনেককে নির্মমভাবে ভাবে হত্যা করে। ১৫ই আগস্ট যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাঁদের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শহীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে যে নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ এমন কি অন্তঃসত্ত্বা নারী পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, পথচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমার মতো যারা বেচে আছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। আমি এই হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সাথে জড়িতদের যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।
১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে যে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছিল সেই স্মৃতি বহনকারী বাড়িটি আমরা দুই বোন বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেছিলাম। গড়ে তোলা হয়েছিলো স্মৃতি জাদুঘর। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই বাড়িতে এসেছেন। স্বাধীনতার স্মৃতিবহনকারী এই জাদুঘরটি।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে আপনজন হারাবার সকল ব্যথা বেদনা বুকে চেপে রেখে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়ে প্রিয় দেশবাসী আপনাদের সেবা করে যাচ্ছি। তার শুভ ফল ও আপনারা পেতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আজ তা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আর যে স্মৃতিটুকু আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল তা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। চরম অবমাননা করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি আত্মপরিচয় পেয়েছি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। লাখো শহীদের রক্তের প্রতি অবমাননা করেছে। আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই।
প্রিয় দেশবাসী,
আপনাদের কাছে আবেদন জানাই যথাযথ মর্যাদার সাথে ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ই আগস্ট পালন করুন। বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্প মাল্য অর্পণ ও দোয়া মোনাজাত করে সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল করুন। খোদা হাফেজ।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
শেখ হাসিনা।