২৬, এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার
     

পরামর্শক ব্যয় ১৯১ কোটি টাকা

ডিজিটাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চায় সরকার। এজন্য হাতে নেওয়া হচ্ছে ‘এনহ্যানিসং ডিজিটাল গভর্মেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল ইকোনমি (ইডিজিই)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে পরামর্শকের পকেটেই যাবে ১৯১ কোটি ৭ লাখ টাকা। তবে প্রথম পর্যায়ে এই খাতে আরও বেশি ব্যয় ধরা হয়েছিল। সেটা অযৌক্তিক মনে হওয়ায় পরামর্শকসহ সার্বিক প্রকল্প ব্যয় যৌক্তিক করতে কমিটি গঠন করে পরিকল্পনা কমিশন। এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এতে এমন ব্যয় ধরা হয় বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সূত্র জানায়, ৩ হাজার ৮৬৩ দিন কাজ করবে পরামর্শক ফার্ম। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আবার ২ হাজার ৩৭৬ জনমাস কাজ করবে ব্যক্তি পরামর্শক। তাদের পেছনে খরচ হবে ৭৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এছাড়া করোনা মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক এমকে মুজেরী যুগান্তরকে বলেন, এত পরামর্শক কেন লাগবে তার একটি মূল্যায়ন হওয়া উচিত ছিল। এছাড়া যে কোনো প্রকল্পেই আর কিছু হোক আর না হোক পরামর্শক, বিদেশ সফর, গাড়ি ও আসবাবপত্রসহ নানারকম ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। এদিকেই বেশি আগ্রহী সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে পরামর্শক ব্যয় ধরার কোনো নীতিমালা বা পরামর্শ নিয়ে কি আউটকাম পাওয়া গেছে তার কোনো মাপকাঠিও তৈরি হয়নি। ফলে এসব ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির সুযোগ থাকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা ঋণের টাকা। সুদসহ পরিশোধ করতে হবে সরকারকেই।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করা হয়েছে। ফলে আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (্একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন হচ্ছে প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ২৫টি আইসিটি যন্ত্রাংশ ক্রয়, সফটওয়্যার, অফিস সরঞ্জাম ও যানবাহন ক্রয় এবং ৩ জনের বেতন-ভাতাদি দেওয়া। এছাড়া প্রশাসনিক খরচ, উৎসব ভাতা ও সম্মানী প্রদান এবং সরবরাহ খাতে ব্যয় হবে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক (সিএ অপারেশন ও নিরাপত্তা) তারেক এম বরকত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করেই পরামর্শক খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে। এটা প্রয়োজন। কেননা দেশের সবচেয়ে বড় ১০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপন করা হবে। এগুলোতে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম চলবে। এগুলো থেকে যেসব ইনোভেশন (উদ্ভাবন) বের হবে সেগুলো বাণিজ্যিকীকরণ করা হবে। এছাড়া চীনের কোম্পানিগুলো থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। আমাদের এখানে কেন আসছে না। এর কারণ অনুসন্ধানসহ সমস্যা সমাধানে কাজ করবে পরামর্শকরা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মাধ্যমে সারা দেশের ৬৪ জেলা এবং সব সিটি করপোরেশনে ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা থেকে ২ হাজার ৫০৭ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

একনেক সভার কার্যপত্রে প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ডিজিটাল অর্থনীতির পরিবেশ তৈরি এবং বিকাশের জন্য নীতিমালা বাস্তবায়নের সহায়তা দেওয়া। এছাড়া ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের জন্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন হবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকারের ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ হবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বৃদ্ধি করা হবে ডিজিটাল সক্ষমতা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ডিজিটালাইজেশন, ডিজিটাল অর্থনীতি প্রসারের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের কাজ চলছে। এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ আজ সফলতার দ্বারপ্রান্তে। ডিজিটাল আইসিটি শিল্পের বিস্তারে বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুনে বাস্তবায়ন করে ‘লিভালেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, ইমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স’ প্রকল্প। এটি সরকারের সাফল্য অর্জনে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সাইবার নিরাপত্তা, জাতীয় ডাটা সেন্টার সম্প্রসারণ ও অন্যান্য পরিসেবা ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের সফলতাগুলোকে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামে বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা হবে। এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আইটি শিল্পের আয় বৃদ্ধি হবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।যুগান্তর

               

সর্বশেষ নিউজ