৮, মে, ২০২৪, বুধবার
     

ফখরুল-রিজভীর পুরনো দ্বন্দ্বে সুবিধা নিচ্ছে কারা?

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। অবস্থাদৃষ্টে দুজনই যেন আলাল-দুলাল। আলাল যদি ডাইনে যায়, দুলাল যায় বাঁয়ে। কারও সঙ্গেই কারও মিল নেই। একজন ঘোরতর খালেদাপন্থী, আরেকজন তারেকের আস্থাভাজন। দলে দুজনেরই রয়েছে অনুসারীদের আলাদা ফোরাম।

তবে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর যখন বুঝলেন তার সহসা মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, তখন থেকে ধীরে ধীরে খোলস বদলের পাঁয়তারা শুরু করেন মির্জা ফখরুল। এমনকি তৈল মর্দনের অংশ হিসেবে একবার এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি তারেক রহমানকে ‘ভারপ্রাপ্ত’ না বলে সরাসরি দলের চেয়্যারম্যানও বলেছিলেন।

কিন্তু সেই শুকনো কথায় চিঁড়ে ভেজেনি। আবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও কম যান না। তার নামে তারেকের কাছে সময় পেলেই করেন নালিশ। কর্মীদের সামনে সুবোধ সেজে থাকলেও একজনের সংবাদ সম্মেলনে অনুপস্থিত থাকেন। নিতান্ত উপস্থিত থাকতে হলে সাড়া-শব্দ করেন না।

ফখরুল-রিজভীর এই শীতল যুদ্ধের সুযোগে ‘নতুন নেতৃত্বে আসার’ চেষ্টায় রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আবার তাদের বিরুদ্ধে লেগে আছেন ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এবং স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

দলীয় সূত্র বলছে, মির্জা ফখরুল ও রিজভীর দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো হলেও বিষয়টি সামনে আসে মূলত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর। পরবর্তীতে দুর্নীতির দায়ে দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হলে বিষয়টি আরও প্রকাশ্য হয়। খালেদাপন্থী ফখরুল হয়ে পড়েন কাগজে-কলমের মহাসচিব।

আবার পদে না থেকেও দলের সব কার্যক্রম পরিচালনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে একচ্ছত্র প্রভাব খাটানো শুরু করেন তারেকের ‘ডান হাত’ খ্যাত রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। সেই থেকে শুরু, যা এখনো চলমান। ফলে দলের সারাদেশের রাজনীতির অঘোষিত নিয়ন্ত্রক এখন রিজভী। তার ইশারা ছাড়া কোথাও কোনো কমিটির অনুমোদন হয় না।

আর এ কাজে তার মাথার ওপর ‘আশীর্বাদের হাত’ রেখেছেন তারেক রহমান। যিনি এই পদ-কমিটি-মনোনয়ন বাণিজ্যের সিংহভাগ অর্থই লন্ডনে বসে পেয়ে যাচ্ছেন অনায়াসে। এ কারণে রিজভীর প্রতি ভালোবাসার শেষ নেই বিএনপির পলাতক নেতার।

তাছাড়া স্বেচ্ছায় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি সেখান থেকে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে খালেদাকে মুক্তির চেষ্টাও করেন রিজভী। জিতে নেন তারেকের মন। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন দাপ্তরিক কাজে। কাকে অব্যাহতি, কাকে বহিষ্কার করতে হবে, কে পদ পাবে, কার পাদ যাবে- সব চিঠি ইস্যু করেন তিনি। এতে দূরত্ব সৃষ্টি হয় তারেকের সঙ্গে ফখরুলের।

নীরবে এসব পর্যবেক্ষণ করে ‘সেই সুযোগে’ তাদের জায়গায় নিজেদের দেখতে চাইছেন বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তাদের চাওয়া, আব্দুল আউয়াল মিন্টু কিংবা মির্জা আব্বাস নয়, তারাই হবেন দলের পরবর্তী মহাসচিব। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছেন তারা।

এ বিষয়ে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তেমন কিছু নয়। দলের জন্যই কাজ করছি। আর পদ-পদবী তো তারেক রহমান দেবেন। তাই তেমন যদি কিছু হয়, তবে তখন সবাই জানতে পারবেন। আকাশে মেঘ জমলে সবাই দেখবেন। এখন যেভাবে চলছে চলুক না, ক্ষতি কী?

একই সুর হাফিজ উদ্দিনের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাই তারেক রহমানের কথা মতই সামনে অগ্রসর হচ্ছি। এর বেশি কিছু এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। আর চাঁদ উঠলে তো সবাই দেখতেই পারবে, তাই না!

তবে এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নন শামসুজ্জামান দুদু এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ফখরুল-রিজভীর দ্বন্দ্ব বিষয়ে তাদের সাফ জবাব, এ সবই আওয়ামী লীগের অপপ্রচার। বিএনপিতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, সবাই একতাবদ্ধ। তাহলে প্রতিটি সভা সমাবেশে মারামারি, চেয়ার ছোড়াছুড়ি, মঞ্চ ভাঙা, নেতাদের স্যান্ডেল ছোড়ার ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে- এমন প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফখরুল-রিজভীর দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপিতে দুটি কেন্দ্র। একটি গুলশান কার্যালয়, আরেকটি নয়াপল্টন কার্যালয়। আর এই সুযোগকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় আছেন সিনিয়ন নেতারা। চতুরতার সঙ্গে তারেকও বিষয়টি নিয়ে খেলছেন। তাদের সামনে মূলা ঝুলিয়ে ভারি করছেন নিজের পকেট।

দলের ক্ষমতালোভী নেতারা হয়ত ভুলে গেছেন, প্রয়োজন ফুরালেই তারেক তাদের ছুড়ে ফেলবেন আস্তাকুঁড়ে। চাইলেও আর তারা রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন না তারা। ইতিপূর্বে অনেকের ভাগ্যে জুটেছে এমন পরিণতি।-somoyekhon

               

সর্বশেষ নিউজ