বিশেষ প্রতিবেদক : জিডি হোক বা মামলা হোক টাকা না দিলে কাজ হয় না। পুলিশকে ঘুষ না দিলে এগোয় না তদন্ত। পুলিশ সম্পর্কে ভুক্তভোগীদের চিরাচরিত এমন মন্তব্য আমূল বদলে গেছে গোপালগঞ্জ জেলার আওতাধীন গোপীনাথপুর তদন্ত কেন্দ্র এলাকায়। পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে ওই তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ সাব্বির রহমান ‘কুইক রেসপন্স এন্ড বেস্ট প্র্যাকটিস’ নামে ব্যতিক্রমধর্মী পুলিশি সেবার এ উদ্যোগ সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছেন। বীরমুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী, পর্যটক, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, নারী ও শিশুদের দ্রুততার সাথে আইনি সেবা দেওয়ার জন্য খোলা হয়েছে আলাদা হেল্প ডেস্ক। যার সুফল পাচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশী মানুষ।
কিছুদিন পূর্বে মোটরসাইকেল যোগে গোপালগঞ্জ শহর হতে বাড়ী ফিরার পথে চন্দ্রদিঘলিয়া বাজার এলাকায় Samsung Galaxy সিরিজের একটি দামী মোবাইলসেট হারিয়ে ফেলেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কুঠিবাড়ী সুকতাইল গ্রামের সজল মোল্লা। তিনি গোপীনাথপুর তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তদন্ত কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের ব্যবহার ও সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে সজল মোল্লা বলেন, ‘বহু কষ্টে কেনা দামী মোবাইল সেটটি’ হারিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। গোপীনাথপুর তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে আমার মোবাইল সেটটি হারিয়ে যাওয়ার কথা জানায়।
ওখানকার ইনচার্জ খুব আন্তরিকভাবে আমার কথা শোনেন। তিনি একটি হারানো ডায়েরি করার ফরম আমাকে দেন, আমি তা পূরণ করে দিলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা দ্রুত সময়ের মধ্যে জিডি লিখে দেন। অপর একজন সেবা প্রত্যাশী পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের নাইম সিকদার বলেন, তারও একটি দামী স্মাট মোবাইল সেট হারিয়ে গেলে তিনি গোপীনাথপুর তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে লক্ষ্য করেন যে, সেবা প্রত্যাশী আগত প্রত্যেকের সমস্যার কথা মনযোগ সহকারে গোপীনাথপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সাহেব শুনে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ অফিসারদের দেন।
এমনকি ওই সময় সেখানে লোক না থাকার কারণে আমাকে চা খাওয়াতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন ওই তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ। বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।’ উভয় আরো জানান যে, মোবাইল সেট হারানোর মাস খানের মধ্যে মোবাইল সেট উদ্ধার করে এএসআই সনাতন বিশ্বাস তাদের হাতে তুলে দেন। এমন ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা এখন গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশের আওতাধীন সদর উপজেলার গোপীনাথপুর তদন্ত কেন্দ্রে এলাকার মানুষের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে। যারা আইনগত সেবার জন্য গোপীনাথপুর তদন্ত কেন্দ্র পুলিশের দারস্থ হয়েছিলেন তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে।
ব্যতিক্রমধর্মী পুলিশি সেবার এই উদ্যোগের বিষয়ে তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ সাব্বির রহমান বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বিপিএম পিপিএম এর নির্দেশনা অনুযায়ী সুন্দর আচারণ ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে আইনগত সেবা প্রদানে বাংলাদেশ পুলিশ বদ্ধপরিকর। তিনি আরো বলেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম(বার), পিপিএম(বার) মহোদয়ের নিদের্শনা মোতাবেক জনবান্ধব পুলিশিং শুরু করেছি। পুলিশের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অভিযোগ আছে জিডি কিংবা মামলা করতে, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা পেতে টাকা দিতে হয়। আমি আমার এটা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি।
পুলিশ জনগণের বন্ধু, আমরা এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছি। যে কোনো সমস্যায় পুলিশের সঙ্গে অবলীলায় যোগাযোগ করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সেবাপ্রত্যাশী সাধারণ মানুষ এখন পুলিশের কাছে আসতে ভয় পায় না। এটাই আমাদের অর্জন। আমি কে কয়দিন এখানে চাকুরীতে থাকবো শতভাগ মানুষকে হায়রানীমুক্ত সেবা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উপজেলার সাধারণ নাগরিকরা বলেন দেশের প্রতিটি থানা তদন্ত কেন্দ্রের ওসি-আইসি যদি ইনচার্জ সাব্বির রহমানের মতো সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে তাহলে মাদক, চোরাচালান, ঘুষ, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস মুক্ত এই দেশ হতো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।