১৭, নভেম্বর, ২০২৪, রোববার
     

প্রস্তুতি অনেক, নিশ্চয়তা নেই পণ্যের দাম কমার

১০ টাকা কমিয়েছি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে ৫ টাকা এবং রমজান উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট সব কোম্পানি একমত হয়ে আরও ৫ টাকা কমানো হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের আমদানি পর্যাপ্ত রয়েছে। বাজারে কোনো পণ্যের সংকট বা সরবরাহ সমস্যা হবে না।’ তবে দাম কমার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

অন্যদিকে শীত শেষে বাজারে শাকসবজির দাম কিছুটা কমে আসাকে মন্দের ভালো মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিক্রি হওয়া ৬০০ টাকা কেজি দরের গরুর মাংস দেড় মাসের ব্যবধানে ১৫০ টাকা বেড়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক মনে করছেন তারা।

বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। পাশাপাশি মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। অপর দিকে বাজারে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া গেলেও দাম কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং গরিবের তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের দাম আগের বছরের তুলনায় বেশি। প্রতি কেজি পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়।

তবে সরকারি হিসাবে চাল, আটা, সয়াবিন তেলের দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ২ থেকে প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। যদিও সরকারি দামের তুলনায় এসব পণ্য বাজার ১ থেকে ২ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

প্রতি কেজি মাঝারি মানের চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, মোটা চালের কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, খোলা আটার কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, প্যাকেট আটার কেজি ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, বোতলজাত ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭০ থেকে ১৭৩ টাকা।

আসন্ন রমজান মাস ও বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু কালবেলাকে বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। তারা এ বিষয়ে (পেঁয়াজ ও চিনি রপ্তানি) ওয়াকিবহাল। এখন তাদের দিক থেকে রপ্তানির যে প্রক্রিয়া সেটির অপেক্ষায়। তবে দিন তারিখ দিয়ে তো বলা যায় না। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টির সমাধান হবে।

রমজানের প্রস্তুতির বিষয়ে বলেন, আমরা আমদানির ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা দিয়েছি। এরই মধ্যে রমজানের বেশিরভাগ পণ্য চলে এসেছে। বাকি যেসব এলসি (ঋণপত্র) রয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে এবারের রমজানে কোনো পণ্যের সংকট হবে না। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, সরবরাহ নিশ্চিত করা। সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বাজার কমিটির সঙ্গে আলাপ হয়েছে, তারা আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে, পণ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা থাকবে না।

দাম কমা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি অনেক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন, শুল্ক, অভ্যন্তরীণ কর, ডলারের দাম ইত্যাদি থাকে। সে ক্ষেত্রেও আমরা চেষ্টা করছি কমিয়ে আনার জন্য। তবে দাম এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, সিটি বজায় থাকাও একটা চ্যালেঞ্জ। দেখা গেছে, রমজানের আগে হুট করে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। বাজারে পাওয়া যায় না। এবার যাতে এমন কোনো কিছু না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখছি।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান কালবেলাকে বলেন, সরকার এরই মধ্যে চাল, তেল, খেজুর ও চিনির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এতে আমদানির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আর যে লক্ষ্যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেভাবে আমদানি হলে সামনে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না। বরং কমবে বলে মনে করি। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ পণ্য যেমন আলু ও শাকসবজির সরবরাহ অনেক বেড়েছে। ফলে দামও কমে এসেছে। তাই এখন খেয়াল রাখতে হবে, বাজারে পণ্যের সরবরাহ প্রচুর আছে কি না।

কারণ যদি পণ্যের সরবরাহ কম থাকে, তাহলে দাম বাড়ে। এমন একটা পরিস্থিতিতে যদি আমদানি করা হয় এবং শুল্ক হ্রাস করা হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। এতে দামের ঊর্ধ্বগতি কমবে। আমার মনে হয়, সরকারের উদ্যোগের ফলে পণ্যের ঘাটতি থাকবে না এবং ঘাটতি না থাকলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দাম স্বাভাবিক থাকবে।

মাছ-মাংস ও শাকসবজির দামের বিষয়ে তিনি বলেন, গরু ও মুরগির সঙ্গে মাছের দামের সম্পর্ক থাকে। এগুলোর কোনো একটির দাম বাড়লে অন্যগুলোও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বড় প্রতিষ্ঠান জড়িত। বাজার ব্যবস্থায় তাদের অংশীদারত্ব বেশি। কাজেই তাদের তদারকি করা দরকার।

শাকসবজির দামের ক্ষেত্রে কিছুদিন আগে বেশি থাকলেও অনেকটা কমেছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি মনে হওয়ার কারণ হলো—এবার কৃষকের খরচ বেড়েছে। ফসল নষ্ট হয়েছে। তার পরেও কৃষক পর্যাপ্ত দাম পেয়েছে কি না, সেটি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। মূলত কৃষকের কাছ থেকে খুচরা পর্যায়ে আসতে যেসব স্তর রয়েছে, সেক্ষেত্রে দাম সমন্বয় হয় এবং দাম বাড়ে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতি তথা সবজির কোয়ালিটি বা নষ্ট বা পচা বিষয় বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করেন, সেজন্য কৃষক ও খুচরা পর্যায়ে দামের পার্থক্য বেশি মনে হয়।

               

সর্বশেষ নিউজ