১৯, মে, ২০২৪, রোববার
     

উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি, তবু কেন ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

সরকার বিদ্যুৎ খাতে বড় ধরণের সাফল্য দাবি করছে। সরকার বলছে, দেশের শতভাগ এলাকা এখন বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের আওতায় এবং চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা এখন রয়েছে। কিন্তু এই দাবির পাশাপাশি গতকালই পাঁচটি বেসরকারি ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ানো হয়েছে।

ব্যাপক ব্যয়বহুল এসব ভাড়া-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বাংলাদেশে অনেক বিতর্ক আছে।

চাহিদার তুলনায় যদি বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকেই, তাহলে ভাড়া-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজন কতটা আছে – সে প্রশ্ন অনেকে করছেন।

সরকারি হিসেবে অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা আছে ২৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি। চাহিদা না থাকায় সরকার অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারছে না। এজন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচও বাড়ছে।

নতুন করে যে পাঁচটি বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাদের কোন ক্যাপাসিটি চার্জ দেবে না সরকার। শুধু বিদ্যুৎ কিনলেই টাকা দেয়া হবে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাব-এর জ্বালানী উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলছেন, ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও কমে আসতো এবং মানুষের উপর চাপ কমতো।

‘বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় এখন ইউনিট প্রতি আট টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ভাড়া-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রেখে দিয়ে আপনি হাজার-হাজার কোটি টাকা ভাড়ার মাশুল গুনছেন। এগুলোর যদি মেয়াদ বৃদ্ধি না হতো তাহলে সে পরিমাণ টাকা সাশ্রয় হতো,’ বলেন অধ্যাপক আলম।

এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে তিনি।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম একটি লেখায় উল্লেখ করেছন গত এক দশকে শুধু কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া বাবদ সরকারের খরচ হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা।

সরকার একদিকে বলছে চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা আছে। আবার অন্যদিকে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদনও দেয়া হয়েছে।

এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজন কতটা আছে? এ প্রশ্নে জ্বালানী বিষয়ক সাময়িকী এনার্জি এন্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন বিবিসিকে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় তরল জ্বালানী-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলোর উপর নির্ভরতা বাড়ছে।

চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা বেশি থাকলেও গ্রীষ্মকাল আসার আগেই গ্রামাঞ্চল ও জেলা শহরগুলোতে লোডশেডিং-এর মাত্র বাড়ছে। এই বিপরীত চিত্র কেন সেটি নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন আছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন জায়গায় লোডশেডিং এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমানো একটি কৌশল। এছাড়া সঞ্চালন ব্যবস্থায় কিছু ত্রুটিও আছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকলেই শুধু হবে না, এর জন্য জ্বালানী কোথা থেকে আসবে সেটিও চিন্তা করতে হবে। দেশের ভেতরে জ্বালানী সংস্থান করতে না পারলে শতভাগ বিদ্যুতায়নের সুফল পাওয়া মুশকিল হবে। মোল্লা আমজাদ হোসেন বলেন, বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসের দাম যত বাড়বে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

হোসেন বলেন, ‘নতুন তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সরকারকে বিপুল বিনিয়োগ করতে হবে’। সেটি না হলে বিদ্যুৎ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা যাবে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তারা একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যেমন মনোযোগ দিচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম সহনীয় রাখার বিষয়টিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সারা বিশ্বে তেল ও গ্যাসের দামের যে ঊর্ধ্বগতি, সেটিকে মাথায় নিয়ে সামনে এগুনো দুরূহ বিষয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের প্রথম টার্গেট ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ানো। প্রয়োজনের চেয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেশি হয়েছে একথা মানতে রাজী নন তারা। তারা বলছেন, সংকট মোকাবেলার জন্য সম্ভাব্য সব ধরণের ব্যবস্থার কথা চিন্তা করেই এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

               

সর্বশেষ নিউজ