১৯, মে, ২০২৪, রোববার
     

‘অর্থমন্ত্রীর কথা সত্যি হলে রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, আমিও কালোটাকার মালিক’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদ-সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, একটা প্লট থাকার জন্য যদি কালোটাকার মালিক হয়, তাহলে অর্থমন্ত্রীর নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী মাননীয় স্পিকার আপনি, রাষ্ট্রপতি ও আমি কালোটাকার মালিক।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করা নিয়ে নতুন করে ভাবনার কথাও তুলে ধরেন মুজিবুল হক চুন্নু।

তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকায় যার ফ্ল্যাট-প্লট আছে সে কালোটাকার মালিক। আমি পাঁচবার এমপি ও তিনবার মন্ত্রী হয়েছি। আমার ঢাকায় কোনো বাড়ি নেই। ২০১১ সালে আমি পূর্বাচলে প্লট পেয়েছিলাম। তার মানে, অর্থমন্ত্রীর নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী আমি কালোটাকার মালিক হয়ে গেছি। মাননীয় স্পিকার, আমরা ঢাকায় যারা আছি আপনি, রাষ্ট্রপতি, আমি- সবাই কালোটাকার মালিক। তবে আমি আইন লঙ্ঘন করে কালোটাকার মালিক হয়েছি কি না, সংসদে এর ব্যাখ্যা চাই।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন। মনের মাধুরী মিশিয়ে কথার ফুলছড়ি দিয়ে এই বাজেট প্রণয়ন করেছেন, যার পাঠোদ্ধার করা কঠিন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা ছিল চলতি বাজেটে। এবারের বাজেটে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি করা হয়েছে। ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা যখন ছিল, তখন ছিল জিডিপির ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। এবার একটু নিচে নেমে গেছে। এবার জিডিপির ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে, সেটা বাজেটে উল্লেখ করেননি।

পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনার কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিলে পাচারকৃত অর্থ বৈধ হয়ে যাবে। ৪০ বছর ধরে সব সরকার (আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি) সরকার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু কালোটাকা সাদা হয়েছে কম। আমি যখন ব্যবসা করি, ২৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। তাহলে বিদেশে টাকা পাঠিয়ে ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে হালাল করব। এটা মানি লন্ডারিং আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আইন সংশোধন করা না হলে এটা বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব প্রশ্ন রেখে বলেন, কীভাবে বিদেশ থেকে পাচার করা টাকা আনবেন। আইন সংশোধন না হলে তা বাস্তবায়ন হবে না। এই সুযোগ দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বেআইনি, অনৈতিক।

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এক এমপি বিএনপির কথা বলতে গিয়ে এরশাদ সাহেবকে স্বৈরাচার বলেছেন। যার লাইগা চুরি করলাম, সে বলে চোর, তাহলে কোথায় যাই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে এত খাতির করলাম। নির্বাচন করলাম, ক্ষমতায় আনলাম, আসলাম। আর সেই আওয়ামী লীগের ভাইয়েরা যদি জিয়াউর রহমানকে গালি দিতে গিয়ে এরশাদ সাহেবকে গালি দেন, তাহলে আর যাই কোথায়? তাহলে তো নতুন করে ভাবতে হবে। কী করব, কোথায় যাব। এ সময় আওয়ামী লীগের এক সংসদ-সদস্যের উদ্দেশে বলেন, কী ভালো লাগে না? লাগবে। সময় আসতাছে চিন্তা কইরেন না।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রাষ্ট্রপতি অবসরে গেলে সরকারি কোনো বাড়ি পায় না। ভারতে রাষ্ট্রপতি অবসরের পর বাড়ি দেওয়া হয়, পাকিস্তানেও দেওয়া হয়। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতিদের এর কোনো সুযোগ নেই। যিনি দুই/তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, তার যদি কোনো বাড়ি না থাকে, রাষ্ট্রপতির যদি কোনো বাড়ি না থাকে, তাহলে তারা কোথায় থাকবেন? আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলছি বিষয়গুলো ভাবার দরকার।

এদিকে বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ের মিলনায়তনে জাতীয় হকার্স পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, ‘দুই দলের লুটপাট, চাঁদাবাজি, দলীয়তন্ত্র, দুর্নীতির বিপরীতে একমাত্র জাতীয় পার্টি জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেছে। ক্রমাগত বেকার সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। দেশে এখন পাঁচ কোটি বেকার। বিগত দুই দলের সরকারই বেকারদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেনি। ক্ষমতায় গেলে জাতীয় পার্টি এই পাঁচ কোটি বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে।’

জাতীয় হকার্স পার্টির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনুর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এমএ রাজ্জাক খান, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমরেশ মন্ডল মানিক, দ্বীন ইসলাম শেখ প্রমুখ।

               

সর্বশেষ নিউজ