বাংলাদেশের ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাবে। দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান।
শুক্রবার (১০ জুন) বিকেলে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন মালয়েশিয়ার এই মন্ত্রী।
বিবৃতিতে তিনি এও বলেন, মালশিয়ার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঢাকায় যারা প্রতিবাদ করছেন, তারা যেন মালয়েশিয়াকে ধমক না দেয়।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া দেখে বিরক্ত হয়ে সারাভানান বলেন, মালয়েশিয়া যখন ২৫টি এজেন্সি নিয়োগ করেছিল তখন কেন এই দলগুলিকে বেছে নিচ্ছে আগের সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) অধীনে অনুমোদিত ১০টির চেয়ে বেশি।
অন্যান্য দেশ কম এজেন্সি নিয়োগ করেছে। সিঙ্গাপুর সংখ্যা ১৪ থেকে কমিয়ে ৬টি এজেন্সি, এবং হংকং-এ ১০-এরও কম। বাংলাদেশে প্রায় ১,৫০০ রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে।
‘তাহলে তারা কেন আমাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে? আমরা যখন ২০০৮ সালে সকল এজেন্সিকে জড়িত থাকার (ব্যবসা করার) অনুমতি দিয়েছিলাম, তখন এর ফলে এক লাখ বাংলাদেশী প্রতারিত হয়েছিল এবং চাকরি ও খাবার ছাড়া কুয়ালালামপুরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এমনকি বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ঘেরাও করেও রেখেছিল।
“তারা কি চায় এই জগাখিচুড়ি আবার ঘটুক? আমরা নিশ্চিত করতে চাই তাদের কর্মীদের সংখ্যা সীমিত করে প্রতারিত না হয়। এটি কোনো ব্যক্তির সুবিধার জন্য নয়।
ঢাকা-বিরোধী সিন্ডিকেট গ্রুপের অভিযোগের বিষয়ে যে ২৫টি এজেন্সির অধিকাংশই মোহাম্মাদ আমিন আবদুল নূরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল, যিনি দাবি করেছিলেন, মালয়েশিয়ার নেতাদের সাথে ভালোভাবে যোগাযোগ ছিল।
সারাভানান বলেছেন, ‘তিনি বাংলাদেশের বাসিন্দা এবং এখন একজন মালয়েশিয়ার নাগরিক। তিনিই আসলে বহু বছর আগে মালয়েশিয়ায় বিদেশী কর্মী সংগ্রহের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা করেছিলেন। তিনি কর্মী নিয়োগের সাথে জড়িত নন।’
শুক্রবার (১০ জুন) ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের সাথে এক সাক্ষাতকারে এমনটিই বললেন মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান।
তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মাত্র ১০,০০০ কর্মীকে সরকার টু সরকার ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছিল যখন বাংলাদেশ হাইকমিশন দ্বারা প্রত্যায়ন করা হয়েছিল।
‘২০১৬ সালে, যেখানে আমরা এটিকে ১০টি এজেন্সির মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম, চাকরির নিশ্চয়তাসহ প্রচুর সংখ্যক কর্মী এসেছিলেন তা সবচেয়ে সফল ছিল।’
সারাভানান জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে নিয়োগের বিষয়ে একটি কেবিনেট পেপার জমা দিয়েছিলেন যেখানে তিনি এজেন্সির সংখ্যা ১০ থেকে ২৫-তে বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।
‘আগের এমওইউতেও কোনো নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা ছিল না। কেন তারা আগের প্রথায় আপত্তি জানায়নি? আমি মনে করি, যে দলগুলি প্রতিবাদ করছে তারা অবশ্যই তালিকায় থাকতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান প্রক্রিয়া সফল হওয়ার পর সরকার পর্যায়ক্রমে সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে এবং কোনো উৎসদেশ মালয়েশিয়াকে নির্দেশ দিতে পারে না যে, তারা তালিকায় কাকে চায়।’
তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী উভয়ের কাছে আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি যারা আমাদের অবস্থান বোঝেন এবং গ্রহণ করেন।
প্ল্যান্টেশন সেক্টরে আরো মালয়েশিয়ানদের কাজ করার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে, সারাভানান বলেন, সরকার তার ‘মাই ফিউচার জব’ পোর্টালে বিজ্ঞাপন দিয়েছে, কিন্তু একটিও আবেদন জমা পড়েনি।
‘তারা কেবল কঠিন, বিপজ্জনক এবং নোংরা সেক্টরে কাজ করতে চায় না। তাই আমাদের বিদেশী কর্মীদের প্রয়োজন।’
সারাভানান আশা করেছিলেন প্রথম ব্যাচের কর্মীরা মাসের শেষে আসবে, কারণ নিয়োগ ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই চালু হয়ে আছে।
এদিকে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের জনশক্তি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ অনুমোদন করা হয়নি। সে দেশের মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভান বলেছেন, মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে গত ১ জুন তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। সফরে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশের পাঠানো তালিকা থেকে বাছাই করা রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করবে মালয়েশিয়া। এ বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন করে মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়েজন নেই।
যদিও বাংলাদেশ সফরে এসে সারাভান জানিয়েছিলেন, এজেন্সি বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত তার দেশের মন্ত্রিসভা অনুমোদন করবে। বাংলাদেশের ১,৫২০টি বৈধ রিক্রটিং এজেন্সির মধ্যে ২৫টির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করতে চায় মালয়েশিয়া। এই ২৫ এজেন্সিকে সিন্ডিকেট বলা হচ্ছে, যার একটির মালিক এক মন্ত্রীর স্ত্রী। বাকিগুলোর মালিক তিনজন এমপি, এক কাউন্সিলরসহ প্রভাবশালীরা। আর এ ২৫ সিন্ডিকেটের প্রভাবশালীরা এখন মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন। অতি সম্প্রতি এই প্রভাবশালীরা হাইকমিশনের সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠকও করেছেন।
সারাভান বলেছেন, মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা বিদেশী কর্মী নিয়োগের অনুমতি চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন দেয়া হবে। বাংলাদেশসহ ১৪ দেশ থেকে কর্মী নেয়া হবে।
২০১৫ সালে ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পৌনে তিন লাখ কর্মী নিয়োগ করেছিল মালয়েশিয়া। এতে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে দেশটি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশী কর্মী নিতে তারা গত ডিসেম্বরে সমঝোতা স্মারক সই করেছে। তবে এবারও দুর্নীতির অভিযোগে বাতিল হওয়া পদ্ধতিতেই কর্মী নিতে চায় দেশটি।