৩৩ বছর ধরে পুরুষ পরিচয়ে বেঁচে থাকা চেন লির ক্রোমোজোম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানালেন, জৈবিকভাবে তিনি আসলে একজন নারী। চেন লি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশের বাসিন্দা। চিকিৎসকরা যখন তাকে নতুন এই পরিচয় সম্পর্কে জানিয়ে দেন, তখন তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। নিজের নতুন পরিচয় কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না চেন। তবে ধীরে ধীরে সবকিছু সামলে উঠছেন তিনি।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে চেন লির চাঞ্চল্যকর লিঙ্গ বদলে যাওয়ার এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে পরিচয় রক্ষার স্বার্থে চীনা এই নাগরিকের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সিচুয়ানের ছোট একটি শহরে বসবাস করেন চেন লি। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে তার অনিয়মিত প্রস্রাবের সমস্যা ছিল। এ জন্য চিকিৎসকদের কাছে যান তিনি। চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারও করেছিলেন। সেই অস্ত্রোপচারের পর গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসে তার।
মাসের নির্দিষ্ট একটি সময়ে চেন প্রায় চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পেটে অস্বস্তি অনুভব করেন। তখন একজন চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে তাকে অ্যাপেনডিসাইটিস হয়েছে বলে জানান। আর এই রোগের চিকিৎসার পরও তার শরীরে আগের সব উপসর্গ অব্যাহত থাকে।
গত বছর তিনি প্রস্রাবের পুরোনো সমস্যা নিয়ে আবারও চিকিৎসকের কাছে যান। সেই সময় বেরিয়ে আসে তার শারীরিক সমস্যার প্রকৃত কারণ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, চেনের শরীরে নারীদের যৌন ক্রোমোজোম রয়েছে। ঋতুস্রাবের কারণে তার প্রস্রাবে মাসের নির্দিষ্ট সময়ে রক্ত আসে এবং পেটে অস্বস্তি অনুভব করেন।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, চেন এই খবরে অবাক হয়ে যান এবং গুয়াংজু হাসপাতালে গিয়ে যৌনাঙ্গের সমস্যার চিকিৎসা নেন। পরবর্তী মেডিকেল পরীক্ষায় জানা যায়, চেনের শরীরে একটি জরায়ু এবং ডিম্বাশয়সহ নারী প্রজনন অঙ্গও রয়েছে। এমনকি তার শরীরে পুরুষদের শরীরে থাকা যৌন হরমোনের উপস্থিতিও কম এবং ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্ট্রেরোনের মাত্রা অনেক বেশি।
পুরুষ এবং নারীর উভয় প্রজনন অঙ্গ পাওয়া যাওয়ায় চেনকে শেষ পর্যন্ত উভয় লিঙ্গ হিসাবে শনাক্ত করেন। গত ৬ জুন তিন ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চেনের শরীর থেকে জরায়ু ও ডিম্বাশয় ফেলে দেওয়া হয়। এর ১০ দিন পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
চিকিৎসক লুও জিপিং বলেছেন, দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে উঠেছেন চেন এবং আস্থাও ফিরে পেয়েছেন তিনি। এখন থেকে তিনি একজন পুরুষ হিসেবে জীবনযাপন করতে পারলেও যৌনজীবন তেমন সুখকর হবে না। কারণ তার অণ্ডকোষ শুক্রাণু তৈরি করতে পারবে না।