জনবিক্ষোভ থেকে প্রাণে বাঁচতে মালদ্বীপে সপরিবারে চম্পট দিয়েছেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। আটক বা গ্রেফতার এড়াতে পালানোর পথ বেছে নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
শ্রীলংকার ইমিগ্রেশন সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, দেশটির প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করা আন্তোনোভ-৩২ সামরিক বিমানের চার যাত্রীর মধ্যে তিনি, তার স্ত্রী এবং একজন দেহরক্ষী ছিলেন।
মালে বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মালদ্বীপে পৌঁছানোর পর তাদের পুলিশ এস্কর্টের অধীনে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাকে মালদ্বীপে পালাতে সহায়তা করেছেন মালদ্বীপের বর্তমান সংসদের স্পিকার ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ।
তবে এরই মধ্যে গোতাবায়াকে মালদ্বীপ থেকে বের করে দিতে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এতে যোগ দিয়েছেন দেশটির সাধারণ মানুষ এবং প্রবাসী শ্রীলংকানরা।
খবরে জানানো হয়, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছে জড়ো হচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের দাবি, অবিলম্বে গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দেশ থেকে বের করে দিতে হবে।
মালদ্বীপের টেলিভিশন চ্যানেলে সেই আন্দোলন সরাসরি প্রচারও হচ্ছে। একটি আপডেট প্রতিবেদনে ডেইলি মিরর জানিয়েছে, মালদ্বীপবাসীর প্রতিরোধের মুখে সিঙ্গাপুর পালানোর চেষ্টা করছেন গোতাবায়া।
একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে দুবাই যেতে চেয়েছিলেন গোতাবায়া। কিন্তু বন্দরনায়েকে ইন্টারন্যাশনালের কর্মীরা ভিআইপি পরিষেবা থেকে সরে এসেছিলেন এবং সব যাত্রীদের পাবলিক কাউন্টার দিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্টের দলটি জনসাধারণের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে নিয়মিত চ্যানেলে যেতে অনিচ্ছুক ছিল। এ কারণে সোমবার তাদের সংযুক্ত আরব আমিরাতের চারটি ফ্লাইট মিস করতে হয়েছিল।
মঙ্গলবার একপর্যায়ে দলটি সমুদ্রপথে পালানোর লক্ষ্যে একটি নৌঘাঁটির দিকে রওয়ানা হয়। বুধবার শ্রীলংকার বিমানবাহিনী জানিয়েছে. সংবিধানের বিধান অনুযায়ী সরকারের অনুরোধে, তারা সস্ত্রীক প্রেসিডেন্ট ও দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে মালদ্বীপে উড়িয়ে নেওয়ার জন্য একটি বিমান সরবরাহ করেছে।
গোতাবায়াকে আশ্রয়ের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে মালদ্বীপ। মালদ্বীপ সরকারের যুক্তি হলোÑবুধবার পদত্যাগ করার কথা থাকলেও গোতাবায়া, এখনো তা করেননি।
সেই হিসাবে তিনি এখনো শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট। মালদ্বীপের রাজধানী মালে সূত্র জানায়, কলম্বো থেকে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের পালানোর বিষয়টি মজলিস (পার্লামেন্ট) স্পিকার নাশিদ আগেই আলোচনা করেছিলেন।
ভিত্তিহীন তথ্য : শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়াকে মালদ্বীপে পালাতে সাহায্য করেছে ভারত-এমন খবর উড়িয়ে দিয়েছে শ্রীলংকায় ভারতীয় হাইকমিশন।
বুধবার সংশ্লিষ্ট পেজের অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়, এ ধরনের খবর ‘ভিত্তিহীন ও অনুমানমূলক’। টুইটে আরও বলা হয় ‘ভারত শ্রীলংকার জনগণের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে। কারণ তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে এবং মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও সাংবিধানিক কাঠামোর মাধ্যমে তাদের সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতি দেখতে চায়।’
অপরদিকে গোতাবায়ার ছোট ভাই বাসিল, যিনি এপ্রিলে অর্থমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে বিমানবন্দর কর্মীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দুবাইয়ে তার নিজের এমিরেটস ফ্লাইট মিস করেন।
বুধবার শ্রীলংকার ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাসিল রাজাপাকসে আমেরিকায় পালাতে ৫৩ লাখ রুপি ঘুস সেঁধেছিলেন। মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া বাসিল বিমানবন্দরের আলাদা ট্র্যাক ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু বিমানবন্দর এবং অভিবাসন কর্মীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন-তারা আপাতত দ্রুত ট্র্যাক পরিষেবা বাতিল করেছেন। বাধ্য হয়েই বিমানবন্দর ছেড়ে চলে যান বাসিল।