এখনই কঠিন কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামতে চায় না বিএনপি। দলটির নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে হরতাল-অবরোধের হুঁশিয়ারি দিলেও, এ ধরনের কর্মসূচির সময় এখনো আসেনি বলে দলটির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বিএনপির মূল লক্ষ্য সরকারবিরোধী দলগুলোকে সাথে নিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করা। এই লক্ষ্যে তারা সতর্ক পদক্ষেপে এগোচ্ছেন। কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য সহকারে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে আরো কিছুটা সময় নিতে চান তারা। পুলিশের গুলিতে ভোলায় দুই নেতা নিহত হওয়া এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ৫ আগস্ট থেকে টানা কর্মসূচিতে রয়েছে বিএনপি। এসব কর্মসূচি মূলত বিক্ষোভ সমাবেশকেন্দ্রিক। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বড় শোডাউন দিয়েছে দলটি। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপির এ সমাবেশ রূপ নিয়েছিল মহাসমাবেশে। এটি সরকারের জন্য এই বার্তা বহন করছে যে, বিএনপি আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত।
দলটির সিনিয়র নেতারা আলাপকালে অভিযোগ করে বলেছেন, বিএনপি যাতে এখনি শক্ত কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমে পড়ে, এমন উসকানি সরকারের তরফ থেকে রয়েছে। ভোলায় দুই নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বিএনপিকে বড় কর্মসূচির দিকে ঠেলে দিতে। কারণ হঠাৎ করেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারাও কঠোর কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে বিএনপিকে উসকানি দিচ্ছে, যাতে করে অতীতের মতো মামলা দিয়ে বিএনপিকে আগেভাগেই ঘায়েল করা যায়।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি কারো উসকানিতে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করবে না। নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। সরকার যদি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে রাজপথেই এর ফয়সালা হবে।
আগামী নির্বাচন নিয়ে বেশ কয়েকটি ইস্যুতে বিএনপি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। দলটি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তারা এই দাবিতে অটল থাকতে চায়। একই সাথে দলটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ইস্যু ছাড়া ভিন্ন কোনো ইস্যুতে সরকারের সাথে আলোচনা কিংবা কোনো সংলাপে বসতেও রাজি নয়।
দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, নির্বাচন তখনই সম্ভব হবে যখন দেশে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। ওই সরকারের অধীনে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে সেই কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। তারা মনে করেন, সরকার যদি কনফ্রনটেশন (সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি) দেখতে না চায়, মারামারি কাটাকাটি দেখতে না চায়, তাহলে অবশ্যই তাদের দাবিগুলো মেনে নিতে হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আপাতত কঠোর কোনো কর্মসূচি আসছে না। দলটি নির্বাচনকালীন সরকারসহ জনসম্পৃক্ততামূলক ইস্যুতে চলতি আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। এই সময়ের মধ্যে তারা সংগঠন গোছানোর প্রস্তুতি শেষ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বিএনপি এবার ঢাকা মহানগরকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে চায়। নেতারা বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলন টার্গেট করেই দল সাজাচ্ছেন। ইতোমধ্যে এ কাজ প্রায় শেষের পথে।
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, সরকারবিরোধী প্রায় সব দল যুগপৎ আন্দোলনে ঐকমত্য পোষণ করেছে। এসব দলের মতামতের ভিত্তিতেই আন্দোলনের রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে বিএনপিই। দলটির নেতাদের আভাস অনুযায়ী, এ বছরের ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরের শুরু থেকে কর্মসূচির ধরন পাল্টে যেতে পারে।
আন্দোলনের পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় প্রভাবশালী এবং গণতন্ত্রমনা দেশগুলোরও একটি কার্যকর ভূমিকা দেখতে চায় বিএনপি।