তৃতীয় দফার লঘুচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল। আজ শুক্রবার সকাল থেকে কক্সবাজার শহরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৈরী পরিবেশেও কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে কয়েক হাজার পর্যটক সৈকতে নেমেছেন। অর্ধেকের বেশি মানুষ সমুদ্রে নেমে গোসলে ব্যস্ত। এর মধ্যে সৈকতের একপাশে দেখা গেল ভ্রাম্যমাণ লকার।
এর একপাশে ঝুলানো ব্যানারে লেখা আছে—‘কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আপনাকে স্বাগতম। আপনার আনন্দঘন মুহূর্ত নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে মূল্যবান প্রয়োজনীয় সামগ্রী লকারে রাখুন। প্রতি ঘণ্টা ৪০ টাকা।’ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত বছর থেকে সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে পর্যটকদের জন্য এই সুবিধা চালু করা হয়েছে। পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লকার–ব্যবস্থা চালুর পর থেকে সৈকতে পর্যটকদের মালামাল হারানো ও চুরির ঘটনা অনেকটাই কমেছে।
আজ সকালে সুগন্ধা পয়েন্টের লকারের সামনে বেশ কয়েকজন পর্যটককে দেখা গেল। লকারের পাশে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে আছেন এক তরুণ। তিনি পর্যটকদের মালামাল বুঝে নিয়ে লকারে রাখছেন। এরপর পর্যটকদের লকারের চাবি ও টোকেন দিচ্ছেন তিনি।
লকারের পরিচালক সাইফুল ইসলাম (২২) বলেন, পর্যটকেরা মুঠোফোন, মানিব্যাগ, চশমা, ঘড়ি, জুতা, ব্যাগসহ মূল্যবান সামগ্রী লকারে রাখেন। সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত লকার ব্যবহার করা যায়। সে ক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হয় ২৪০ টাকা। গত বছরের জানুয়ারিতে লকার চালুর পর থেকে এখনো কোনো মালামাল হারানোর ঘটনা ঘটেনি।
ঢাকার বাসাবো থেকে বেড়াতে এসেছেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমগীর (৪৫)। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছিলেন। তখন সৈকতের চেয়ার (কিটকট) থেকে মুঠোফোন হারিয়েছিলেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও সেদিন মুঠোফোন উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে এখন লকার চালু করায় পর্যটকদের জন্য সুবিধা হয়েছে। মুঠোফোনসহ অন্যান্য মালামাল এখানে রেখে নির্বিঘ্নে সমুদ্রে নামা যাবে।
লকার–ব্যবস্থা চালুর পর থেকে সৈকতে পর্যটকদের মালামাল হারানো ও চুরির ঘটনা অনেকটাই কমেছে
কলাতলীর ভ্রাম্যমাণ লকারে জিনিসপত্র রেখে সমুদ্রে নামছিলেন চট্টগ্রামের হালিশহরের ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সৈকতে গোসলে নেমেছিলাম। তখন পকেটে থাকা মুঠোফোন ও টাকা ভিজে নষ্ট হয়েছিল। এবার সমুদ্রে নামার আগে সেই ঘটনা মনে পড়ল। তবে সৈকতে লকার দেখে মনে স্বস্তি এল।’
বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুবুর রহমান বলেন, আগে ঘোড়ার পিঠে, বিচ বাইকে চড়ার সময় কিংবা সমুদ্রে গোসলের সময় অনেকে মূল্যবান জিনিস পানিতে পড়ে নষ্ট হতো। আবার কিটকটে বসে আড্ডার সময় অনেকে মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলতেন। ক্ষেত্রবিশেষে মালামাল চুরি ও ছিনতাই হতো। লকারব্যবস্থা চালুর পর এখন চুরি-ছিনতাইসহ অপরাধকর্ম কমে এসেছে।
জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সুগন্ধা, কলাতলী ও লাবনী পয়েন্টে তিনটি ভ্রাম্যমাণ লকার চালু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে লকারগুলো পরিচালনা করছেন কয়েকজন তরুণ-যুবক। এগুলো তত্ত্বাবধান করেন জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লকার খোলা থাকে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, লকার চালুর পর থেকে পর্যটকদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ জন পর্যটক এই সেবা নিচ্ছেন। আগে পর্যটকেরা মূল্যবান জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে শঙ্কাবোধ করতেন। এখন ভ্রাম্যমাণ লকার চালুর পর চুরি-ছিনতাইসহ অপরাধকর্ম কমে এসেছে। লকার থেকে যে পরিমাণ টাকা আয় হয়, তা দিয়ে লকার পরিচালনায় নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন–ভাতা ও সৈকত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখার বিপরীতে খরচ হচ্ছে।