১৯, নভেম্বর, ২০২৪, মঙ্গলবার
     

‘বিপজ্জনক তাপপ্রবাহ’ ৩ গুণ বাড়তে পারে : সমীক্ষা

জলবায়ু পরিবর্তন আরো খারাপ পর্যায়ে পৌঁছানোর ফলে ‘বিপজ্জনক তাপ’ হিসেবে বিবেচিত তাপপ্রবাহ আগামী কয়েক দশকে সারাবিশ্বে অন্তত তিনগুণ বেশি আঘাত হানবে। এক নতুন সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশে এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে গ্রীষ্মকালের কোনো কোনো সময় এখানকার তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ১০৩ ডিগ্রি (৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশিতে পৌঁছায়।

গবেষণার লেখক বলেছেন, ২১০০ সালের মধ্যে এই অসহনীয় তাপপ্রবাহের প্রভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মতো জায়গাগুলোতে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এর প্রভাব আরো ভয়াবহ হতে পারে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তাপমাত্রা ১২৪ ডিগ্রি (৫১ সেলসিয়াস) ছাড়িয়ে গেলে সেটিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে মনে করা হয়। বর্তমানে এটি খুব কমই ঘটে। এই শতাব্দীর শেষ দিকে ভারতের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে এ ধরনের তাপপ্রবাহ প্রতিবছর এক থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

হার্ভার্ডের জলবায়ু বিজ্ঞানী ও এই গবেষণার লেখক লুকাস জেপেটেলো বলেছেন, ‘তাই এটি এক ধরনের ভীতিকর বিষয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘এর ফলে কয়েক বিলিয়ন মানুষ খুব নিয়মিতভাবে অত্যন্ত বিপজ্জনক মাত্রার তাপের সংস্পর্শে আসতে চলেছে।’

জেপেটেলো ও তার সহকর্মীরা উচ্চ তাপের দুটি ভিন্ন স্তরের সম্ভাব্যতা দেখার জন্য ১ হাজার টিরও বেশি কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করেছেন। মার্কিন জাতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী তারা ১০৩ ডিগ্রি (৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং ১২৪ ডিগ্রি (৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এর ওপরে তাপ সূচককে বিপজ্জনক এবং অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

তারা ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রতি বছর কতবার এই ধরনের তাপপ্রবাহ ঘটেছিল তার সাথে ২০৫০ ও ২১০০ সালের মধ্যে কতবার এটা ঘটবে তার তুলনা করেছেন।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, মধ্য-অক্ষাংশে ১০৩-ডিগ্রি তাপ তিন থেকে দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, তাপপ্রবাহ কম হওয়ার এবং খুব কম হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র পাঁচ শতাংশ।

সমীক্ষা অনুসারে, সম্ভবত ২১০০ সালের মধ্যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ‘প্রতি সাধারণ বছরের বেশিরভাগ দিনে’ ১০৩-ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকবে।

গবেষণায় দেখা যায়, শিকাগো ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মাত্র চারবার ১০ ডিগ্রী তাপ সূচকে পৌঁছায়। কিন্তু শতাব্দীর শেষ নাগাদ শিকাগোতে বছরে ১১ বার সেই তাপদাহ ঘটেছে।

জেপেপেটেলো বলেছেন, তাপপ্রবাহ হল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, পানির ঘাটতি ও সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের নতুন চারটি লক্ষণের মধ্যে একটি।

তিনি ২০২১ সালে ওয়াশিংটন রাজ্যের উষ্ণায়নের সময় অনেক গবেষণা করেছেন। যে তাপদাহ বহু বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ যাতে প্রাণ হারায়।

উডওয়েল ক্লাইমেট রিসার্চ সেন্টারের জলবায়ু বিজ্ঞানী জেনিফার ফ্রান্সিস বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে এই গবেষণায় দেখানো ভয়ঙ্কর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বিশ্বাসযোগ্য।’

তিনি বলেন, ‘গত দুটি গ্রীষ্ম আমাদের ইউরোপ, চীন, উত্তর-পশ্চিম উত্তর আমেরিকা, ভারত, দক্ষিণ-মধ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মধ্য সাইবেরিয়া এবং এমনকি নিউ ইংল্যান্ডে প্রাণঘাতী তাপপ্রবাহ সহ ভবিষ্যতের তাপদাহের জন্য একটি ইঙ্গিত দিয়েছে। গরম অঞ্চলগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। কারণ তাপ সূচকগুলো বিপজ্জনক সীমা ছাড়িয়ে যাবে, যা মানুষ ও বাস্তুতন্ত্রকে সমানভাবে প্রভাবিত করবে। যে অঞ্চলগুলোতে এখন চরম তাপ বিরল, সেখানেও ক্রমবর্ধমান ক্ষতি হবে।’

হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ড. রেনি সালাস বলেছেন, গবেষণাটি তাপ সূচকের ওপর আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

তিনি আরো বলেন, ‘তাপ সূচক বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরকে শীতল করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে ওঠে।’

তিনি আরো বলেন, ‘হিট স্ট্রোক হলো তাপ-অসুস্থতার একটি সম্ভাব্য মারাত্মক রূপ, যা শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে গেলে ঘটে।’

সূত্র : ইউএনবি

               

সর্বশেষ নিউজ