৭, মে, ২০২৪, মঙ্গলবার
     

মুজিব চত্বরে ‘জলতরঙ্গে বিজয় নিশান’

বগুড়ার ধুনটের মুজিব চত্বরের পুকুরে আলোকসজ্জার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আমাদের প্রাণের লাল-সবুজের বিশাল পতাকা। উপজেলা প্রশাসন গত ১৫ দিনে মজা পুকুর সংস্কার করে জাতীয় পতাকার অবয়ব প্রকাশ করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে- ‘জলতরঙ্গে বিজয় নিশান’।

শনিবার রাতে ‘জলতরঙ্গে বিজয় নিশান’সর্বস্তরের জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর মুজিব চত্বরে শত শত নারী-পুরুষে ভরে যায়। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলবে।

রাতেই বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান, জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা পরিদর্শন শেষে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

‘জলতরঙ্গে বিজয় নিশান’এর অন্যতম উদ্যোক্তা ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত ও পৌর মেয়র এজিএম বাদশাহ জানান, ১৫ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে পুকুরের উপরে সুতার সঙ্গে ৯২ হাজার ৩৪০টি লাল-সবুজ মরিচ বাতি বেঁধে জাতীয় পতাকার অবয়ব ফুটে তোলা হয়েছে। পতাকাটির দৈর্ঘ্যে ১৬০ ফুট ও প্রস্থে ৯৬ ফুট সবুজ মরিচ বাতি এবং ৩২ ফুট বৃত্তে লাল মরিচ বাতি লাগানো হয়। পতাকার চারপাশ অর্থাৎ পুকুরের চার কোণায় এবং উপরে সরকারের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ তুলে ধরা হয়েছে।

তারা জানান, মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ফ্লাইওভারের প্রতিকৃতি বসানো হয়েছে। পুকুরে মাঝ বরাবর উপরে ঝুলানো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ শোভা পেয়েছে। জনগণ যেন পুকুরের কাছে এসে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে পারে সে জন্য পশ্চিমপ্রান্তে বড় ছবির পাশে ইংরেজিতে ‘আই লাভ বঙ্গবন্ধু’ এবং পূর্ব প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির পাশে ‘দ্য মাদার অব হিউম্যানিটি’ লেখা রয়েছে।

তারা আরও জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে দক্ষিণ পাশে স্থাপন করা হয়েছে ১০০ ফুট দৈর্ঘের নৌকা। নৌকার পূর্ব পাশে বঙ্গবন্ধু এবং পশ্চিম পাশে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু দেশ নিয়ে চিন্তা করছেন ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশের হাল ধরেছেন এমনটা বোঝানো হয়।

‘জলতরঙ্গে বিজয় নিশান’ দেখতে আসা ধুনটের গোসাইবাড়ির চিতুলিয়া গ্রামের আমজাদ ফকির জানান, গত কয়েক দিনে মজাপুকুর খনন ও সংস্কার করে উপজেলা প্রশাসন মরিচ বাতির মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ফুটে তুলেছে; যা খুব প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা গত কয়েক দিন ভাবতেও পারিনি এত সুন্দর কিছু হচ্ছে। রাতে বাতি জ্বলার পর আমরা বিষয়টি বুঝতে পারি।

একই ধরনের মন্তব্য করেছেন, ধুনটের মাস্টারপাড়ার আসাদুর রহমান। তিনি বলেন, মরিচ বাতি দিয়ে এত সুন্দর ও বড় জাতীয় পতাকা তৈরি হবে বা কখনো ভাবতে পারেননি। তিনি এ কর্মকাণ্ডে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত জানান, প্রতি বছর স্বাধীনতা, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়। তিনি গুগল সার্চ করে নতুন কিছু করার চিন্তা করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে আমাদের অহংকারের প্রতীক জাতীয় পতাকাকে আলাদাভাবে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সবার সহযোগিতায় গত ১৫ দিনের চেষ্টায় মুজিব চত্বরের মজাপুকুর সংস্কার করে সেখানে মরিচ বাতির আলো দিয়ে পতাকা প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে কোনো খুঁত রাখা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, কোনো পুরস্কার বা কাউকে খুশি করার জন্য তিনি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেননি। বঙ্গবন্ধু ও দেশ মাতৃকার টানে কাজটি করেছেন।

বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক মহৎ এ কাজের জন্য ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, এটি ইন্সটলেশন আর্টের মর্যাদা পেয়েছে; বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে।

বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান জানান, তিনি এ কাজে বিস্মিত হয়েছেন। বগুড়ার শেরপুরে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু যেমন সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল; তেমনি ‘জলতরঙ্গে বিজয় নিশান’ও আলোচনায় স্থান লাভ করবে।

এ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদ সদস্য বলেছেন, মুজিব চত্বরে জনগণের উপস্থিতি ও বিনোদনের জন্য সম্ভাব্য সব কিছু করা হবে। তিনি জনগণের দাবিতে পুকুরে ঘাট নির্মাণ, চারপাশে বসার সিট এবং বনায়ন করার আশ্বাস দেন।

               

সর্বশেষ নিউজ